Sunday 3 October 2021

জাহেলি কবি আমর বিন কুলসুম (৫২৬ - ৫৮৪ খ্রি)


 
ম্‌র বিন কুলসুম
(৫২৬ ৫৮৪)
 
প্রাক-ইসলামী যুগে আরবী কাব্যসাহিত্য চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল। সে যুগে রচিত কাব্যগুলো আজও বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বিপুলভাবে সমাদৃতএই আরবী সাহিত্য কাব্যাকাশে উজ্জল নক্ষত্রগুলির মধ্যে কবি আমর বিন কুলসুম উল্লেখযোগ্য ও অন্যতম
 
পরিচিতি ও জন্ম
প্রকৃত নামআম্‌র, পিতার নাম কুলসুম, পিতামহের নাম মালিক, তাঁর উপনাম আবুল্‌ আস্‌ওয়াদ। তিনি তাগ্‌লিব গোত্রের অধিবাসী ছিলেন তাঁর মায়ের নাম লায়লা, তিনি মুহাল্‌হিল বিন রাবিআহ্‌র কন্যা। তাঁর জননী ছিলেন আত্মমর্যাদা সম্পন্না এক সম্ভ্রান্ত মহিলা। তিনি বাহরাইনে জন্ম লাভ করেন।     
 
শৈশব ও প্রতিপালন
তাঁর গোত্র বানু তাগ্‌লিব ফোরাত উপদ্বীপের আশেপাশে বসবাস করতো। সেখানেই কবির জন্ম হয়। তাঁর গোত্র হেরা রাজের অধীনে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে বসবাস করতো। তাই কবি অত্যন্ত স্নেহ ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠেন। ফলে ছোট থেকেই তাঁর মধ্যে মর্যাদা ও সম্মান বোধ দেখা দেয়। তিনি একটু বড় হতেই জনগণকে জীবনের উৎকর্ষের প্রতি আগ্রহী ও উদ্বুদ্ধ করতে আরম্ভ করেন। তারুণ্যে উপনীত হয়ে তিনি পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং নিজ গোত্রকে নেতৃত্ব দিতে আরম্ভ করেন। মানুষ ও সমাজের প্রয়োজনে কবিতা রচনা আরম্ভ করেন এবং তাতেও উৎকর্ষের ছাপ রাখেন। যদিও তাঁর রচিত কবিতার সংখ্যা খুব বেশি নয়।
 
জীবন যাপন
তিনি পনের বছর বয়সে তাঁর গোত্রের গোত্রপতি নিযুক্ত হন। আর তারই সুবাদে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। তিনি ফোরাতে উপকণ্ঠ থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরাক ও নাজ্‌দ বিভিন্ন প্রদেশের সফর করেন। সফল ভাবে নিজ গোত্র ও জাতির মহিমা মণ্ডন করেন। আরবের বিভিন্ন গোত্র ও জনজাতির জীবনশৈলীর উপর প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁর গোত্রে বহু ক্ষিপ্র অশ্বারোহী ও বীরযোদ্ধা ছিলেন। আর তাই বলা হয়
   لو أبطأ الإسلام لأكلت تغلب الناس.
 
তাঁর সম্ভ্রম বোধ
বাদশাহ আম্‌র একদিন নিজ সভাসদদের নিয়ে বসে ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি প্রশ্ন করে বসলেন, তোমরা এমন কাউকে জানো কি, যার মা আমার মায়ের সেবা করতে অস্বীকার করবে? তারা বলল, হ্যাঁ কবি আম্‌র বিন কুলসুমের মা। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, কেন? লোকেরা বলল, কারণ তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত মনীষা মুহাল্‌হিলের কন্যা, আর তাঁর মামা কুলায়েব বিন ওয়ায়েল আরবদের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। এবং তাঁর স্বামী কুলসুম বিন মালিক আরবের অন্যতম বীরযোদ্ধা ও অশ্বারোহী। আর তাঁর ছেলে আম্‌র বিন কুলসুম তাঁর গোত্রের গোত্রপতি।
 
অন্যদিকে বাদশাহ আম্‌র বিন হিন্দের মাও অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বংশের ছিলেন, তিনি বিখ্যাত কবি ইম্‌রাউল কায়েসের পিসি ছিলেন। আর কবি আম্‌র বিন কুলসুমের মা লায়লা কবি ইম্‌রাউল কায়েসের মায়ের ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন। ফলে বাদশাহ আম্‌র ও কবি আম্‌র উভয়ের মায়েরা একে অপরের আত্মীয় ছিলেন। ফলে বাদশাহ আম্‌র কবিকে তাঁর মা সহ ডেকে পাঠালেন। কবি নিজ মা ও গোত্রের লোকেদের নিয়ে ফোরাতের উপকণ্ঠ থেকে হেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। অতঃপর রুয়াকাহ্‌তে বাদশাহ্‌র সাথে তাদের দেখা হল। কাফেলার মহিলাদের জন্য আলাদা তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। বাদশাহ নিজ মাকে বলে দিয়েছিলেন, তিনি যেন কবির মার থেকে সেবা করিয়ে নেন। ফলে রাতে যখন দস্তরখান বিছানো হল বাদশাহ জননী কবি জননীকে খাবার এগিয়ে দিতে বললেন। কবি জননী সোজা উত্তর দিলেন, যার দরকার সে এগিয়ে গিয়ে খাবার তুলে নিক। বাদশাহ জননী পীড়াপীড়ি করতেই কবি জননী চিৎকার করে ওঠেন। আর তা শুনে কবির চোখে রক্ত জমতে লাগলো। তিনি লাফিয়ে উঠে সেখানে রাখা বাদশাহ্‌র একমাত্র তরবারিটি তুলে নেন এবং তা দিয়ে বাদশাহ্‌র মাথায় আঘাত হানেন। তাতেই বাদশাহ্‌র মৃত্যু হয়। এই ঘটনাটি ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল। অতঃপর কবি নিজ গোত্রের লোকেদের আওয়াজ দেন। তারা সেখানে যা কিছু ছিল সব লুঠ করে নেয়। এই ঘটনায় কবির সম্ভ্রম বোধ আরও তীব্র হয়। পরবর্তীতে তিনি এই ঘটনার উল্লেখ করে তাঁর মুআল্লাকাটি রচনা করেন। তাতে তিনি নিজ আত্মগৌরবের কথা তুলে ধরেন। বাদশাহর সাথে তাঁর এই ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন তাঁর মুআল্লাকায়।
 
তাঁর মুআল্লাকা
কবি আম্‌রের রচিত কবিতাগুলির মধ্যে তাঁর মুআল্লাকাই শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত। অনেকে মনে করেন, তাঁর এই কবিতায় প্রায় এক হাজার পংক্তি ছিল। কিন্তু সময়ের স্রোতে সব হারিয়ে গেছে, শুধু বাকি রয়েছে যেগুলো বর্ণনাকারীরা নিজ নিজ স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে পেরেছিলেন। তাঁর এই কবিতায় তাঁদের অসীম সাহসিকতা ও গৌরবের উল্লেখ রয়েছে। কবিতাটির আদ্যোপান্তে তা-ই বর্ণীত হয়েছে। বলা যেতে পারে সে সময়ের একমাত্র একক উপজীব্য নির্ভর কবিতা।  বলা হয়ে থাকে, তিনি তাঁর এই কবিতাটিকে বক্তব্যে রূপে উকাজের মেলায় উপস্থাপন করেছিলেন। তার প্রথম কয়েকটি পংক্তি হল—       
أَلاَ هُبِّـي بِصَحْـنِـكِ فَاصْبَحِيْـنَـا                     وَلاَ تُـبْـقِـي خُـمُــوْرَ الأَنْـدَرِيْـنَـا
مُشَعْشَعَـةً كَـأَنَّ الحُـصَّ فِيْهَـا                       إِذَا مَـا المَـاءَ خَالَطَـهَـا سَخِيْـنَـا
تَجُـوْرُ بِـذِي اللَّبَانَـةِ عَـنْ هَـوَاهُ                       إِذَا مَـــا ذَاقَـهَــا حَـتَّــى يَلِـيْـنَـا
تَرَى اللَّحِـزَ الشَّحِيْـحَ إِذَا أُمِـرَّتْ                    عَـلَـيْـهِ لِـمَـالِـهِ فِـيْـهَـا مُهِـيْـنَـا

-আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment