Sunday 24 September 2017

হাম্মাম বিন গালিব আল-ফারাযদাক

আল্‌-ফ়ারায্‌দাক়্

(৬৪১ – ৭৩২ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

জন্ম বংশ পরিচয়ঃ

আরবী সাহিত্যের ইতিহাসে যুগে যুগে যে সকল কবিসাহিত্যিকদে আগমন ঘটেছে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম ফ়ারায্দাক়্ফ়ারায্দাক়্ আরবী সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারা। আরবী সাহিত্যে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্যই বলা হয়ে থাকে

لولا شعر الفرزدق لذهب ثلث العربية 

(ফ়ারায্দাক়-এর কাব্যকবিতা না থাকলে আরবী ভাষার এক তৃতীয়াংশ বিলুপ্ত হয়ে যেতো।)  

তাঁর উপনাম আবু ফিরাস, প্রকৃত নাম হাম্মাম, পিতার নাম গালিব ও পিতামহের নাম সাসাআহ্‌। তবে তিনি আল্‌-ফ়ারায্দাক়্ নামে অধিক পরিচিত। তিনি কাযিমা নামক জায়গায়৪১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট তামীমী কবি। বানু তামীম গোত্র জাহলী যুগে জাযীরার পুর্বাঞ্চলে বসবাস করতো। এ গোত্রের শাখা ইয়ামামা থেকে ফোরাতের উপকূল এবং নজদের অভ্যন্তরীন অংশে বিস্তৃত ছিল। ফারাযদাকের পিতা পিতামহ সবাই উচ্চ বংশীয় অভিজাত ছিলেন। তার দাদা সাসা সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে জাহেলী যুগে তিনি ফিদিয়া দিয়ে শত শত শিশুকে জীবন্ত সমাধিস্ত হবার হাত থেকে বাচিয়েছেন। তাই তাঁকে মুহ্‌য়িউল্‌ মাউঊদাত ( محيئ المؤودات) অর্থাৎ জীবন্ত সমাধিস্থদের জীবন প্রদানকারী নামে অভিহিত করা হয়।

 

জীবনযাপনের ধরণঃ  

ফ়ারায্দাক় ছিলেন একটু ভিন্ন প্রকৃতির কবি। তার জীবন ছিল অনিয়ন্ত্রীত। বিশেষ কারো অধীনে তার বল্গাহীন জীবন বাধা পড়েনি। দীর্ঘদিন তিনি দামেশকের উমাইয়া দরবার থেকে দূরে অবস্থান করেন। সম্ভবত তিনি ধারণা করেছিলেন যে তাঁর বংশ মর্যাদা এবং গৌরব উমাইয়াদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মদিনায় তিনি স্বচ্ছলেই জীবন অতিবাহীত করছিলেন। সারাক্ষণ আমোদ প্রমোদে লিপ্ত থাকতেন। ক্রিতদাসীদের ঘরে যেতেন নিয়মিত। এ কথা তিনি নিজের কবিতায় উল্লেখ করেছেন তেমনি ফারাযদাকের চারিত্রিক দুর্বলতার কথা কবি জারির নানা ভাবে সমালোচনা করতেন।

 

সংসার জীবনঃ 

রুক্ষ এবং কঠোর স্বভাবের কারণে ফারাযদাকের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। তাঁর স্ত্রী নায়রের সাথে বিচ্ছেদের ঘটনাই তাঁর অসুখী হবার প্রমা মেলে। কুরায়েশ বংশের এক লোক নায়ারকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। নায়ার ফারাযদাককে নিজের অভিভাবক নিয়োগ করে। ফারাযদাকের জীবন সঙ্গীনী হিসেবে নায়ার কখনোই সুখী ছিল না। তাদের মধ্যে অশান্তি ,কলহ, দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। ইবনু কুতাইবার বর্ণনা অনুযায়ী ফারায্‌দাকের জামাআ নামে একটা পুত্র সন্তান ছিল। এ ছাড়া তার কন্যাদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা যায় তারা হলেন লাবাতা, সাবাতা, খাবাতা এবং রাককাতা। তার একমাত্র ছেলেটি ছিল কবি।

 

জীবনাবসানঃ 

১১৪ হিজরীতে ফ়ারায্দাক়্মৃত্যু মুখে পতিত হন। জুরযী জায়দান তার মৃত্যু সাল ১১০ হিজরী বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি ১১৪হিজরীতেই মারা গেছেন।

 

স্বভাব চরিত্রধর্ম বিশ্বাসঃ   

আরবী সাহিত্যের এই ক্ষণজন্মা কবি বাস্তব জীবনে কোন ধর্মই অনুসরণ করতেন না। পক্ষান্তরে তার স্ত্রী ছিলেন একজন পুণ্যশীলা ধার্মীক নারী। উভয়ে বনিবনা না হবার কারনে দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কবি ফ়ারায্দাক়্ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। এ কারনে তার মনে আত্মবিশ্বাস এবং গর্ব ছিল অনেক বেশি। তার কন্ঠ ছিল সে সময় তামীম গোত্রের সবার চেয়ে বেশি গুরুগম্ভীর। তিনি ইসলামে নিষিদ্ধ মদ পান  এবং অন্যান্য গর্হিত কাজে লিপ্ত ছিলেন। তার জীবন ছিল অনিয়ন্ত্রীত।

 

কবিতার বৈশিষ্ট্যঃ 

ফারাযদাকের কাব্য ভাষা ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ন। কবি হুতায়া ফারাযদাকের কবিতা শুনে বলেছিলেন এগুলোকেই বলে কবিতা। এতদিন যা শুনেছি তা কবিতা নয়। সেই সময়ে ফ়ারায্দাক়্বনু উমাইয়াদের কবি হিসেবে মনোনীত হন। অন্য কবিদের মত তিনি নিজে খলিফাদের গুনগান গেয়ে কবিতা লিখেছেন। ভাষা এবং ব্যাকরণবিদগণ ফারাযদাকের কাব্য থেকে অভিধানের কিছু উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। কথিত আছে যে ফারাযদাকের কাব্য সম্ভার না থাকলে আরবী ভাষার এক তৃতীয়াংশ নিশেষ হয়ে যেত। তিনি তাঁর এক বিখ্যাত কবিতায় ইমাম যানুল আবেদীন-এর প্রশংসায় বলেছেন     

هذا الذي تعرف البطحاء وطأته     والبيت يعرفه والحل والحرم

তিনি অন্য এক কবিতায় আরও গর্ব করে বলেছেন    

أحلامنا تزن الجبال رزانة     وتخالنا جنّا إذا ما نجهل

No comments:

Post a Comment