Wednesday 10 October 2018

বিবাহ ও মসজিদঃ প্রসঙ্গকথা

Related image

বিবাহ ও মসজিদঃ প্রসঙ্গকথা 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

অনেক দিন আগে খবরে পড়েছিলামদু’জনেই ডাক্তার। কলেজ থেকেই তাঁদের আলাপ। ডাক্তারি পাশ করার পর সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। দিনক্ষণ পাকা করে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। সবার মত করে তাঁরাও বিয়ের গাঁটছড়া বাঁধতে উদ্যততবে আয়োজনটা ছিল অদ্ভুত রকমের। হ্যাঁ, সত্যিই বিস্ময়কর। মেয়েটি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল তাঁর দাদীমা’র বিয়ের শাড়ি ও গয়না পরে। আর ছেলেটি এসেছিল তাঁর বাবার বিয়ের লুঙ্গী আর পাঞ্জাবীটা গায়ে দিয়ে। দু’জনেই ততদিনে ডাক্তারি পাশ করে চাকরি পেয়ে বেশ নামডাক করে ফেলেছিল। কিন্তু বিয়ের শুভ অনুষ্ঠানটি করেছিল মহল্লার মসজিদে। ওয়ালিমায় নেমন্তন্ন করেছিল পাড়ার এতিমখানার সকল শিশুদের। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরাও উপস্থিত ছিল সেখানে।
আরও এক ডাক্তারের কথা বলি। তিনি বহু আলোচিত-সমালোচিত এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর বিয়ের গল্পটাও বেশ মজার। বাড়ি থেকে মেয়ে পছন্দ করা হল। মেয়ের বাড়ি পুনেতে। বিয়ের অনুষ্ঠানের ভেন্যু নিয়ে উভয় পক্ষের মত ছিল ভিন্ন। পাত্রপক্ষ ছিল বেশ পয়সাওয়ালা। বলতে গেলে বনেদী ঘরানার। চাইলে হরহামেশায় কোনো ফাইভ সটার হোটেল হায়ার করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু ডাক্তার বাবু ছিলেন বেশ মিতব্যায়ী। সেই সাথে ধর্মপ্রাণও। তাই উভয়পক্ষকে রাজি করে বিয়ে করলেন এক মসজিদে গিয়ে। আর সেই মসজিদের পাশের হোটেলে দুটো কামরা ভাড়া করলেন আপনজনদের সুবিধার্থে। সেই মসজিদ প্রাঙ্গণেই আয়োজন করা হল তাঁর ওয়ালিমার। বিশেষ অতিথিরূপে আমন্ত্রিত হলেন ঐ মহল্লার এতিমখানার সকলে।
এবারের গল্পটা একটু ভিন্ন স্বাদের। তিনি একজন ব্যবসায়ী। বেশ বড় মাপের। ভারতজুড়ে তাঁর ব্যবসার বহর। ছেলের বিয়ে দেবেন। পাত্রীপক্ষও বেশ পয়সাওয়ালানির্ধারিত দিনে তিনটে বাস ভর্তি বরযাত্রী নিয়ে পৌঁছলেন পাত্রীর বাড়ি। আগে থেকেই কথা হয়ে ছিল, বিয়ে হবে মসজিদে। তাই সবাই উপস্থিত হলেন মসজিদে। কিন্তু বরযাত্রীর মিছিল দেখে পাত্রীর বাবার মাথায় হাত। তিনি তো এত লোকের আয়োজন করেননি। কী হবে এখন! বিস্ময়ের প্রাথমিক রেশ কাটিয়ে একটু থিতু হলেন। ফোনে হোটেল কর্তৃপক্ষকে শিগগিরি অতিরিক্ত ব্যবস্থা করতে বললেন। বিয়ে হয়ে যাবার পর পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দেওয়া হল। তারপর পাত্রের বাবা দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার ঘোষণা করলেন। সবাই যে যার জায়গায় গিয়ে বসল। পাত্রীর বাবা-কাকারা ছুটে আসলেন এসব কাণ্ডকারখানা দেখে। জিজ্ঞেস করলেন, না খেয়েদেয়েই চলে যাচ্ছেন কেন? ছেলের বাবা হাসিমুখে বললেন, ভাইজান আপনাকে তো বলেই ছিলাম, আমরা কিছু খাবো না। শুধু একটা করে খেজুর খাওয়ালেই হবে। আপনি তো তা করেছেন। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, আপনি আপনার মেয়েকে আমাদের দিয়েছেন। আর কী চাই বলুন আমাদের! আমি তো সবাইকে বলে  দিয়েছি, সবার জন্য অমুক জায়গায় ওয়ালিমার আয়োজন করা হয়েছে। মেয়ের বাবা থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসলেন, তাহলে দাদা এত লোকজন নিয়ে এলেন কেন? তিনি হাসতে হাসতে উত্তর করলেন, বিয়ে লুকিয়ে নয়, দেখিয়ে করাই সুন্নততবে এও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এসব যেন কোনোভাবেই মেয়ের বাবার জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়...!
আমাদের ইতিহাসেও তো অমন কথাই পাওয়া যায়। সে-সময়ে দিনরাত সর্বক্ষণ মসজিদের ফাটক খোলা থাকত। গরিব-দুঃখী-অনাথ-আশ্রয়হীনদের মাথা গুঁজবার ঠাই ছিল মসজিদ। অনায়াসেই চলত শিশুকিশোরদের ক্রীড়াকৌতুক, মসজিদ চত্বরেই। রাজনীতির মত গুরুগম্ভীর কাজকম্মের আসরও বসত মসজিদের ভেতরে। বিদেশী দূতদের সাথে আলাপআলোচনাও হত সেখানে। সমাজের বিচার, শালিসী সভা সব। পঠনপাঠন থেকে বিবাহ আরও কতকিছু যে সংঘটিত হত মসজিদের অন্দরে, ইতিহাসের পাতায় তা ধরা আছে। সময়ের সাথে সাথে সব কোথাও হারিয়ে গেল। উবে গেল সেসব রীতি-রেওয়াজ, উধাও হয়ে গেল মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা। আস্তে আস্তে এমন হয়ে গেল যে, আজকাল দু’চারজনই দিনে-রাতে দু’চারবার মসজিদে যায়; অনেকে যায় সপ্তাহান্তে। কেউ কেউ তো তাও করে না। আর এভাবেই মসজিদ হারিয়ে ফেলেছে তার ব্যবহারিক গুরুত্ব! হয়তো তাই আজকাল মসজিদ নিয়ে ভিন্ন রকমের বয়ান দিচ্ছে ওরা!    
এসব পড়ে, জেনে, শুনে আমারও খুব ইচ্ছে ছিল, বিয়েটা করবো মসজিদে, খুব সাধারণ ভাবে। অনুষ্ঠানটা হবে খুব সিম্পল। বিয়েটা পড়াবেন কোনো প্রকৃত ‘মাওলানা’ নিজ মসজিদের মেহরাবের কাছে বসে ওয়ালিমায় অবশ্যই শামিল করবো এলাকার গরীব-দুঃখী-এতিমদের। মোহরের অর্থ নগদ আদায় করবো...। এমন অনেক ভাবনা ছিল মনে। মাইনুদ্দিন স্যারও প্রায়শই আমায় বলতেন, “আব্দুল মাতিন, বিয়েটা মসজিদে করবে এবং খুব সিম্পলভাবে করবে। যাতে সমাজের কাছে সেটা একটা নজির হয়ে থাকে।” কিন্তু, দিনের শেষে আমি ব্যর্থ হয়েছি। বৌভাতে এসে মাইনুদ্দিন স্যার স্মরণ করিয়েছিলেন সে-কথা। আক্ষেপের স্বরে বলেছিলেন,  “আব্দুল মাতিন, তুমিও পারলে না!”                

3 comments:

  1. Bor pokkho kichhu na kheyei fire eschhilo seta chhilo Karnatakar Manglore-e. Masjider nam Ibrahim Khalil Masjid. Respected person chhilen. Munawwar Sahab.

    ReplyDelete
  2. Bor pokkho kichhu na kheyei fire eschhilo seta chhilo Karnatakar Manglore-e. Masjider nam Ibrahim Khalil Masjid. Respected person chhilen. Munawwar Sahab.

    ReplyDelete
  3. আমি যদি দু দিন আগে এই ব্যাপারটা জানতে পারতাম । তাহলে ......
    কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়।

    ReplyDelete