খোলা-তালাক
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
দু' মাস হতে চলল সারাহ্ বাপের বাড়িতেই আছে। প্রথম প্রথম তেমন কেউই বিষয়টাকে আমল দেয়নি। কিন্তু, একমাস হয়ে গেল শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে না দেখে, পাড়াপড়শির কৌতূহল বাড়তে লাগল। আস্তে আস্তে বিষয়টি নিয়ে কানাকানি শুরু হল। কোনোভাবে পাশের বাড়ির মল্লিকা বৌদি একদিন জানতে পারলো, সারাহ্ নিজে খোলা-তালাক দিয়ে এসেছে স্বামীকে। ব্যাস, মুহূর্তের মধ্যে আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ল ব্র্যাকিং নিউজটা। আর শুরু হয়ে গেল আলাপ-আলোচনার পালা। কি কল-তলা, কি পুকুর-ঘাট, কি ফিদ্দুর চায়ের দোকান- সব জায়গাতেই হট্-পট্যাটো সারাহ্। পাড়াপড়শি-আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই একসুরে খোদ সারাহ্কেই দায়ী করতে লাগল। নজরূল মিঞা তো চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলেই বসলেন-- "কত বড় স্পর্ধা দেখো, মেয়ে হয়ে ডিভোর্স দিয়ে এসেছে স্বামীকে...!"
সারাহ্ বহু রাত বিনিদ্র যাপন করেছে শ্বশুর বাড়িতে। পণের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি তাঁর বাবা, তা নিয়ে উঠতে-বসতে শাশুড়ি-ননদের কাছে খোঁটা শুনতে হয়েছে তাঁকে। রয়্যাল-এনফিল্ড পায়নি বলে স্বামী বহুবার তাঁর গায়ে হাত তুলেছে। সেসব কথা কিন্তু পাড়ার কেউ জানে না। আর তারা জানতেও চায়নি কোনোদিন। তারা শুধু একটাই কথা জেনেছে আর তা নিয়েই দিনরাত কানাঘুষো করছে সবাই-- সারাহ্ তালাক দিয়েছে নিজের স্বামীকে; খোলা-তালাক।
১৪-০৩-২০১৮
মোমিনপুর, কোলকাতা
No comments:
Post a Comment