Thursday 24 October 2019

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৬০) সূরাতু আল্‌-মুম্‌তাহ়ানাহ্‌ (পরীক্ষিত নারী)


৬০) সূরাতু আল্‌-মুম্‌তাহ়ানাহ্‌ (পরীক্ষিত নারী)
মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৩, রুকু
 
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে (শুরু করছি)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاء تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاء مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاء السَّبِيلِ

হে বিশ্বাসী লোকেরা, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে (অর্থাৎ যারা আমাকে ও আমার বিধানকে অবিশ্বাস, অস্বীকার ও অমান্য করে তাদেরকে) বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাচ্ছো; অথচ (মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে) যে সত্য তোমাদের কাছে এসেছে (অর্থাৎ ইসলাম), তারা সেই সত্যকে অস্বীকার করেছে। (শুধু তাই নয়,) তারা রাসূল (মুহাম্মদ সাঃ)-কে এবং তোমাদেরকে (তোমাদের মাতৃভূমি থেকে) বহিস্কার করেছে শুধু এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করো। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্য এবং আমার পথে জেহাদ ও সংগ্রাম করার জন্য বের হয়ে থাকো তাহলে (এই অবিশ্বাসী ও অবাধ্যদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না;) তোমরা কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম পাঠাচ্ছো? অথচ তোমরা যা কিছু গোপনে করো এবং যা কিছু প্রকাশ্যে করো, সবই আমি জানি। আর (মনে রেখো,) তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিমনটা করে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।  

إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاء وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ

যদি (কোনোদিন) তারা তোমাদেরকে করতলগত করতে পারে তাহলে তারা তোমাদের (প্রকাশ্য) শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি তাদের হাত ও রসনা প্রসারিত করবে। তারা (সর্বদা) চায় যে, কোনোভাবে তোমরাও (তাদের মতো) কাফের ও অবিশ্বাসী হয়ে যাও।

لَن تَنفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

(মনে রেখো,) তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও তোমাদের সন্তানসন্ততি কিয়ামতের দিন তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না। মহান আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন। আর তোমরা যা কিছু করো সবই তিনি লক্ষ্য করেন।

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

তোমাদের জন্য চমৎকার আদর্শ রয়েছে ইব্‌রাহীম (আঃ) ও তাঁর সহচরদের জীবনদর্শনে। তাঁরা নিজ সম্প্রদায়ের লোকেদের ডেকে বলেছিলেনআমরা ভিন্ন, আমরা পৃথক তোমাদের থেকে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত-উপাসনা করো তাদের থেকে। আমরা তোমাদের এসব মানি না। আর তাই তোমাদের ও আমাদের মাঝে দ্বেষ ও দ্বন্দ্ব লেগেই থাকবে যতদিন না তোমরা আল্লাহ্‌কে একক উপাস্য রূপে স্বীকার করে নেবে। তবে তোমাদের জন্য আদর্শ নয় নবী ইব্‌রাহীম (আঃ)-এর ওই উক্তি যা তিনি নিজ পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। তবে (ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া) আমি আল্লাহ্‌র সম্মুখে তোমার জন্য আর কিছু করতে পারবো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা শুধু তোমারই উপর ভরসা করি, শুধু তোমার দিকে ফিরে এসেছি; কারণ আমাদের সবাইকে তোমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে কাফের ও অবিশ্বাসীদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয় তুমি, শুধু তুমিই, মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ

নিঃসন্দেহে তোমরা যারা আল্লাহ্‌র সাক্ষাৎ ও পরকাল প্রত্যাশা করো, তোমাদের জন্য তাদের (জীবনদর্শনের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে ব্যক্তি (আল্লাহ্‌র দ্বীন থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ মুখাপেক্ষহীন ও প্রশংসিত।

عَسَى اللَّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عَادَيْتُم مِّنْهُم مَّوَدَّةً وَاللَّهُ قَدِيرٌ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

সম্ভাবনা রয়েছে মহান আল্লাহ্‌ তোমাদের ও তাদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন, যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে। (মনে রেখো,) আল্লাহ সবই করতে পারেন এবং তিনি পুনঃ ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।

لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ লোকেদেরকে ভালোবাসেন। 

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করতে সাহায্য করেছে। আর যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম ও অবাধ্য।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا جَاءكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِهِنَّ فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ وَآتُوهُم مَّا أَنفَقُوا وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ وَاسْأَلُوا مَا أَنفَقْتُمْ وَلْيَسْأَلُوا مَا أَنفَقُوا ذَلِكُمْ حُكْمُ اللَّهِ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

হে বিশ্বাসী লোকেরা, যখন বিশ্বাসী ও ঈমানদার মেয়েরা হিজরত করে তোমাদের কাছে আসে, তোমরা তাদের পরীক্ষা করো। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান ও বিশ্বাস সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি জানতে পারো যে, তারা প্রকৃত ঈমানদার, তাহলে তাদেরকে আর কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য বৈধ (স্ত্রী) নয়; আর না কাফেররা এদের জন্য বৈধ (স্বামী)। অতএব কাফেরেরা যা কিছু (মোহর রূপে) ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে দিয়ে দাও। তারপর তোমরা যদি এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিয়ে করো, তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। এবং তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না এবং (তাদের জন্য) তোমরা যা (মোহর রূপে) ব্যায় করেছ, তা চেয়ে নাও এবং তারাও যা কিছু ব্যয় করেছে চেয়ে নেবে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আর তিনি সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

وَإِن فَاتَكُمْ شَيْءٌ مِّنْ أَزْوَاجِكُمْ إِلَى الْكُفَّارِ فَعَاقَبْتُمْ فَآتُوا الَّذِينَ ذَهَبَتْ أَزْوَاجُهُم مِّثْلَ مَا أَنفَقُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي أَنتُم بِهِ مُؤْمِنُونَ

তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাতছাড়া হয়ে (ধর্ম ত্যাগ করে) কাফেরদের কাছে থেকে যায় (এবং তোমরা তাদের কাছে মোহরের অর্থ ফেরত চাও কিন্তু তারা দিতে অস্বীকার করে), তাহলে তোমরা যখন (তাদের বিরুদ্ধে) সামরিক অভিযান করবে (এবং গণিমতের সম্পদ লাভ করবে), তখন (সেই গণিমতের সম্পদ থেকে) যাদের স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাদেরকে তাদের ব্যয়কৃত (মোহরের) অর্থের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছো।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

হে নবী (সাঃ), ঈমানদার মেয়েরা যখন তোমার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, সজ্ঞানে কোনো অপবাদ রচনা করে রটাবে না (অর্থাৎ জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না) এবং ভাল কাজে তোমার আদেশ অমান্য করবে না, তখন তুমি তাদের আনুগত্য-শপথ গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ قَدْ يَئِسُوا مِنَ الْآخِرَةِ كَمَا يَئِسَ الْكُفَّارُ مِنْ أَصْحَابِ الْقُبُورِ

হে ঈমানদার লোকেরা, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট (যেমন ইহুদী জাতি), তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। কেননা তারা পরকালে ভালো কিছু পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে; যেমন করে কবরস্থ লোকেদের (মহা প্রলয়ের দিন পুনরুজ্জীবিত হওয়ার) ব্যাপারে অবিশ্বাসীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।

ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

7 comments:

  1. খুব সুন্দর একটি কবিতা।
    এইভাবেই লিখে যাও।

    ReplyDelete
  2. মুনমুন তুমি অসাধারণ লিখেছ। আগামীতে তুমি আরও সুন্দর লেখো এটাই কামনা করি । It's really superb.

    ReplyDelete
  3. খুব সুন্দর লিখেছো.এই ভাবেই সুন্দর সুন্দর লেখনীর মাধমে এগিয়ে যাও.... ✌️

    ReplyDelete
  4. অসাধারণ
    Go ahead

    ReplyDelete
  5. ভীষণ সুন্দর

    ReplyDelete