Thursday 28 October 2021

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্মীয় সংস্কারঃ সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা


মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্মীয় সংস্কারঃ সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
 
মহানবী (সাঃ) ছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট ধর্ম সংস্কারক। তাঁর আবির্ভাবের সময় আরব ও বহির্বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম বলতে কিছুই ছিল না। সর্বত্র দেব-দেবী, জড় ও প্রকৃতির পূজা হতো। ধর্মের নামে অধর্মের চর্চাই হতো বেশি। এমন এক ধর্মহীন সমাজে মহান আল্লাহর রহমত হিসেবে মুহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভূত হন ইসলামের শান্তির বাণী নিয়ে।
 
(ক) তাওহীদের বাণী প্রতিষ্ঠাঃ
মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লহর প্রতিনিধি হিসেবে আগমন করেন। তিনি এক আল্লাহর বাণী প্রচার করেন তিনি আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান জানান, তিনি ঘোষণা করেন, “আল্লাহর ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল
 
(খ) পৌত্তলিকতার অবসানঃ
ইসলাম আগমনের পূর্বে আরববাসী ছিল পৌত্তলিকতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত। তারা পবিত্র কাবাগৃহে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। তারা বিভিন্ন জড় পদার্থ ও প্রাকৃতিক শক্তিকে উপাসনা করত। মুহাম্মদ (সাঃ) অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজে আল্লাহর একত্ববাদের কথা শোনান। তাদের মাঝে তাওহীদের (একেশ্বরবাদ) বীজ বপন করেন। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
 
(গ) আল্লাহর সার্বভৌমত্বঃ
আল্লাহ সকল ক্ষমতার অধিকারী- তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, রিযিকদাতা, আইনদাতা এই সার্বভৌমত্বের বিশ্বাস মহানবী (সাঃ) প্রচার করেন। তিনি ঘোষণা করেন, “সার্বভৌমত্বের অধিকার একমাত্র আল্লাহর।তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই।
 
(ঘ) পরকালের ধারণাঃ
ইসলাম পূর্ব যুগের আরবগণের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, পুনরুত্থান দিবস, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। মহানবী (সাঃ) তাদের মধ্যে আল্লাহর বাণী প্রচার করলেন। তিনি বললেন, ‘এই দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর সকলের কৃতকর্মের হিসাব নেওয়া হবে
 
(ঙ) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলের উপর ঈমানঃ
মহানবী (সাঃ) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের উপর ঈমান আনার আহবান জানান। তারা সকলেই এক আল্লাহর বাণী প্রচার করে গেছেন। তাই আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হলে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
 
(চ) আল্লাহর ইবাদতে নিযুক্তঃ
মহানবী (সাঃ) মানব জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদতে নিযুক্ত হতে আহবান জানালেন। তিনি প্রচার করলেন যে, মহান আল্লাহ একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। জড় উপাসনা, পৌত্তলিকতা ও মিথ্যা ধর্ম বিশ্বাস সমাজ হতে তিরোহিত করে তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানান।
 
(ছ) শরীয়তের মূলনীতির শিক্ষাঃ
মহানবী (সাঃ) ইসলামী শরীয়তের ৫ টি প্রধান স্তম্ভ- ঈমান, সালাত, সাওম, জজ্জ্ব ও যাকাত সম্পর্কে শিক্ষা দেন। শরীয়তের মূলনীতিকে তিনি বিশ্ববাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেন। যা বিশ্ববাসীকে আলোর পথে চলতে সাহায্য করে।
 
(জ) সালাত, সাওম, হজ্জ ও যাকাতঃ
মহানবী (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি আহ্বান জানান। রমযানের ৩০ দিন রোযা রাখা, অবস্থা-সম্পন্নদের সঞ্চিত সম্পদকে পবিত্র করার জন্য যাকাত প্রদান ও সুস্থ সামর্থ্যবানকে হজ্জ্ব করার প্রতি আহ্বান জানান। সালাত আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। সাওম বা রোযা জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করে, যাকাত সম্পদের পবিত্রতা বিধান করে এবং সমাজে ধনী দরিদ্রএর পার্থক্য ঘোচাতে সাহায্য করে এবং হজ্জ্ব মানুষের সকল পাপ হতে পবিত্র করে তোলে। মহানবনী (সাঃ) মানব জাতির মাঝে শরীয়তের এই মৌলিক আদর্শকে তুলে ধরেছেন।
 
(ঝ) কুরআন-হাদীসঃ
মহানবী (সাঃ) মনাবজাতির সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য কুরআন ও হাদীসকে রেখে গেছেন। কুরআন আল্লাহর বাণী। ওপর দিকে মহানবী (সাঃ) এর কথা, দৃষ্টান্ত ও মৌন সম্মতি নিয়ে হাদীস রচিত হয়েছে। এ দুটি গ্রন্থ মাওনবজাতির ইহকালীন জীবনের পথ নির্দেশক ও পরলৌকিক মুক্তির পাথেয়। যা মানব জাতিকে যুগে যুগে সঠিক পথে পরিচালিত করে চলেছে।
 
(ঞ) ইসলাম মানবজাতির জীবনদর্শনঃ
মহানবী (সাঃ) ইসলামকে মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এটিই হচ্ছে মানবজাতির একমাত্র মুক্তির সনদ। ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক, নৈতিক ও দর্শন সব কিছুর পথ নির্দেশের এক চূড়ান্ত দলিল হচ্ছে ইসলাম। যা মহানবী (সাঃ) এর মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে। 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment