Sunday 22 August 2021

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৭৬) সূরাতু আদ-দাহর (মহাকাল), আল-ইনসান (মানুষ)


৭৬) সূরাতুদ্‌-দাহ্‌ (মহাকাল), আল্‌-ইন্‌সান (মানুষ)
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩১, রুকু’ ২


بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহ্‌র নামে (শুরু করছি); তিনি পরম করুণামঅতি দয়ালু।


هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا

মানুষের উপর মহাকালের এমন কিছু সময় কি আসেনি, যখন সে উল্লেখযোগ্য কোনো বস্তুই ছিল না।

إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا

নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তার পরীক্ষা নেবো; আর তাই তাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করেছি।

إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

আমি মানুষকে (ভাল-মন্দ উভয়) পথ বাতলে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হবে, না-হয় অকৃতজ্ঞ হবে।        

إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَلَاسِلَا وَأَغْلَالًا وَسَعِيرًا

এবং আমি অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি (লোহার) শিকলবেড়ি এবং লেলিহান অগ্নি-শিখা।

إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا

নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল লোকেরা (সেদিন) কাফুর (অর্থাৎ স্বর্গের একটি ঝর্ণাধারার জল) মিশ্রিত পানপাত্র হতে (মদিরা) পান করবে।

عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا

মূলত এটা একটা ঝর্ণা, তার থেকে পান করবে আল্লাহ্‌র (সৎ ও অনুগত) বান্দারা; তারা এই ঝর্ণাকে যথেচ্ছ ভাবে প্রবাহিত করবে।

يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا

তারা (ইহলোকে তাদের) মানত পূর্ণ করে এবং ভয় পায় সেদিনকে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।

وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا

এবং তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (ভালোবেসে) অভাবগ্রস্ত, অসহায়, অনাথ ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করে।

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورًا

(এবং তারা বলে) কেবল আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি; আমরা তোমাদের থেকে না কোনো প্রতিদান কামনা করি, আর না কোনো রকমের কৃতজ্ঞতা।  

إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا

আমরা ভয় করি আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ, অশুভ ও ভয়ঙ্কর দিনকে।

فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا

যদিও আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে প্রদান করবেন সজীবতা ও আনন্দ।

وَجَزَاهُم بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا

এবং ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোশাক প্রদান করবেন।  

مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا

সেখানে তাঁরা সুসজ্জিত সোফা বা আসনে হেলান দিয়ে বসবে। আর সেখানে তাঁরা না রৌদ্রের তাপ অনুভব করবে আর না শীতের শৈত্য।

وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا

ওই স্বর্গে তরুছায়া তাঁদের উপর (সর্বদা) ঝুঁকে থাকবে এবং ফলসমূহ সম্পূর্ণ রূপে তাঁদের আয়ত্ত্বাধীন করে রাখা হবে।

وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا

তাঁদেরকে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং কাঁচের মত (স্বচ্ছ) পানপাত্রে।

قَوَارِيرَ مِن فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا

রূপালী স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা তা যথাযথ পরিমাপে পূর্ণ করবে।

وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا

তাঁদেরকে সেখানে পান করানো হবে যানজাবীল(অর্থাৎ আদা) মিশ্রিত পানীয়।

عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا

(তা পান করানো হবে) স্বর্গে স্থিত একটি ঝর্ণা থেকে, যার নামসাল্‌সাবীল’।

وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا

এবং তাঁদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে (ওই সব পানীয়) পরিবেশন করবে চির-কিশোর বালকেরা। তাদেরকে দেখে তোমার মনে হবে, তারা যেন ছড়ানো-ছিটানো মনি-মুক্তো।

وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا

তুমি যখন সেখানে (অর্থাৎ স্বর্গে) দৃষ্টি ঘরাবে, নানান রকম সুখের উপাদান ও বিশাল রাজ্য দেখতে।

عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا

তাদের আবরণ হবে পাতলা সবুজ ও সোনালী উজ্জ্বল রেশমের এবং তাদেরকে পরানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণ। এছাড়া তাদের প্রভু তাদেরকে শারাবান্‌ ত়াহুরা’ (অর্থাৎ পবিত্র পানীয়) পান করাবেন।

إِنَّ هَذَا كَانَ لَكُمْ جَزَاء وَكَانَ سَعْيُكُم مَّشْكُورًا

(এবং তাদেরকে বলা হবে,) নিঃসন্দেহে এসব তোমাদের (সৎ কর্মসমূহের) প্রতিদান। বস্তুত তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে।

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنزِيلًا

(হে মুহাম্মদ সাঃ) আমিই তোমার প্রতি (পবিত্র) আল্‌-কুর্‌আনকে পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ করেছি।

فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ آثِمًا أَوْ كَفُورًا

অতএব, তুমি তোমার পালনকর্তার আদেশ ধৈর্য্য সহকারে পালন করো (তাঁর আনুগত্য করে এবং মানুষের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিয়ে) এবং তাদের মধ্যকার কোনো পাপিষ্ঠ বা অবিশ্বাসীর আনুগত্য করো না।

وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

এবং প্রতিদিন (ফাজ্‌র অর্থাৎ ভোর, জুহ্‌র অর্থাৎ মধ্যাহ্ন এবং ‘আস্‌র অর্থাৎ বিকেলের সালাত অর্থাৎ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে) সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর নাম স্মরণ করো;  

وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا

এবং রাতের কিছু অংশে (তাঁর নাম স্মরণ করো) এবং তাঁর উদ্দেশে (মাগ্‌রিব অর্থাৎ সান্ধ্যকালীন ও ‘ইশা অর্থাৎ রাতের নামাজে) সাজ্‌দা করো। এবং দীর্ঘ সময় ধরে রাতের বেলা (তাহাজ্জুদের নামাজে) তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো।

إِنَّ هَؤُلَاء يُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءهُمْ يَوْمًا ثَقِيلًا

নিশ্চয় এই অবিশ্বাসীরা পার্থিব জীবনকে (অত্যাধিক) ভালোবাসে এবং এক কঠিন দিবসকে তাদের পশ্চাতে ফেলে রাখে।

نَحْنُ خَلَقْنَاهُمْ وَشَدَدْنَا أَسْرَهُمْ وَإِذَا شِئْنَا بَدَّلْنَا أَمْثَالَهُمْ تَبْدِيلًا

আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাদের গঠন সুদৃঢ় করেছি। আর আমি যখন ইচ্ছা করবো, তাদের পরিবর্তে তাদের অনুরূপ অন্য এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবো।

إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَن شَاء اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا

নিঃসন্দেহে এটা (অর্থাৎ আল্‌-কুর্‌আনের এই আয়াত) একটা উপদেশ; অতএব যার ইচ্ছা হয় সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।

وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

তবে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমাদের কোনো অভিপ্রায়ই বাস্তব রূপ নেবে না। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।

يُدْخِلُ مَن يَشَاء فِي رَحْمَتِهِ وَالظَّالِمِينَ أَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ ও অনুকম্পার অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে জালিমদের (অর্থাৎ অবিশ্বাসী, পৌত্তলিক ও পাপাচারিদের) জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন মর্মন্তুদ শাস্তি। 

ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম  

No comments:

Post a Comment