Saturday 12 May 2018

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ মা বলে ডাকে


মা বলে ডাকে
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

আম্মি, পান্দ্‌রা মিনাট মে ট্রেন কাটিহার পহুঁচেগি। আপ আওনা একবার, প্লীজ!
গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে খালিদ আজ হস্টেলে ফিরছে। সে ও তার এক সহপাঠী আনিস, দু’জনে মিলে আবাধ-আসাম এক্সপ্রেসে চেপে সকাল-সকাল রওয়ানা হয়েছে দিল্লীর পথে। আর পনের মিনিট পরেই ট্রেন কাটিহার জংশনে ঢুকবে, আলিঙ্গন করবে প্ল্যাটফর্মকে; এমন সময় খালিদ মাকে ফোন করল।

তার মা দু’দিন আগে নিজ অসুস্থ পিতাকে দেখতে বাপের বাড়ি কাটিহার এসেছে। তার বাপের বাড়ি থেকে কাটিহার স্টেশন হাঁটা-পথে ৮ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা। একটা গাড়ি ভাই নিয়ে বেরিয়েছে সাতসকালে। আরেকটা গ্যারেজে। ড্রাইভার কী কারণে কাজে আসেনি। হাতে সময়ও বেশি নেই; সাতপাঁচ না-ভেবে গায়ে বোরখাটা চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। গেট থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকালেন, কিন্তু কোনো অটো বা রিকশা কিছুই পেলেন না। তাই মাথা নিচু করে জোরে জোরে হাঁটতে লাগলেন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যে কাজের মেয়েটির চপ্পল দুটো পরে এসেছেন, তা টের পেলেন মাঝ রাস্তায় যখন তার একটির ফিতা ছিঁড়ে গেল। জুতো জোড়া রাস্তায় ফেলে রেখে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চললেন স্টেশনের পথে। হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছেও গেলেন মাকে দেখে আপ্লূত খালিদ বেরিয়ে এল। মা’ও আদর করে কলিজার টুকরোকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে বললেন— বেটা মান লাগাকার পাড়না ইস্‌ বার তুমহেঁ হার্‌ হাল মেঁ নীট ক্র্যাক কার্‌না হ্যায়  

ট্রেনটি নির্ধারিত সময় থেকে ৭ মিনিট দেরীতে স্টেশন ছাড়ল। মাও গুটিগুটি পায়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলেন। মাথা নিচু করে পথচারীদের নজর এড়িয়ে এগোচ্ছিলেন তিনি তাঁর পিতা এলাকার অন্যতম প্রসিদ্ধ ব্যক্তি দুবারের বিধায়ক স্বেচ্ছায় রাজনীতি ছেড়েছেন। ইদানীং সমাজসেবা ও ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ততাঁর স্বামীও এক বিখ্যাত শিক্ষাব্রতী ও সমাজসেবী। ওভাবে খালি পায়ে, একটা মলিন বোরখা পরে হাঁটছেন দেখে রাস্তার প্রতিটা চোখ কৌতূহল ভরে নিরীক্ষণ করছে তাঁকে। কিন্তু কেউই ঠাহর করতে পারছে না, এমন কী এমারজেন্সি ছিল যে ওভাবে বেরিয়ে এসেছেন? আসলে তারা তো জানে না বিষয়টা। জানলে হয়তো আন্দাজ করতে পারতো মমত্বের গভীরতাকে। সন্তানের প্রতি মাতৃত্বের আবেগকে। খালিদের প্রতি তাঁর মমতাকে। হোক না খালিদ অন্য গর্ভের সন্তান; তাঁকে সে তো মা বলে ডাকে।  

১৩-০৫-২০১৭
কোলকাতা-৩৯

1 comment: