Friday 29 September 2017

ডক্টর তাহা হুসাইন


ডক্টর ত়াহা হ়ুসাইন
(১৮৮৯ ১৯৭৩ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ
ত়াহা হ়ুসাইন আধুনিক আরবি সাহিত্যের ইতিহাসে একজন স্বনামধন্য লেখক, সাহিত্যিক সমালোচক। আরবি গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর অসামান্য অবদান ও অনন্য ভূমিকার জন্য তাঁকে ‘আমীদুল-’আদাবিল-‘আরাবী বা আরবি সাহিত্যের পথিকৃৎ রূপে অভিহিত করা হয়। ডক্টর ত়াহা হ়ুসাইন ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর নীলনদের বাম তীরে অবস্থিত মাগাগাহ্‌ শহরের নিকটবর্তী আল-কীলূ গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হুসাইন ‘আলী একটি সুগার মিলে চাকরী করতেন। তাঁর তেরোজন সন্তানের মধ্যে ত়াহা হ়ুসাইন ছিলেন সপ্তম। মাত্র তিন বছর বয়সে চক্ষুরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরকালের মত দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি প্রখর মেধার দ্বারা পরবর্তী জীবনে এই দুর্বলতাকে তিনি পরাভূত করতে পেরেছিলেন
 
বাল্যকাল ও শিক্ষাঃ
সর্বপ্রথম তাঁকে গ্রামের মক্তবে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি পবিত্র আল্‌-কুর্‌আন হিফ্‌য (মুখস্থ) করেন। অতঃপর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি-স্বরূপ মাজমূ‘উল মুতূন সহ কিছু প্রাচীন গ্রন্থ ও কবিতা পাঠ করেন। ১৯০২ সালে তেরো বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আর সেখানে সাহিত্যের শিক্ষক শায়েখ সাইয়েদ আল-মুর্‌সাফী-র দ্বারা দারুণ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেনঅতঃপর ১৯০৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বর মিসর বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে ভর্তি হন। সেখানে শায়েখ মাহ্‌দী ও মুহাম্মাদ আল-খুয্‌রীদ-এর পাশাপাশি নালিনো (Carlo Alfonso Nallino) ও লিট্‌মান (Littmann)-দের মতো ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদদের লেকচার দ্বারা দারুনভাবে প্রভাবিত হন। এখানে তিনি সান্ধ্যকালীন ক্লাসে ফরাসি ভাষা শেখেন অতঃপর ১৯১৪ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র হিসাবে জ়িক্‌রা ’আবিল-‘আলা বা আবুল্‌ আলার স্মৃতিচারণা বিষয়ের উপর অভিসন্দর্ভ লিখে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এখানে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি আল্‌-জারীদাহ্‌ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখতে আরম্ভ করেন।
 
ফ্রান্স গমন ও বিবাহঃ  
গ্রাজুয়েশনের পরেই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ফ্রান্স যেতে মনস্থ করেন। অবশেষে লুতফী আস-সাইয়েদের সহযোগিতায় ফ্রান্স যেতে সক্ষম হন। ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যলয়ের স্কলারশিপ প্রাপ্ত হয়ে, ১৯১৪ সালে তিনি মন্টেপেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯১৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় হতেই ইবনু খালদূনের সমাজ-দর্শনের উপর অভিসন্দর্ভ লিখে দ্বিতীয় ডক্টরেট ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। এছাড়া এখানে অবস্থানকালে তিনি গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষাও রপ্ত করেন এবং প্রাচীন ইতিহাসে একটি ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এখানেই ১৯১৭ সালে তাঁর রিডার সুযান (Suzanne Bresseau) নামের এক ফরাসী মহিলার প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তার গর্ভেই আমীনা ও মুওনিস জন্ম গ্রহণ করেন।
 
শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার জীবনঃ
১৯২১ সালে তিনি মিসরে প্রত্যাবর্তন করে কায়েরো বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীক ও রোমন ইতিহাসের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। অতঃপর ১৯২৫ সালে মিসরীয় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হলে তিনি সেখানে আরবি সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পরের বছর, ১৯২৬ সালে তিনি ফিশ্‌ শে’রিল্‌ জাহেলী (প্রাক্‌-ইসলামী কবিতা) শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এতে তাঁর বিতর্কিত মতামতের জন্য প্রবল সমালোচনার মুখে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তার সুহৃদ লুত্‌ফি আস-সাইয়িদ সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর থাকায় তিনি তার সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং পদত্যাগ পত্র গ্রহণে অসম্মতি জানান। পরের বছর, ১৯২৭ সালে বিতর্কিত কিছু বিষয়ের বিয়োজন ঘটিয়ে তিনি এটিকে ফিল্‌ আদাবিল্‌ জাহেলী (জাহেলী যুগের সাহিত্য) নামে প্রকাশ করেন।
 
অতঃপর ১৯২৮ সালে তিনি কলা বিভাগের ডীন নিযুক্ত হন। কিন্তু তা ছিল মাত্র একদিনের জন্য। এরপর ক্রমান্বয়ে ১৯৩০ এবং ১৯৩৬-৩৮ কলাবিভাগের ডীন নিযুক্ত হন। মাঝের সময়টিতে তিনি সাংবাদিকতার সূত্রে কয়েকটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোলার নিরবাচিত হয়েছিলেন।       
 
সম্মাননা ও মৃত্যুঃ
১৯৫১ সালে অক্সফোর্ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানীক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেএছাড়া মিসর সরকার কর্তৃক সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৫৯ সালে জায়েযাতুদ্‌ দাওলাহ্‌ আত্‌-তাক্‌দীরিয়্যাহ্‌ নামের জাতীয় সাহিত্য পুরস্কারটি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর কায়রোতে এই বিরলতম প্রতিভাটির জীবন প্রদীপ নির্বাপিত হয়।
 
রচনাবলীঃ
লেখক সমালোচক ত়াহা হ়ুসাইন রচনা করেছেন একাধিক পুস্তক, যা তাঁকে মৃত্যুর পরও অমর করে রেখেছে। তাঁর কতকগুলি বিশ্বখ্যাত পুস্তক ও রচনা হল(১) জ়িক্‌রা ’আবিল-‘আলা (২) কাদাতুল্‌ ফিক্‌র (৩) হাদীসুল্‌ আর্‌বে’আ (৪) ফিল্‌ আদাবিল্‌ জাহেলী (৫) ফিস্‌ সায়েফ (৬) হাফিয ও শাওকী (৭) মা’আল্‌ মুতানাব্বী (৮) মুস্‌তাক্‌বিলুস্‌ সাকাফাতু ফী মিস্‌র (৯) মা’আ আবিল্‌ ‘আলা ফী সিজ্‌নেহী (১০) বায়েন বায়েন (১১) মির্‌আতুল্‌ ইস্‌লাআম (১২) আল্‌-আইয়াম (১৩) ‘আলা হামেশিস্‌ সীরাহ্‌ (১৪) আদীব (১৫) দু’আউল্‌ কির্‌ওয়ান (১৬) আল্‌-কাস্‌রুল্‌ মাস্‌হূর (১৭) আল্‌-হুব্বুদ্‌ দায়ে’ (১৮) আহ্‌লামু শাহার্‌যাদ (১৯) শাজারাতুল্‌ বুস (২০) জান্নাতুশ্‌ শাওক (২১) আল্‌-ওয়া’দুল্‌ হাক্‌ ইত্যাদি। 

1 comment: