মুহ়াম্মদ (স়াঃ)-এর সামাজিক
সংস্কারঃ কিছু কথা
ইসলামপূর্ব আরব সমাজে দাস প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। মহানবী (সাঃ) পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালনকারী। দাসদের জীবনের কোন মূল্য ছিল না। তারা ছিল তাদের প্রভূর সম্পত্তি। দাসদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হত। তাদের সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করা হত। তাদের কোন অধিকার ছিল না। ছিল না কোন সামাজিক মর্যাদা। পণ্য দ্রব্যের ন্যায় তাদের বাজারে ক্রয় বিক্রয় করা হত। মহানবী (সাঃ) সমাজে দাসদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। তিনি তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি তাদের মুক্তির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নিজে অসংখ্য দাসকে মুক্তি দিয়েছেন। মুসলিম সামরিক বাহিনীর অন্যতম একজন সেনাপতি ছিলেন ক্রীতদাস যায়িদ। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে তাঁর সাহাবীগণও অসংখ্য দাসদের আযাদ করে দেন। হাবসী ক্রীতদাস বিলাল (রাঃ) কে হযরত আবু বকর (রা) মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামের প্রথম মুয়ায্যিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
মহানাবী (সাঃ) কর্তৃক অন্যতম সামাজিক সংস্কার ছিল সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। আরবের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নিগৃহীত হতো। কন্যা সন্তানের পিতৃত্বকে আরবরা অভিশাপ হিসেব মনে করত। নারীরা ছিল ভোগ-বিলাসে উপকরণ। তাদেরকে পণ্য-দ্রব্যের মত বেচা-কেনা করা হত। তাদেরকে পৈত্রিক সম্পত্তি ও স্বামীর সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা হতো। সমাজে তাদের কোন মর্যাদা ছিল না। এমতাবস্থায় মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করলেন “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহস্ত”। তিনি নারীকে পুরুষের সঙ্গিনী ও সহযাত্রী রুপে ঘোষণা করেন। তিনি নারীদের পৈতৃক ও স্বামীর সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করেন। মূলত মহানবী (সাঃ) এর একক প্রচেষ্টায় সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হল। নারীরা সম্মান ও মর্যাদা অধিকারী হিসেবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে মহানবী (সাঃ) সর্বপ্রথম সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করেন। যেখানে ছিল না বংশগত, জন্মগত কিংবা ভাষাগত পার্থক্যের ভিত্তিতে মানুষের ভেদাভেদ। তিনিই ঘোষণা করেন যে, প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। এই আদর্শের ভিত্তিতে তিনি সমাজে মানুষের মধ্যকার বৈষম্য ও শ্রেণি ভেদাভেদ দূর করতে সক্ষম হন।
সমাজে প্রচলিত নানা অনাচার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পৌত্তলিকতা, কুসংস্কারকে তিনি সমাজ হতে মূলোৎপাটন করেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র মহান আল্লহা তায়ালা- এই আদর্শকে কেন্দ্র করে তিনি সকল সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সমাজ ব্যবস্থা পরিচালিত করেন।
মহানবী (সাঃ) সমাজে সাম্যের বাণী প্রতিষ্ঠা করেন। সকল মানষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। মানবতাই ছিল তাঁর সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত। মিথ্যা অহমিকা, বংশীয় আভিজাত্য ও কুল মর্যাদা সমাজ হতে তিরোহিত করেন। মানবতার মহান আদর্শে সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেন।
প্রাক-ইসলামী যুগের আরব সমাজে সর্বদা গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই থাকত। অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কারণে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত যা বেশ কয়েক বছর ধরে নিরন্তর চলতে থাকত, রক্তপাত ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। মহানবী (সাঃ) মানব জাতিকে সংঘাত ও রক্তপাতহীন একটি সমাজ উপহার দেন। তিনি ‘হিলফুল ফুযুল’ বা শান্তিসংঘ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। হিজরতের পরে তিনি সকল জাতি-ধর্মের সমন্বয়ের মদীনা সনদ তৈরি করেন।
মহানবী (সাঃ) সমাজ হতে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে উৎসাহিত করেন। অনাচার, ব্যভিচার, মদ, জুয়া, পাপাচার ও চরিত্রকে কলুষিত করে এমন সব কর্মকাণ্ডকে সমাজ হতে উচ্ছেদ করেন।
মহানবী (সাঃ) মসাজ হতে আর্থ-সামাজিক অন্যায়, প্রতারণা, দুর্নীতি, মিথ্যাচার, অসাধুতা ইত্যাদি দূরীভূত করেন। মানবকল্যাণকামী সুন্দর একটি সমাজ কাঠামো বিনির্মাণ করেন।
মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করলেন যে, “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয।” তিনি সমাজে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের গুরুত্বকে সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, যারা জানে ও যারা জানে না, উভয়ে সমান নয়।
আব্দুল
মাতিন ওয়াসিম
No comments:
Post a Comment