Sunday 7 October 2018

আইডেন্টিটি ক্রাইসি...!


আইডেন্টিটি ক্রাইসিস...! 

অনেক দিন আগেই দেখেছিলাম। ক'দিন আগে আরেকবার দেখলাম, 'জিন্দেগী লাইভ' অনুষ্ঠানের ঐ এপিসোডটা। হ্যাঁ, যেটাতে রিচা অনিরুদ্ধ মহাশয়া আনসার শেখের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আনসার শেখকে আমাদের সবার মনে আছে। মনে থাকাটাই স্বাভাবিক; এমন সাফল্য ক'জন অর্জন করতে পারে বলুন। তাও আবার চরম দারিদ্র্যকে পরাজিত করে। মাত্র একুশ বছর বয়সে। সর্বকনিষ্ঠ আই এ এস সে। সেদিন তাঁর একটা কথা আমার ভেতরটাকে তোলপাড় করে তুলেছিল। সঞ্চালক যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, 'যদি আপনি অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান, তাহলে আপনি কী হতে বা করতে চাইবেন?'। আনসার-এর উত্তর, 'একজন আই এ এস অফিসারের সন্তান...'। এই সহজ উত্তরটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক না-বলা কথা; যন্ত্রণার এক দীর্ঘ কেচ্ছা। 

পুনেতে পড়াশুনার জন্য যে ঘরে তাঁর ঠাই হয়েছিল, শুনেছি প্রকৃত পরিচয় গোপন করে। এ কি কম যাতনার কথা! যেন মাহ্‌মুদ দারবিশের বিখ্যাত সৃষ্টি 'আমার পরিচয় পত্র'-র পুনরাবৃত্তি। এটা কিন্তু একটা ট্র্যান্ড-এ পরিণত হয়েছে, আজকাল। মুম্বাইয়ের এক বিশেষ স্থানে কোন এক অভিনেতাকে ফ্ল্যাট কিনতে দেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে এ মানসিকতা মহানগর থেকে শহর, শহর থেকে শহরতলী, গ্রাম সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। গত মাসেই বাঁশদ্রোণীতে একটা ফ্ল্যাট-ভাড়াকে কেন্দ্র করে বেশ ধুন্ধুমার লেগে গেছিল। উল্লেখ্য, ঐ ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ছিলেন চারজন ডাক্তার; তবে সবাই 'ম্লেচ্ছ'। যাদবপুর, বেলঘরিয়া ও দমদমের বহু মেসে এমনটা ঘটে থাকে- মেস বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সব কথা ফাইনাল, যেমনি নাম শুনলেন- 'অন্য বাড়ি দেখো। আমি তোমাদেরকে ভাড়া দিতে পারবো না'। তবে এর বিপরীতও ঘটে। কিছুজন বাড়ি ভাড়া দেন; ভাড়াটিয়াদের খেয়ালও রাখেন। এমন দুটো মজার ঘটনা বলি-

২০০৯-র জুলাই-আগস্ট। এক বন্ধু মেডিকেলের জন্য কোচিং নিল। অনেক কষ্টে একটা রুম পেল, দমদমে। কাকিমা অমত করলেও কাকু বেশ সন্তোষ প্রকাশ করলেন। ছেলেটি মেডিকেলে ভালো র‍্যাংক করে ভর্তি হল; ভর্তির দিন তাঁর সাথে সেই কাকুও হাজির ছিলেন। যেন তাঁর নিজের 'সন্তান' মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে।

দ্বিতীয়টা গল্পটা আমার ইতিহাসের এক স্যার শুনিয়েছিলেন। তাঁর এক ডাক্তার বন্ধু বিশেষ কারণে বেলঘরিয়ার কোন এক জায়গায় ঘর ভাড়া নিলেন। 'মুছল্‌মান'-কে ঘর ভাড়া দেওয়ার কারণে এলাকার পণ্ডিত মশাই ঐ বাড়িতে পূজা দিতে নারাজ। বাধ্য হয়ে বাড়ির মালিক কাজ চালাবার মত ধর্মাচরণ শিখে ফেললেন। দিন কাটছিল, এক রাতে পণ্ডিত মশাই পেটের যন্ত্রণায় কাতর। কাটা মাছের মত ছটফট করছেন। নিরুপায় হয়ে লোকে ঐ ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসল। ডাক্তার নিজের কাজ করলেন...। পরদিন সকালে পণ্ডিত মশাই হাজির সেই বাড়িতে। নিজের ভুল শুধরোতে। বাড়ির মালিক ক্ষুব্ধ-কণ্ঠে বলেছিলেন, 'আমি যে এখন পূজা করতে শিখে গেছি...!' 

এমন ভুল হয়তো আমরা সবাই করে থাকি। তবে ভুলটা বুঝতে পেরে, নিজেকে শুধরোতে ক'জন প্রস্তুত? ও হ্যাঁ, আমরা অনেকে আবার নিজেকে জাহির করতে, নিজের ভুল ঢাকতে অপকৌশলও করি। যেমনটা আজকাল পশ্চিমবঙ্গে কিছু বামপন্থী করছে। দুঃখিত, কিছু 'মেকী-বামপন্থী'; যারা বামপন্থা শিখতে মাঝেসাঝে নাগপুরে যাচ্ছে...।  

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম    
  

   

No comments:

Post a Comment