Wednesday 9 May 2018

বদিউর রহমানঃ একটা দীর্ঘশ্বাস...


একটা দীর্ঘশ্বাস...
বদিউর রহমান
১৯৭১ তখন আমি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে কোনো একটা কাজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়েছেদুরু দুরু বুকে দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের অফিসে প্রবেশ। কাজ সেরে আশুতোষ বিল্ডিংয়ের উল্টো দিকে ট্রাম ধরার জন্য অপেক্ষা করছি ওয়েলিংটনে নেমে মৌলানা আজাদ কলেজ যাব; হঠাৎ একটা পাথরের নুড়ি গায়ে এসে পড়ল। তারপর আবার একটা। মনে হল কেউ আমাকে তাক করে নুড়ি ছুড়ছে। আশুতোষ বিল্ডিংয়ের এক তলার বারান্দার দিকে তাকাতে রহস্যটা উন্মোচিত হল। তিনটে মেয়ে সেখান থেকে ঐ নুড়িগুলো আমার দিকে ছুঁড়ছে। আর খিলখিল করে হাসছে।
পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি লম্বা। মাথা ভর্তি চুল। ১৯৮০-এর গাড়ি এক্সিডেন্টে কপালের কাটা দাগটা ছিল না। বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা করার জন্য তখন আমি নজর কাড়ার মতো এক সুশ্রী যুবক। ওরা নুড়ি ছুঁড়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, না আমাকে ব্যতিব্যস্ত করতে চাইছে বুঝলাম না। আমি কলেজের ছাত্র আর ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওদের সমীহ করলেও প্রতিজ্ঞা করলাম– বছর দুই পরে আমিও আসছি এখানে; তখন দেখে নেব। ট্রাম এসে যেতে নিজের কলেজ (যা তখন শুধু ছেলেদের কলেজ) অভিমুখে যাত্রা করলাম।
দু বছর পর যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। আশুতোষ বিল্ডিঙয়ের নীচের তলায় চুটিয়ে টেবিল টেনিসও খেললাম। বাৎসরিক স্পোর্টসে অনেক অনেক পুরস্কারও পেয়েছি নিয়মিত ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করতাম। বিভিন্ন বিষয়ের বহু বন্ধুবান্ধবও জুটেছিলছিল পুঁটিরাম-মৌচাকে যাওয়া আসাকফি হাউসের আড্ডায় মিশে ছিল আমাদেরও শব্দ মিছিল। চলেছে গল্পগুজব...কিন্তু কাউকে দেখে নেওয়া হয়নি
পাশ করার পর সৌভাগ্য বশতঃ দীর্ঘদিন সেখানেই শিক্ষকতা করলাম। অঙ্গীকার করেছিলাম দেখে নেব – অবসর গ্রহণ করলাম কিন্তু সেই অর্থে দেখে নেওয়া হল না।
আরও ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় যাব আর ভিনি ভিদি ভিসি হবে! হল না। আমিও প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বিশেষ কারণে ঈর্ষা করি। ১৯৮১ থেকে যে একই খুঁটিতে বাঁধা দড়ি কখনো আলগা হতে দেয়নি। হয়তো তাই, মাঝে মাঝে অজান্তেই উঠে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস...!    

১০-০৪-২০১৮


No comments:

Post a Comment