সকলের মঙ্গল কামনায়
বদিউর রহমান
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানস মজুমদার বেশ পরিচিত নাম।
দীর্ঘদিন কৃতিত্বের সঙ্গে অধ্যাপনার জন্য কয়েক হাজার তাঁর ছাত্রছাত্রী। প্রায়
চল্লিশ জন গবেষক তাঁর তত্ত্বাবধানে পি এইচ ডি করে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
ওঁর নিজস্ব লেখা গোটা দশ-বারো বই। আপাতদৃষ্টিতে গম্ভীর ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন; আলাপ
করলে অতি স্বজন।
কেন জানিনা আমাকে বেশ স্নেহ করেন। আমার সঙ্গে কথাবার্তা
বলার সময় ইসলামি শব্দের আধিক্য দেখা যায়। জিজ্ঞাসা করেন ‘নাস্তা’ হল? চা-পানি
খেয়েছেন? ইত্যাদি। কথাবার্তা শোনার সুযোগ হতো ওঁর ক্লাস শেষ হওয়ার পর; তার আগে শুধু
নমস্কার বিনিময় করা যেত। আমার অপরিণত লেখা অতীব কুণ্ঠার সঙ্গে তাকে দেখিয়ে নিয়ে ও
বিভিন্ন রকম পরামর্শ নিয়ে সমৃদ্ধ হই। কত জ্ঞানের কথা শোনান। আমি অবাক হয়ে শুনি আর
ভাবি যে অত বড় মাপের মানুষ হয়েও আত্মম্ভরিতার লেশ মাত্র নেই। কথাবার্তার মাঝে কখনও
কখনও রসিকতাও করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় ফোনে অনেকক্ষণ কথা হল। গুরুগম্ভীর কথাগুলো
বাদ দিয়ে কটা নির্মল হাঁসির কথা বললেন। সেগুলো–
১) এক অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক; সামান্য ঠাণ্ডা লাগলে বা দু-চারটে
হাঁচি হলেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার বাবু পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন
লিখে দেন। অধ্যাপক ডাক্তার বাবুর দক্ষিণা দিয়ে দেন। ডাক্তারকে তো বাঁচতে হবে!
অধ্যাপক প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের দোকানে যান। ওষুধপত্র
কেনেন। দোকানদারকে টাকা-পয়সা মিটিয়ে দেন। ওকেও তো বাঁচতে হবে।
অধ্যাপক ওষুধগুলো নিয়ে বাড়ি ফেরেন। সেগুলো রাখা থাকে টেবিলে
বা ড্রয়ারে; খান না। ওঁকেও তো বাঁচতে হবে !!
২) একজন বাড়িতে মিলাদ দিচ্ছেন। পাড়ার পুরুষরা একটা ঘরে বসে
আর মহিলারা অন্য ঘরে। মিলাদ চলাকালীন ভদ্রলোকের ছোট ছেলেটা কেঁদেই চলেছে। মহিলাদের
ঘরের দরজার কাছে তাঁর স্ত্রী এসে বললেন, ‘পোলা কাঁদে ক্যান?’ ভদ্র লোক ফিসফিসিয়ে
বললেন, ‘গাধার পিঠে চড়বে কয়।’ স্ত্রী তৎক্ষণাৎ ঝাঁঝিয়ে বললেন, ‘তা পোলাডারে পিঠে
একবার চড়ালেই তো হয়।’
এগুলো শোনার পর বললাম, স্যার আপনার তো বেশ রসবোধ আছে।
উত্তরে স্যার একটা গূঢ় মন্ত্র জানালেন, ‘নির্মল হাসির কথা শুনবেন। মনটা তরতাজা ফুরফুরে
রাখার চেষ্টা করবেন আর বয়স্ক মানুষজনের সঙ্গ পরিহার করে শিশুদের সঙ্গে বেশি
মিশবেন।
সত্যিই, স্যারের এই মূল্যবান কথাগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ও
প্রণিধানযোগ্য...।
০৮-০৪-২০১৮
No comments:
Post a Comment