Friday 13 August 2021

মাহমুদ সায়িদঃ সালেহ চাচা


স়ালেহ় চাচা

মাহ্‌মুদ সা‘য়িদ, ইরাক   

ওরা চারজন একসাথে হাঁটছিল। হাঁটছিল স্কুলের বাচ্চাদের মত করে পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে। ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় সে খানিকটা ব্যতিক্রমী ছিল ওর বয়স হয়তো বার হবে। সবার পেছনে চাকাওয়ালা লাগেজটা ও টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদূর হাঁটা, তারপর একটু বিশ্রাম; এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল ওরাচারজনই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো কারণ বিশাল স্টেশনের বাতিগুলোর ম্লান আলো ওদেরকে সম্মোহিত করেছিল। ওরা আরো একবার থমকাল যখন ওদের অনুসন্ধিৎসু চোখে খেলনা ভর্তি একটা ঠেলা গাড়ি ধরা পড়ল। ঠেলা গাড়িটিতে খেলনার প্রাচুর্য দেখে ওদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছিল। হরেক রকমের অসংখ্য খেলনা ছিল তাতে; বেলুন, চাবির রিং, পুতুল এবং তুলো দিয়ে বানানো অসংখ্য ছোট ছোট জীবজন্তু।

দ্যাখ, দ্যাখ... ডাইনোসর... গরিলা... কুকুর... ওই দ্যাখ কী সুন্দর একটা গাড়ি...

আহ! জলদি চল, ট্রেন ছেড়ে দেবে তো।

বড় বোন ওদেরকে কোনোরকমে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল। ট্রেনের দিকে দৌড়ে যাবার সময় বাচ্চাগুলো চারপাশে তাকাচ্ছিল আর বড় বোনের জামা ধরে টান দিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিল— সানা, এরকম খেলনা কি মসুলেও পাওয়া যায়?

আমি হাসলাম। আচ্ছা, পৃথিবীর সব জায়গার সব বাচ্চা কি একই রকম! সানা কী উত্তর দিল তা আমার কানে এল না। তিন-চার বছর বয়সী ছোট বোনের হাতটা চেপে ধরে ঝাপসা হলুদ আলোর বাতির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের দিকে সানা খুব দ্রুত এগিয়ে গেল। এই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সাথে কে আছে এ কথা তখনো আমার মাথায় আসেনি বয়স বাড়লে মানসিক বৈকল্য অবধারিত! তবে একটু বাদেই এক মহিলাকে ওদের পেছনে লক্ষ্য করলাম। হাঁটার গতি হ্রস্ব হওয়ায় উনি এতক্ষণ আমার চোখে পড়েননি। পায়ের গতি কমিয়ে আমাকেও এক সময় থামতে হল। গত চল্লিশ বছরে এই প্রথম মসুলগামী কোনো ট্রেনে চড়ছি। জংধরা বগিগুলোর নম্বর বেশ কড়া নজরেই পরীক্ষা করলাম। দেখে মনে হল, ধাতুর সংখ্যাগুলো দু-একদিন বাদেই খুলে পড়বে, তাছাড়া ওগুলোর উপর সাদা রঙের একটা অমার্জিত আস্তরণও ছিল। পেয়েছি, এই তো এটাই ২৩৫ নম্বর বগি। উঠে পড়লাম তাতে

চল্লিশ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। আগে সিটগুলো ছিল কাঠের। এখন ছিড়ে ক্ষতবিক্ষত হলেও চামড়া দিয়ে মোড়ানো, কিছুটা আরামদায়ক। বার-তের জন যুবক আমাদের কেবিনে শোরগোল করছিল। লাল-সাদা-কালো চেকের গেঞ্জি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওরা কোনো এথলেটিক টিমের সদস্য। আমার ডানপাশের দু’টো সিটে বসেছিল সানা ও সবচেয়ে ছোট্ট মেয়েটি। ওদের উল্টো দিকে বসেছিল অন্য দু’জন, পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আর দশ বছরের একটি ছেলে। ছেলেটি বসেছিল দুই সারির সিটের মাঝখানে সরু রাস্তা ঘেঁষেআমি ওর পাশেই বসেছিলাম, তবে অন্য সারিতে। পুরনো সামরিক কোট পরে একজন বয়স্ক লোক আমার বাম পাশে বসেছিলেন। কালো ছেঁড়া বিশমাগ দিয়ে তার মুখটা ঢাকা ছিলচেহারা দেখার কোনো উপায় ছিল না, আর তাই বুঝতে পারিনি তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, নাকি ঘুমাবার চেষ্টা করছিলেন। ওদের জীবনে এটাই প্রথম ট্রেন ভ্রমণ। বড় বোন সানা ছাড়া বাকি তিন জনই ছিল উৎফুল্ল; কথাবার্তায় প্রগলভ। জানালা দিয়ে কাছের নোংরা প্লাটফর্ম আর দূরের আকাশের দিকে ওরা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বেশ কিছুক্ষণ। ওরা বসেছিল মেরুদন্ড সোজা করে; সবকিছুতেই তখন উত্তেজনা; কেউ একজন মুখ নাড়লেই প্রত্যেকে আলোড়িত হচ্ছিলো সহর্ষে। কিন্তু সানা ছিল চিন্তামগ্ন।

হঠাৎ ওই মহিলার কথা মনে পড়ল। তিনি বসেছেন কোথায়? তাকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি নাতবে কি তিনি ওদের কেউ নন! হঠাৎ ডানে ঘুরে বগির দরজার দিকে তাকাতেই তার দেখা মিললো। একটা আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় তিনি আমাকে ডাকছিলেন; তার চোখে ছিল দুঃখ-মাখা অনুনয়। আমি বুঝতে না পারায় একইভাবে তিনি আবারো ইশারা করলেন। আমি প্রায় বলতে যাচ্ছিলাম, ‘আমি?’ কিন্তু তিনি মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বললেন। আমি ক্ষান্ত হলাম, তারপর উঠে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে বুঝলাম তার বয়স পঞ্চাশ হবেচিকন শরীর; মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, অবহেলা আর সীমাহীন দুঃখ-যন্ত্রণা তার সৌন্দর্যকে ম্লান হতে বাধ্য করেছে। তার রঙজ্বলা বোরখার উপর গোল ছাপওয়ালা একটা ওড়না জড়ানো ছিল। ওড়নার দু’দিকের দু’টি ধুসর পাড় তার পুরো বক্ষদেশে লেপ্টে ছিল শৈল্পীকভাবে। একেবারে আদর্শ ড্রেস। আমি কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি খুব সাবধানে ট্রেন থেকে নেমে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। আমিও নামলাম। তার চোখের কোণ চিকচিক করছিলতিনি বললেনদেখে মনে হচ্ছে আপনি একজন সহৃদয় মানুষ।

তারপর আমার হাত ধরলেন। আমি হেসে ফেললাম; ততক্ষণে তার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছে। ‘দয়া করে আমার একটি কাজ করে দিন। আমি মিনতি করছি...’ অনেকটা ফিসফিসিয়ে তিনি কথাগুলো বললেন।

কী করতে হবে?     

আগে কথা দিন কাজটি করবেন... 

কাজটা কী তা জানার আগেই কথা দেব?

খুব সহজ কাজ। মসুল স্টেশনে ওদের চাচা স়ালেহ় না আসা পর্যন্ত ওদের সাথে থাকবেন।

এটা তো খুব সহজ কাজ।

বলুন থাকবেন কিনা?

তারপর বোরখার পকেট থেকে ছোট্ট একটি কোরআন বের করে তিনি বললেনপ্রতিজ্ঞা করুন।

আমি আবারও হাসলাম— এভাবে প্রতিজ্ঞা করার প্রয়োজন নেই, আমি থাকব।

না, প্রতিজ্ঞা করুন।

অতঃপর আমার হাতে চুমু দেওয়ার জন্যে তিনি ঝুঁকে পড়লেন।

এসবের প্রয়োজন নেই।

প্রতিজ্ঞা করুন।

আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।

ওদের চাচা না আসা পর্যন্ত আপনি ওদের ছেড়ে যাবেন না?

না, যাব না।

তিনি হাসলেন, ‘আমার মন ঠিকই বলেছিল। আপনি একজন হৃদয়বান মানুষ।’ আমি জানতে চাইনি তবুও তিনি বললেন, ‘হানাকে জন্ম দিতে গিয়ে ওদের মা তিন বছর আগে মারা গেছেজানেনই তো, অবরোধের কারণে দেশে কোন জীবাণুনাশক নেই। ওদের বাবারও ক্যানসার ধরা পড়ে ওই বছরেইপরিত্যাক্ত ইউরেনিয়াম সেল নাকি স্ত্রী হারাবার যন্ত্রণার কারণে তার ক্যানসার হয়েছিল তা কে জানে! তাজি সেনা ঘাটির একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। জানেন নিশ্চই, কুয়েতের সাথে যুদ্ধের সময় ওই ঘাটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস হল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার বাড়ির মালিক ছয় মাসের ভাড়ার দাবি ছেড়ে দেননি। ওদের সব কিছু বিক্রি করে আমরা ভাড়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাগদাদে ওদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

ওদের চাচাকে আপনি চেনেন?

না। কিন্তু তিনি স্টেশনে আসবেন।

আপনি নিশ্চিত?

দুই হাত প্রশস্ত করে তিনি বললেনকেন আসবেন না? আমি তাকে তিনবার টেলিফোন করেছি। শুধু টেলিফোন বিল দিতেই আমার খরচ হয়েছে দশ হাজার দিনার। তার নম্বর জোগাড় করতে গিয়ে আমাকে প্রায় দোজখের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। তিন মাস; অনেক দীর্ঘ সময়। আল্লাহ রহম করেছিলেন আমাকে।

মাথা নুইয়ে তিনি আমার সহানুভূতি প্রার্থনা করলেন। তার চোখ উপচে তখন জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমাকে বললেন— আজকালকার সমস্যা তো জানেন... অপহরণ, বোমাবাজি, খুন... দয়া করে ওই মাসুম-নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোকে ওদের  চাচার হাতে তুলে দেবেন।

ট্রেন ছাড়ার হুইসেল শুনে ওরা সবাই জানালার দিকে ঝুঁকে পড়ল; তবে দ্রুত হতাশও হলকারণ বাইরে দেখার মত তেমন কিছুই ছিল না। কাজিমিয়া স্টেশনের বাতিগুলো ততক্ষণে অনেক দূর চলে গেছে; যত দূর গেলে সবকিছু অধরা হয়ে যায়। অন্ধকারে খেঁজুর গাছগুলোকে সুইয়ের মত মনে হচ্ছিল। আমাদের ট্রেন বাগদাদের উপকন্ঠ ছেড়ে যাওয়া মাত্রই রাস্তার সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হল। কারণ বাতিগুলো এখন আর শুধু পথিককেই পথ দেখায় না, পথ দেখায় শক্রু বিমানগুলোকেও। বাচ্চাগুলো জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে আনলো। ট্রেনের একঘেয়ে শব্দে ওদের ঘুমিয়ে পড়ার কথা থাকলেও কিছু খাবারের ঘ্রাণ তাতে বাধ সেধেছিল; শিক কাবাব, ডিম, প্যাকেটজাত আম, আরো অনেক কিছু। তরুণ এ্যাথলেটরা গাল ভরে স্যান্ডউইচ চিবোচ্ছিল, একে অন্যকে খোঁচা মেরে কথা বলছিল আর পেপসি ও সেভেন-আপ এর ক্যানে চুমুক দিচ্ছিল।

আমার পাশে বসা বাচ্চা দু’টো সানাকে ফিসফিস করে কিছু একটা বলল। সানার পাশের ছোট্ট মেয়েটিও কিছু একটা আবদার করলতা শুনে সানা উঠে উপরের সেল্ফ থেকে একটা ব্যাগ নামিয়ে আনলো। তা দেখে তিন ভাই-বোনের কারোরই চোখের পলক পর্যন্ত পরছিল না। সানা ব্যাগ থেকে কাপ আর একটি তোয়ালের ভেতর থেকে চার খন্ড রুটি বের করলো। ওই ভদ্র মহিলাই ওদের জন্য রুটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। সানা তিন ভাই-বোনের হাতে রুটি দিয়ে নিজের অংশটুকু আবারো তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে রাখলো। ব্যাগটা সেল্ফে রেখে রেস্টরুম থেকে কাপ ভরে পানি নিয়ে এল। সেই পানিতে রুটি ভিজিয়ে তিনটি অভুক্ত শিশু তাদের পাকস্থলীকে শান্ত করল।  

ছেলেটি বললকাল স়ালেহ় চাচার বাড়িতে আমরা অনেক কিছু খাব।

অ্যাথলেটদের হাতে কোল্ড ড্রিংস দেখে ওর পাশের মেয়েটি বললোআমরা পেপসি খাব।

সেভেন-আপ।

অরেঞ্জ জুস।

চাচার মেয়ের সাথে আমরা খেলব। এ কথা বলেই মেয়েটি সানার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলওর নাম কী?

জানি না।

তা শুনে ছেলেটি চট করে বলল— চল্ আমরা ওর নাম দেই ‘জানি না’

এবার ওরা এক সাথে হেসে উঠল।

ওর বয়স কত?

জানি না।

ছেলেটি বললচল্ ধরে নেই ওর বয়স ‘জানি না’ ওরা আবারো এক সাথে হেসে উঠল।

এরপর পাঁচ বছরের মেয়েটি বললও নিশ্চই ‘জানি না’ স্কুলে পড়ে।

খুব মনোযোগ সহকারে আমি ওদের দেখছিলাম, আর ওদের নিষ্পাপ হাসি-আনন্দে গোপনে ভাগ বসাচ্ছিলাম।

স়ালেহ় চাচার কথা সবসময় মেনে চলবি। সানা বলল।

মেনে চলব। ওরা সমস্বরে উত্তর দিল। আমার মনে হল, এই উপদেশ বাণী ওরা এর আগে বহুবার শুনেছে।

চাচির কথাও শুনবি।

শুনব।

কাওসার আন্টির মেয়ে জায়নার মত চাচার মেয়েকে জ্বালাতন করবি না।

করব না! ওরা আবারো হাসিতে ফেঠে পড়ল।

চার ভাই-বোন দেখতে প্রায় একই রকম; হালকা বাদামী চুল, দুধ-সাদা গায়ের রঙ, ডাগর চোখ, নীলাভ মনির চারপাশটা হালকা সবুজ আর পাতলা গোলাপরঙা ঠোট। অসাধারণ। হাতে থাকা ম্যাগাজিনটা আমি পড়তে শুরু করলাম। ছেলেটি, যে আমার কাছাকাছি বসেছিল, আমার দিকে ঘুরে বসল। বলল— আমার বাবা প্রায়ই এই ম্যাগাজিনটা পড়ত: মডার্ন সায়েন্স।

আমি হাসলাম— আর তুমি? কখনো পড়ার চেষ্টা করেছ?

এটা কঠিন। আমি তো কেবল ফোর্থ গ্রেডে পড়ি। আমি শুধু ছবিগুলো দেখতাম।

জিয়া, অযথা প্রশ্ন করে উনাকে বিরক্ত করিস না। ওর বোন বাধা দিল।

না না, মোটেই বিরক্ত হচ্ছি না।

সানা ছোট বোনকে নিয়ে রেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ফিরে এসে পাঁচ বছরের বোনটির তন্দ্রা কাটাবার জন্য কনুই দিয়ে আলতো করে খোঁচা দিল— রিজা! উঠ, ঘুমাবার আগে আমার সাথে রেস্ট রুমে চল।

এরপর এল জিয়ার পালা, তুই-ও আমার সাথে চল।

আমি এখন আর ছোট নই। আমি পুরুষ। আমার যখন ইচ্ছা হবে আমি তখনই যাব।

সানা ওকে তাগাদা দিয়ে বললচল বলছি।

যাও। আমি বললাম।

ফিরে এসে জিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলআপনি কি এর আগে কখনো মসুলে গিয়েছেন?

চল্লিশ বছর আগে আমি হেসে উত্তর দিলাম। আমার কথা শুনে ও খিলখিল করে হাসল। তবে ওকে কিছুটা কৌতুহলী মনে হচ্ছিল। আমার ধারণা, কেউ যে চল্লিশ বছর বেঁচে থাকতে পারে ওর সেটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বলল— চল্লিশ বছর?

হ্যাঁ।

তাহলে তো আপনি সব কিছুই ভুলে গেছেন!

আমি ঠিক নিশ্চিত নই। হয়তো সব কিছু বদলে গেছে। হয়তো অনেক কিছু আগের মতই আছে। কালকেই সব বুঝতে পারব।

মসুলে কি বাগদাদের মত ফুটবল মাঠ ছিল?

আমি হাসলাম— না, মাঠের মত কোনো ফাঁকা জায়গা পেলে আমরা সেখানেই খেলতাম।

আর এখন?

হয়তো দু-একটা আছে। অন্তত স্কুলগুলোতে থাকার কথা

আমার ক্লাসে আমিই সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলি; টপ অফেনসিভ প্লেয়ার। ভবিষ্যতে আমি ইরাকের জাতীয় দলে খেলব।
আমি হাসলাম— তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন? আপনি কি আমাকে কখনো খেলতে দেখেছেন? খুব সিরিয়াস হয়েই ও আমাকে জিজ্ঞেস করল।

না, তা দেখিনিতবে লক্ষ্যে অনড় থাকলে তুমি যে-কোনো কিছু অর্জন করতে পারবে।

জিয়া এবার কিছুটা ফিসফিস করে বললআমার বাবাও তাই বলত। খুব দ্রুত ওর চেহারায় এক অদ্ভুত রকমের গাম্ভীর্য ফুঠে উঠল। ও বললআমি বাগদাদ ছেড়ে যেতে চাইনি। ওখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু আমরা থাকব কোথায়? আমরা তো বাড়ি ভাড়া দিতে পারি না।

ওই বোরখা পরা মহিলা তোমাদের কে হন, যিনি তোমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে গেলেন?

কাওসার আন্টি, তিনি আমাদের প্রতিবেশী। স্কুল টিচার। উনার স্বামীও আগে স্কুল টিচার ছিলেন।

তিনি তোমাদের আত্মীয়?

না। স়ালেহ় চাচা ছাড়া আমাদের আর কোনো আত্মীয় নেই। তাকে আমরা কখনো দেখিনি। মসুলেও কি বাগদাদের মত বোমা ফাটছে?

জিয়ার এই প্রশ্ন আমাকে প্রচণ্ড নাড়া দিলো— হ্যাঁ... পুরো ইরাকে

ও কিছু বলল না। এমন রূঢ় বাস্তবতার কথা শুনে ওর স্বপ্নভরা চোখ দু’টো শূন্য হয়ে গেল। জিয়া বারবার হাই তুলছিল। ঘুমের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ও হার মানল। আর ওই ঘুম আমার মধ্যেও সংক্রমিত হতে বেশি সময় নেয়নি। আধা-জাগ্রত অবস্থায় আমি সানাকে দেখছিলাম। নিজের চোখ বুজবার আগে ও ভাই-বোনদের চাদর দিয়ে ঢেকে দিল; ওদের হেলে পড়া শরীর সোজা করে দিল।

গাধা।
আমি জানি না ঠিক কে ওই শব্দটা করেছিল। তবে গাধার ডাক শুনবার আগেই অ্যাথলেটদের অট্টহাসি আর সেই সাথে বাচ্চাগুলোর শোরগোল আমার কানে এল। আমি চোখ খুললাম, ওরা জানালায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে; একটা গাধা চিৎকার করছিল বটে তবে মুহূর্তেই চোখের আড়াল হয়ে গেল; কিছু মাটির ঘর-বাড়ি দেখলাম, সেগুলোও অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর দু’পাশে চোখে পড়ল সাদা মর্মর পাথর শোভিত অসংখ্য শুষ্ক পাহাড়। যুদ্ধ আর অবরোধে ইরাকিরারও এখন এই পাহাড়গুলোর মত!

—“হামাম আল্‌-আলিল” ট্রেনের এক কর্মচারী চিৎকার করে সামনের স্টেশনের নাম ঘোষণা করল। এর কিছুক্ষণ পরই আমাদের ট্রেন একটি টানেলে ঢুকল। আলো বিদায় নিল, অন্ধকার জেগে উঠল। আকস্মিক অন্ধকারে ভয় পেয়ে তিন বছরের মেয়েটি চিৎকার শুরু করল।

—ভয় নেই সোনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সানা ওকে সান্তনা দিল। ও নিজেও হয়তো ভয় পেয়েছিল।

ওদের অভয় দিতে আমি বললামচিন্তা করো না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা টানেল থেকে বের হয়ে যাব।
টানেল কী?

আমি জিয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।

—পর্বতের নিচ দিয়ে রাস্ত। সামনে থেকে এক অচেনা পুরুষ কন্ঠ জিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিল। অ্যাথলেটদের কেউ হবে হয়তো

আমিও নীরবতা ভাঙলাম, আর তার ওই কথা শেষ হতেই বললামমিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা মসুলে পৌঁছে যাব।

তবে আমাদের কথা আর বেশি দূর এগোয়নি। শুরু হলো মৌন থাকার প্রতিযোগিতা। ইতিমধ্যে টানেল পর্ব শেষ করে আমাদের ট্রেন বাইরের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে। পুরো কেবিনে ছড়িয়ে পড়েছে ভোরের হালকা আলো। আর দূর থেকে উঁকি দিচ্ছে শহরের একতলা ঘিঞ্জি ঘর-বাড়ি, রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট আর অতি পরিচিত আরবের অলস ধুলো।

আমারা মসুলে এসে গেছি, স়ালেহ় চাচা আমাদের নিতে আসবেন!” ওরা উল্লসিত, ওদের ভেতর-বাহিরে তখন আগুন। রাজানামের মেয়েটি সানাকে জিজ্ঞেস করলস়ালেহ় চাচা কি চাচিমা ও তার মেয়েকে নিয়ে আসবেন, না একাই আসবেন?

জানি না।

জিয়া বলল— ‘জানি না’ আসবে না। ও তো এখন স্কুলে।

ওরা আবারো হাসি-আনন্দে ডুব দিল, বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে কথা বলল। ট্রেন থামার আগ পর্যন্ত ওরা ছিল অক্লান্ত। তখন সকাল সাতটা। ট্রেন থামা মাত্রই অ্যাথলেটরা হুড়মুড় করে নামতে শুরু করল আর সানা ভাই-বোনদের একত্রে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত হল। দু’ হাত ছড়িয়ে ও এমন ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো যাতে তাদের কেউই একা একা নেমে যেতে না পারে। ওর এই প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমিও খুব দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। স্টেশনের মূল প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে দূর থেকেই আমি ওদের উপর নজর রাখছিলাম। এটাই স্টেশন থেকে শহরে ঢুকার একমাত্র পথ। আমি যখন খুব ছোট তখন বাগদাদ ও মসুলের মধ্যে এই রেল সড়ক নির্মিত হয়েছিল। তখন ট্রেনই ছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন। সে-সময় উজ্জ্বল মর্মর পাথরের দেয়াল ঘেরা এই স্টেশনটি ছোট হলেও আমাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন! নোংরা, অবহেলিত, পতনোন্মুখ। স্পষ্ট করে বললে, দৃষ্টিকটু।

ট্রেন থেকে নামার সময়ই মসুলের তীব্র শীত আমার চামড়ায় দাঁত বসিয়েছিল। তাই রোদ পোহাবার জন্যই আমার এই দূরে দাঁড়ানো। বাচ্চাগুলোর পক্ষে তখনো স্টেশন ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একে অন্যের গা ঘেসে দাঁড়িয়ে ওরা হাঁড় কাঁপানো শীতের সাথে যুদ্ধ করছিল। হঠাৎ দেখলাম প্রত্যেকের হাতে একটি করে কাগজসানা কখন ওই কাগজগুলো বের করল আমি লক্ষ্য করিনি। প্রতিটি কাগজে একটি শব্দই লেখা, “স়ালেহ় চাচা। 

ওদের স্বাগত জানাতে গেট দিয়ে কেউই ঢুকল না। তবে পঞ্চাশ বছরের এক বৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী জোব্বা পরে আমার মত রৌদ্রে এসে দাঁড়ালেন। মোটা বেল্ট, কালো বিশমাগ আর সিল্কের ইকাল; এমন পোষাক এখনো কেউ পরে আমার তা জানা ছিল না। হিজাব পরা গর্ভবতী এক তরুণী আর তার ডান কাধে ভর দিয়ে আসা এক বৃদ্ধাকে দেখে লোকটির মুখে হাসি ফুটে উঠল। এরপর উনিশ-কুড়ি বছরের এক মেয়েকে নিয়ে বিশাল দেহী এক যুবক তাদের সাথে যোগ দিল। আচার-আচরণ দেখে মেয়েটিকে তার কন্যা বলেই মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বাগদাদ থেকে আসা এক ভদ্র মহিলা ও দুই যুবককে আলিঙ্গন আর চুমু দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে তারা একসাথে ফিরে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে গেল পুরো স্টেশন। ওই চার খুদে আদম সন্তান ছাড়া অন্য কেউ আমার চোখে পড়ছিল না। সত্যি বলতে কী, পুরো স্টেশনটাকে তখন খুব অসহায় মনে হচ্ছিল; মর্মর পাথরের প্লাটফর্মে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত শুকনো কাদায় ভরে গেছে; পুরনো কাঠের বেঞ্চে দুই সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি তক্তা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। অথচ এককালে এই স্টেশনই ছিল মসুলের অহংকার। বাচ্চাগুলো ইতিমধ্যেই ওই বেঞ্চটাতে বসেছে, হানা সানার কোলে, রাজাডানে; আর জিয়া দাঁড়িয়ে। সবার দৃষ্টি গেটের সাথে গাঁথা। ওদের হাত আর “সালেহ” লেখা কাগজের মধ্যে আগের মত আর সখ্য নেই।

রোদের প্রপাত সত্ত্বেও মসুলে তখন হাঁড় কাঁপানো শীত। বহু কষ্টে স্টেশনের ইলেক্ট্রিক হিটার খুঁজে বের করে সেটার উপর হাত তুলে ধরলাম। ফলাফল শূন্য। সামান্য তাপও জুটলো না। অথচ চল্লিশ বছর আগে এই হিটার সব সময় লাল হয়ে থাকত; দিনে দিনে সব কিছুই উচ্ছন্নে যেতে শুরু করেছে… এটাই বোধহয় আমাদের জীবন চরিত! হঠাৎ এক রোগা লোক কোত্থেকে এসে এলোপাথাড়ি ভাবে প্লাটফর্ম ঝাড়ু দেওয়া শুরু করলতাকে গেঁয়ো বলেই মনে হল; শহুরে জীবন তার অনার্যতা ঘোঁচাতে পারেনি— চলে যাওআর কেউ আসবে না। চলে যাও। কর্কশ স্বরে ভাঙ্গা আরবিতে সে চেঁচিয়ে উঠল।

ওদের চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। প্রতিকুল পরিবেশে আত্মরক্ষার সহজাত প্রবৃত্তি ওদের মধ্যে জেগে উঠতে শুরু করেছেহয়তো এ কারণেই কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বন্য প্রাণীর মত ওরা এখন দলবদ্ধ। ওরা বারবার সানা আর ওই বৃদ্ধের দিকে তাকাচ্ছিল। তখন আমি গেটের বাইরে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি ওই ঝাড়ুদারের দিকে এগিয়ে গেলাম, তাকে একটা বিদেশী সিগারেট দিলাম— ওরা যদি আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকে তাতে আপনার কোনো সমস্যা হবে কি?’

লোকটিকে আমি এমনভাবে কথাগুলো বললাম যাতে ওরা কেউ না শুনতে পারে।

লম্বা ঝাড়ুটা বুকের মধ্যে ঠেস দিয়ে রেখে সে বললোযে কোনো সময় ইনস্পেক্টার সাহেব চলে আসবেন।

সেটা আমি দেখব।

ওরা কি আপনার সাথে?

হ্যাঁ।

আমি তাকে সিগারেট ধরিয়ে দিলাম। লম্বা একটা সুখটান দিয়ে সে চোখ বন্ধ করল। তার মুখে তৃপ্তি ফুটে উঠেছে। চোখ খুলে সে সিগারেটটা আরেকবার দেখল। এরপর আর কোনো কথা না বলে হনহন করে ঢুকে গেল হল রুমের ভেতর।
আরো আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেল। সবচেয়ে ছোট মেয়েটি কাঁদতে শুরু করেছে— স়ালেহ় চাচা কখন আসবে? আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

সানা ব্যাগ থেকে তার রুটির টুকরাটি যখন বের করছিল তখন বাকি তিনজনই ওই রুটির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল। ও তিন ভাই-বোনকে রুটিটি ভাগ করে দিল।

—তুই? জিয়া সানাকে জিজ্ঞেস করল।

স়ালেহ় চাচার বাসায় গিয়ে খাব।

কী খাবি?

জানি না।

কাইমার... মধু?

জানি না।

জিয়া হেসে বললআমরা খাবো আর ‘জানি না’-ও আমাদের সাথে খাবে।

কিন্তু সেই রোগা ঝাড়ুদার সবার অলক্ষে আবারো হাজির হল। এবার খানিক চাপা স্বরে বললতোমরা এখনো আছো। চলে যাও... আমাকে কাজ করতে দাও।

আমি তখনো বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে প্যাকেট থেকে আরো একটা সিগারেট তাকে দিলাম। সে কিছু বলার আগেই সিগারেটটা ধরিয়ে দিয়ে তার হাতে কিছু দিনারও গুঁজে দিলাম। আরো একবার সে উধাও হয়ে গেল।

স়ালেহ় চাচার কথা সব সময়...

সানার  মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ওরা নিজেরাই বললমেনে চলবো।

ওদের উল্টো দিকে মুখ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে আমি বসে পড়লাম...

মুখ ধোয়ার জন্য হানাকে নিয়ে সানা রেস্টরুমে গেল। ফিরে আসার পর মেয়েটিকে আরো সুন্দর লাগছিল। এরপর ও রাজাকে বললোচল।

এখন না।

না, এখনই। ঘুম থেকে উঠার পর তুই মুখ পরিস্কার করিসনি।

সানা রাজাকে টেনে রেস্টরুমে নিয়ে গেল। ফিরে এসে জিয়াকে কিছুই বলতে হল না, ও একাই রেস্টরুমের দিকে হাঁটা ধরলো। জিয়া সানাকে বলল আমার সাথে যাওয়ার দরকার নেই।

ফিরে এলে ছোট একটা চিরুনি দিয়ে সানা জিয়ার চুল আচড়ে দিল। জিয়া তখন টানা সুরে উঁ-আঁ শব্দ করছিল।

তখন নয়টার কিছু বেশি বাজে। ওরা তিনজন হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে ঘুরছিল, আর গাইছিল— ‘ও আমার রূপসী স্বদেশ...’

সানা উঠে রেস্টরুমে গেল। ওর অনুপস্থিতি টের পেয়ে ওরা খেলা বন্ধ করল। সানা যখন ফিরল তখন ওর চোখ লাল, সুন্দর মুখে চাপা যন্ত্রণার আঁচড়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা তখনো ওর মধ্যে ছিল। জিয়া, রাজাও হানা সানাকে ঘিরে দাঁড়াল। রাজাজিজ্ঞেস করলস়ালেহ় চাচা কি আসবেন?

সানা কোনো উত্তর দিল না। দেখতে দেখতে সাড়ে দশটা বেজে গেল। কেউ এল না। সানা গেটের দিকে নিরন্তর তাকিয়ে রইল। সাথে ওরাও। সানা আবারো রেস্টরুমে গেল। আমি বুঝতে পারলাম কিছুক্ষণ কান্না করে ও ফিরে আসবে।

চল খেলি। জিয়া বলল।

কিন্তু হানা কাঁদতে শুরু করল— আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

সানা বললোচল, তোদের সাথে আমিও খেলব।

ওরা একে অন্যের হাত ধরে আগের মতই বৃত্ত তৈরি করলো আর ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগলো— ‘ও আমার রূপসী স্বদেশ...’

আমি অসহায়ের মতো নীরবে হাসতে হাসতে গেটের বাইরে চলে গেলাম। ওদের এই নৃত্য সঙ্গীত চলল অনেক্ষণ। ফিরে এসে আমি আবারো প্লাটফর্মে দাঁড়ালাম। সানার চোখে তখন নোনা জলের খেলা চলছে। ভাই-বোনেদের সাথে ও আর খেলতে পারল না। বেঞ্চে বসে দু’ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলবাকি তিনজনও সানাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর তখন “স়ালেহ় চাচা” লেখা কাগজগুলো ওদের হাত থেকে একটা একটা করে খসে পড়ছিল; পড়ে ওদেরই পায়ের কাছে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল।

 

عمو صالح

محمود سعيد - العراق 

أربعة، يسيرون ملتمّين، يحملون حقائبهم الصّغيرة على ظهورهم كطلّاب المدارس، باستثناء كبيرتهم التي لم تتجاوز الثّانية عشرة بأي حال، فهي تسحب حقيبتها ذات العجلات على الأرض. يمشون قليلاً، ثم يستريحون، توقفوا منبهرين، بالمحطة الضخمة بالرغم من الضوء الشّاحب، توقفوا، تلمع عيونهم المستطلعة أمام عربة مكدّسة بمئات الهدايا، أوراق اللّعِب، البالونات، مفاتيح سيارة بعشرات الموديلات، أنواع العرائس واللُّعب، التّماثيل الصّغيرة، انظري..ديناصور، غوريلا، كلب، ما أجمل هذه السّيارة، غاننننن، وحينما استحثتهم أختهم الكبيرة: ياللا.. قبل أن يفوتنا القطار، هُرعوا وهم يتلفتون، يجذبون ثوبها للفت انتباهها: سناء.

- أيوجد مثل هذا في الموصل؟

ابتسمتُ، الأطفال هم الأطفال في كل مكان وزمان. لم أسمع جواب سناء.

كانت تحثُّ السّير نحو القطار تحت الأضواء الصّفر الشّاحبة، وهي تشدّ على يد أختها الصّغيرة، التي لم تكن تتجاوز الثّالثة. ولم يثُر في ذهني أي سؤال عمّن سيرافقهم إلى الموصل، ما إن يسحبك العمر في دهاليزه حتى تغشاك لحظات غبيّة غير متوقعة، ثم لحظت امرأة تسير وئيداً خلفهم. أسير أنا أيضاً ببطء، توقفتُ، ربما هذه أولّ مرّة أركب القطار إلى الموصل بعد أربعين سنة، أتفحّص أرقام العربات القديمة، الصّدئة، والتي رُقعت أرقامُها المعدنية المتساقطة بصبغ أبيض غير دقيق! هه..هذه 235. صعدتُ. تغيّر كل شيء عما قبل أربعين سنة، المقاعد آنذاك خشبية، هذه جلدية، أرْوَح بالرّغم من تهرئها، صخب بضعة عشر شاباً يملأ فراغ العربة، بدوا من قمصانهم، المميزة بالألوان الثّلاثة: الأبيض، الأحمر، الأسود فريقاً رياضياً. الأطفال أنفسهم يحتلون المقعدين إلى اليمين، سناء والطفلة الصغيرة، وأمامهما طفلة أخرى في الخامسة، وطفل في العاشرة يجلس جانب الممر، صدف أن كان مقعدي قربه يفصلنا الممر فقط إلى يميني، بينما يتدثر عجوز "إلى يساري" بمعطف عسكري قديم، يلفّ وجهه "بيشماغ" أسود متهرئ، لم أميّز أي ملمح. لا أدري أكان نائماً، أو يستعدّ لينام. بدا الأطفال الثّلاثة سعيدين بهذه التّجربة الفريدة، ركوب القطار لأول مرة، ينظرون من النّوافذ إلى أرصفة المحطة القذرة، عبر الفضاء، الجهة الأخرى، يعتدلون بجلستهم، يثيرهم أي شيء، يضحكون بقوة، بسعادة لأي كلمة يلقيها أحدهم، أما سناء فقد استلّها تفكير عميق بشيء ما، ثم تذكرتُ المرأة، ترى أين جلستْ؟ لم أرها. أيمكن أن تكون غريبة عنهم؟ ربما، التفتُ إلى اليمين حيث باب العربة رأيتها واقفةً، تنظر إليّ، وتستدعيني بحركة سبابتها، يختلط في عينيها حزن ورجاء عميقين، كررّت الحركة غير مرّة، كدت أهتف متسائلاً أنا! لكنها وضعت السّبابة نفسها على فمها، أن أسكت، فوأدت استفساراتي، نهضتُ. اقتربتُ منها. في خمسيناتها، نحيفة، بقايا جمال أهملته مصائب لا حصر لها. عباءة مقحلة، ثوب محكم من البازة البيضاء المنقطة، جديلتان شهباوان تنسدحان على صدر ممتلئ. ما إن اقتربتُ منها حتى نزلتْ درجات القطار بحذر. ثم التفت إلي، نزلت وراءها، غامت عيناها:

-يبدو أنك إنسان طيّب.

أمسكتْ كفي. ابتسمتُ باهتمام، همستْ:

-لي خدمة بسيطة، أرجو أن تقوم بها، الله يوفقك، الله يخليك..

-ما هي؟

-قبل كل شيء، عدني أن تقوم بها..

-قبل أن أعرف..

-إنها بسيطة، أن تبقى مع الأطفال حينما يقف القطار في الموصل حتى يصل عمهم..

-بسيطة..

أتفعلها؟

-نعم.

أخرجت مصحفاً صغيراً من جيب ثوبها "البازة"، البيضاء المنقّطة بالأسود:

-أقسم.

ابتسمتُ:لا حاجة للقسم، أفعل.

-بل أقسم.

سحبت كفي لتقبلها.

-لا داعي لكل هذا.

-اقسم.

أقسمتُ.

-لن تتركهم حتى يتسلّمهم عمهم صالح.

-أفعل.

ابتسمتْ: تبدو طيباً. توقعتُ ذلك. أضافتْ:

-ماتت أمهم في ولادة هناء، قبل ثلاث سنوات، حصار، لا يوجد معقم، أصيب أبوهم بالسّرطان في نفس السّنة، "من القهر"، أو من اليورانيوم المنضّب. "لا أحد يدري". مهندس في قاعدة التاجي. تعرف أنت. دمرت في حرب الكويت. مات قبل ثلاثة أشهر، سامحهم صاحب البيت من الإيجار ستة أشهر، بعنا كل ما لديهم، لم يبقَ لهم شيء في بغداد.

-أتعرفين عمهم؟

-لا، لكنه سيأتي لاستقبالهم في المحطة.

-أ أنت متأكدة أنه سيأتي؟

فتحت ذراعيها بعباءتها المقحلة على وسعهما:

-كيف لا؟ اتصلت به ثلاث مرات، الاتصالات وحدها كلفتني عشرة آلاف دينار. "طلعت" روحي حتى وجدت رقمه، ثلاثة أشهر، وأنا أبحث عنه، أخيراً وفقنا الله، وجدنا رقمه.

ثم لوت رقبتها باستعطاف والدموع تملأ عينيها:

-أنت تعرف المصائب الآن.. خطف الأطفال، التّفجيرات، القتل.. تُسلّمهم بيد عمهم صالح.

جذبتهم حركة القطار نحو النّوافذ، لكنها خيبت آمالهم بعد قليل، لا شيء يستحق النّظر، أضواء الكاظمية تأتي خافتة من بعيد، رؤوس النّخيل سوداء في الليل كالدبابيس، وسرعان ما انقطع ضوء أعمدة الكهرباء بانتهاء ضواحي بغداد فابتعد الأطفال عن الشّبابيك، وأثّرت حركة القطار الرّتيبة في يقظة الأطفال وكادوا يغفون في مكانهم لولا أن فاح في الجو رائحة الطّعام. كباب مشوي، مقلي، شاورما، بيض، عنبة. أخرج شباب الفريق الرياضي "ساندويجاتهم" أخذوا يقضمونها مع النّكات، القهقهات، التّعليقات، تبادل أنخاب البيبسى، السّفن أب.

التفت الطّفلان نحو سناء، همسا ببضع كلمات، بينما كانت الصّغيرة الجالسة قربها تنظر إليها بتضرّع، نهضتْ، تناولتْ حقيبتها من الحافظ الشبكي في الأعلى، أنزلتها، وعيون الثّلاثة متعلّقة بحركة يديها، ثم أخرجتْ كأساً صغيراً، ومنشفة صغيرة فتحتها عن أربعة أقسام متساوية لقرص خبز، كانت أعدتها لمثل هذه اللّحظة، ناولت قطعة خبز لكل منهم، ولفّت قطعتها. أرجعتْ الحقيبة إلى مكانها، ثم نهضتْ إلى المغاسل القريبة، وملأتْ الكأس بالماء، ثم جاءتْ، فأخذ الأطفال يأدمون الخبز والماء.

قال الطّفل: غداً سنأكل في بيت "عمو" صالح.

ردّت الوسطى وهي ترى الفريق الرياضي يشرب المرطبات: سنشرب البيبسي.

-السفن أب.

-عصير البرتقال.

-سنلعب مع ابنته. ثم التفت إلى سناء: ما اسمها؟

-لا أدري..

تدخل الطّفل: لنسمها "لا أدري"

ضحك الجميع.

-كم عمرها؟

-لا أدري.

تدّخل: ليكن عمرها "لا أدري." ضحكوا مرة أخرى.

أضافت الوسطى: إنها تتعلم في مدرسة "لا أدري."

أحسستُ بالسعادة، "وأنا أراقبهم من حيث لا يشعرون" يضحكون بسعادة وبراءة.

-تسمعون كلام "عمو" صالح.

رددوا جميعاً، وكأنهم سمعوا هذه الجملة عشرات المرات: نعم. كلام زوجته. نعم. لا تعاكسوا ابنته، كما كنتم تفعلون مع زينة ابنة الست كوثر. لااااااا. ثم اندمجوا جميعاً في قهقهة طويلة.

فيهم جميعاً أشياء موحدة، شعر كستنائي فاتح، بياض نقي، أعين شهلْ واسعة، يبدو خط الزّرقة فيها ضعيفاً يميل نحو الاخضرار، مع شفاه رفيعة مزمومة. بدأت أقرأ في المجلة التي كان معي. الطّفل أقربهم إليّ. التفتَ نحوي: كان أبي يقرأ نفس المجلة: العلم المعاصر. ابتسمتُ: وأنتَ؟ ألم تحاول أن تقرأها؟ صعبة، مازالتُ في الصّف الرّابع فقط، أنظرُ إلى الصّور فقط. قطع علينا حوارنا صوتُ أخته:

-ضياء، لا تزعج الرّجل بأسئلتك.

-لا، لم يزعجني.

نهضت سناء ويدها بيد الصّغرى، نحو المرافق القريبة، وعندما جاءت هزّت الوسطى التي كانت تراود النّعاس، هزتها من كتفها برفق وهي تهمس: رجاء. هيّا. تعالي معي إلى المرافق، قبل أن تنامي.

بعد ذلك جاء دور ضياء:

-أنت أيضاً، تعال.

-أ أنا صغير؟ رجل، أذهب متى أشاء.

أصرّت: تعال. قلت له: اذهب. سألني بعد مجيئه: هل زرت الموصل؟

ضحكتُ: قبل أربعين سنة. قهقه مستغرباً، كأنه لا يصدّق أن يعيش المرء مثل تلك المدة: أربعين سنة؟. نعم. لابد أنك نسيت كل شيء! لا أعرف. ربما تغيّر كل شيء. ربما بقي شيء ما. غداً أعرف. أ كان أيوجد فيها ملاعب كرة قدم مثل بغداد؟ ابتسمتْ: لا، كنا نلعب في الخلاء. والآن؟ لابد أن يوجد! في المدارس في الأقل! أنا أحسن لاعب كرة قدم في الصّف. مهاجم درجة أولى. سأكون في المستقبل من ضمن الفريق العراقي. ابتسمت: لا شك في ذلك. التفتَ إلي بجد: كيف تؤكّد ذلك؟ أ رأيتني ألْعب. هززتُ رأسي: لا، لكن الإنسان يصلُ إلى ما يريده إن أصرّ. قال بما يشبه الهمس: أبي كان يقول ذلك. ثم التفت إلي، قال باهتمام: لم أكن أريد أن أترك بغداد، أصدقائي كثيرون، لكن أين نبقى؟ ليس عندنا فلوس الإيجار! من هي تلك المرأة "أم العباءة" التي ودّعتكم في المحطة؟ ست كوثر جارتنا. معلمة متقاعدة. زوجها معلّم متقاعد أيضاً. أهي قريبة؟ لا، ليس عندنا أقرباء غير عمي صالح، لكننا لم نره. أيوجد في الموصل تفجيرات مثل بغداد؟ صفعني السؤال. نعم.. كما في العراق كلّه. لم يقل شيئاً. عتمت عيناه بقسوة. تثاءب، بدأ يقاوم النّعاس. ثم أغفى. أعداني تثاؤبه، وبين اليقظة والمنام رأيت سناء تنهض تتفقد أخوتها واحداً واحداً تغطّيهم، تعدّل من أوضاعهم وهم نائمون، قبل أن تغمض عينيها.

-حمار.

لست أدري من صرخ بالكلمة، لكني سمعت قهقهة الفريق الرياضي، وضحك الأطفال، قبل أن أسمع نهيق الحمار. فتحت عيني. الأطفال مستيقظين، يتجمعون على الشباكين، حمار ينهق، يختفي، بيوت طينية، تختفي، تلال قحلاء تتوالى، يلمع بين الحين والحين على الجانبين مرمر أبيض ناصع، سمعت كلمة حمام العليل، ثم دخل بعد قليل القطار في نفق، انطفأت الأضواء، ساد الظلام، صرخت الصّغيرة، هتفت سناء بصوت مضطرب: لا تخافي، حبيبتي. ربما كانت هي خائفة أيضاً. قلت مطمئناً: لا تخافوا إن هي إلا بضع دقائق فقط، إننا ندخل النفق. ما النفق؟ ميّزت صوت ضياء. أجاب صوت رجولي من الأمام، ربما من أحد أعضاء الفريق الرياضي: هه.. هه. طريق تحت الجبل. أكملتُ: سنصل الموصل في خلال عشر دقائق. ساد الصّمت. فجأة خرج القطار من النفق. غمر الضوء الرقيق العربة. لاحت من بعيد بيوت من طابق واحد متراصة. أعمدة كهرباء. غبار في غير مكان. ملأت الفرحة تقاطيع الصّغار: وصلنا الموصل، سيأتي "عمو" صالح. سألتْ رجاء: سيأتي "عمو" صالح لاستقبالنا مع ابنته وزوجته أم وحده؟ لا أدري. قال ضياء: لن تأتي "لا أدري" معه، إنها في المدرسة. ضحكوا بسعادة فائقة مرة أخرى، ثم انطلقوا يعلّقون، ويقهقهون حتى توقف القطار في حدود السّابعة صباحاً.

تزاحم الفريق الرياضي قبل الجميع على فتحة الباب، بينما كانت سناء قد لـمّت أخوتها أمامها، نشرت ساعديها، تحيطهم، لتمنعهم من النّزول، احترمت رغبتها، أسرعتُ نازلاً، وقفتُ في مدخل المحطة أرقبهم من بعيد. بوابة المحطة هي المنفذ الرئيس إلى المدينة. عندما كنت صغيراً وقبل أن يعبّد طريق السّيارات بين الموصل وبغداد، كان القطار هو الوسيلة الأولى والأخيرة للسفر، آنذاك كانت المحطة تتألق مزهوة "رغم صغرها" بجدران المرمر البراقة، لكنها بدت الآن قذرة، مهملة، شبه مهدمة، تصدم العين.

قرصني برد الموصل القارس بشدة حين نزولي، فخرجتُ من المحطة لأتمتع بحرارة الشّمس الخفيفة، لكن لم يكن بمقدور الأطفال أن يخرجوا، كانوا يقاومون البرد بوقوفهم متراصين إلى بعضهم وحدة واحدة، بيد كل واحد منهم ورقة، يرفعها إلى الأعلى. لست أدري متى أخرجت سناء تلك الأوراق: كل ورقة فيه كلمة واحدة فقط: صالح.

لم يدخل البوابة أي مستقبِل. جاء رجل في الخمسين، "زبون" تقليدي مع حزام عريض، كنت أظنه اختفى، مع يشماغ أسود وعقال حريري، يلمع، ظل واقفاً خارج الباب في الشّمس، ابتسم عندما شاهد شابة محجبة حامل، تسير مع عجوز تجنح في مشيتها نحو اليمين، ثم عسكري ضخم متجهم الملامح جاء وبرفقته مراهقة محجبة تبدو ابنته، وقفوا خارج المحطة أيضاً، استقبلوا امرأة وشابين، في عناق، وقُبَل. بعد دقائق خلت المحطة إلا منا. بدت شديدة الكآبة، أرضية المرمر فيها منقوشة بحفر مليئة بوحول جافة، مسطبة خشبية يتيمة لم يبقَ من مسندها سوى لوح وحيد بعرض سانتمترين، جلس الأطفال على المسطبة. الصّغيرة هناء في حضن سناء، ورجاء إلى اليمين، بينما ظل ضياء واقفاً. أعينهم على الباب المفتوح، وبيدهم أوراق صالح غير مرفوعة. 

بالرغم من الشّمس المشرقة، كان البرد قارساً، توجهت نحو المدفأة الكهربائية، مددت يدي، باردة، كانت قبل أربعين سنة تكوي اليد، كلّ شيء إلى خراب..تلك سنة الحياة عندنا، فجأة انتصب رجل أعرج في يده مكنسة خوص مثبتة إلى عصا طويلة، وأخذ يكنس أرضية الصّالة المليئة بالحفر. بدا كقروي لم تستطع المدينة اجتثاث جذوره. نبر وبعربية مكسّرة، وبفظاظة:

-اخرجوا، لا مستقبِلين بعد الآن.. اخرجوا.

أظلمتْ أعين الأطفال، تحرّكت عندهم غريزة الدفاع عن النفس، التحموا مع بعضهم، لكنهم لم يفوهوا بأي كلمة. انتقلت نظراتهم بين سناء وبين الأعرج. كنت خارج الباب. أخرجتُ سيجارة أجنبية، تقدمتُ منه، قلت بما يشبه الهمس كي لا يسمعوا حدثنا:

-تفضّل. لن يضايقك بقاءهم هنا بعض الوقت. هه. أليس كذلك.

اسند عصا المكنسة إلى صدره:

-سيأتي المفتّش بعد قليل.

-لكل شيء حينه.

-أهم معك؟

-نعم.

أرثّت السّيجارة له، امتصّ دخانها بعمق. أغمض عينيه، ثم فتحهما، نظر إلى السّيجارة برضى. انسحب في ممر جانبي واختفى.

مضت نحو نصف ساعة، بكت الصّغيرة: متى يأتي "عمو" صالح، إني جائعة.

-لا تبكي حبيبتي..

فتحت سناء الحقيبة، أخرجت كسرة الخبز، تجمّع الثّلاثة حولها، وأعينهم على الخبزة الصّغيرة، قسمتها بينهم، هتف ضياء:

-وأنت؟

-سآكل في بيت "عمو" صالح.

-ماذا سنأكل؟

-لا أدري.

-قيمر.. وعسل.

-لا أدري.

ضحك ضياء: سنأكل وتأكل معنا "لا أدري".

فجأة لاح الأعرج، كأن الأرض انشقّت ولفظته، صرخ بكل قوة:

-أما زلتم هنا؟ اخرجوا.. دعوني أنظّف.

كنتُ في الخارج أيضاً، دخلتُ، ابتسمتُ، أخرجتُ علبة الدخان، ناولته سيجارة أخرى، أورثتها له قبل أن يفتح فمه، ثم دسست بضع ورقات نقد في يده من دون أن يراني الأطفال، اختفى من جديد.

-تسمعون كلام..

أكملوا : "عمو" صالح..

ظللت واقفاً، ظهري إلى الأطفال. طفقت أدّخن..

نهضتْ، حملتْ الصّغيرة على كتفها، دخلت غرفة الحمام، غسلت وجهها، نشّفته، بدت الصّغيرة فائقة الجمال. ثم توجهتْ نحو رجاء: تعالي. ليس الآن. بل الآن قبل أن يأتي "عمو" صالح. لم تغسلي وجهك بعد نوم القطار. أمسكتْ يدها، سحبتها، وما إن خرجت حتى توجه ضياء نحو الحمام من دون أن تناديه، قال: لا حاجة لمرافقتي. انتظرتْه لكي يخرج، ثمّ أخذتْ تصفّف شعره المبلل بمشط صغير، وهو يتأفف. 

تجاوزتْ السّاعة التّاسعة. بدأ الأطفال يلعبون أمسكوا بأيدي بعضهم وأخذوا يدورون ويغنون: يا أرضنا الحلوة..

نهضتْ سناء، دخلتْ الحمام، أحسّوا باختفائها، توقفوا عن اللّعب. خرجتْ وعيناها محتقنتان بالدّموع، وآثار ضبطها لنفسها تمزّق تقاطيعها الجميلة. تجمّعوا نحوها: سألتها رجاء: أ سيأتي "عمو" صالح؟ لم تجب. تجاوزتْ السّاعة العاشرة والنّصف، كانت تنظر نحو باب المحطة، وهم ينظرون معها. دخلتْ الحمام، وخـمّنت أنها كانت تبكي هناك ثم ترجع، هتف ضياء: هيّا نلعب. بكتْ الصّغيرة: إني جائعة. نهضتْ سناء: قالت بصوت عالٍ: سنلعب معا جميعاً، أنا معكم. كوّنوا حلقة كبيرة أخذوا يدورون حول أنفسهم، وبأيديهم أوراق "عمو" صالح: يا أرضنا الطّيبة، ابتسمتُ، خرجتُ، كم دامتْ الرّقصة! التفتُ، عادتْ الغيوم تفتك بعيني سناء، لم تستطع أن تكمل، انسحبتْ إلى المقعد وضعتْ كفيّها الصّغيرين على وجهها، انفجرت في بكاء مرّ طويل، فهرع الجميع نحوها وأوراق "عمو" صالح تتساقط من أيديهم على الأرض، عانقوها وهم يبكون.

No comments:

Post a Comment