আশ্আব ও তাঁর কৃপণ বন্ধু
আবুল্ ফারাজ আল্-আস্ফাহানী
আশ্আব
বর্ণনা করেছেন, বলেছেন— আমির বুন্ লুয়াই বংশের এক
ব্যক্তি মদিনার শাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কৃপণ এবং চরম সংকটময়
জীবন যাপনে অভ্যস্থ। সেই সাথে আমার প্রতি ভীষণই দুর্বল, সবই আল্লাহ্র
কৃপা, দিনরাত আমার খোঁজ করতেন, আমাকে সঙ্গে
রাখতেন। আমি কখনো তাঁর থেকে দূরে কোথাও চলে গেলে বা পালিয়ে গেলে একেবারে পুলিশ
নিয়ে আমার বাড়ি হাজির হতেন। আমি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে থাকতাম, তাঁর কাছ থেকে আমাকে ডেকে পাঠাতেন। অতঃপর আমাকে অনুরোধ
করতেন, আমি যেন তাঁকে মজার মজার গল্প শোনাই, তাঁকে একটু হাসাই, তাঁর মনোরঞ্জন করি। তবে একবার
আরম্ভ করলে আমি আর চুপ হওয়ার সুযোগ পেতাম না, না তিনি
ঘুমোতে যেতেন, না আমাকে কিছু খেতে দিতেন আর না কোনো পারিশ্রমিক দিতেন। ফলে
আমি তাঁর জন্য চরম বিপদে পড়েছিলাম এবং ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে হজ্জের
মরসুম চলে আসলো। তিনি আমাকে বললেন— আশ্আব, আমার সাথে (হজ্জে) চলো। আমি বললাম— আমার মা বাবা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক! আমি অসুস্থ, তাছাড়া এবার আমার হজ্জের কোনো
পরিকল্পনা নেই। তিনি বললেন— তুমি যাবে না, তোমার বাপ যাবে।
আরও বললেন— নিঃসন্দেহে কা’বা অগ্নিগৃহ, যদি তুমি আমার সাথে না যাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ফিরে আসা
পর্যন্ত কারাগারে বন্দী করে রাখবো। ফলে আমি তাঁর সাথে বেরোতে বাধ্য হলাম। চলতে
চলতে আমরা এক জায়গায় অবতরণ করলাম। তিনি জাহির করলেন, তিনি রোজা
রেখেছেন। তারপর আমি ব্যস্ত হয়ে পোড়া পর্যন্ত তিনি ঘুমোতে যাওয়ার ভান করতে লাগলেন।
অতঃপর উঠে পাথেয়তে যা কিছু ছিল সবই খেয়ে ফেললেন। এবং তাঁর দাসকে আদেশ দিলেন, আমাকে লবণ দিয়ে দুটো রুটি খাওয়ানোর। আমি ফিরে এলাম, আমি জানতাম, তিনি রোজা আছেন, মাগ্রিবের (সূর্যাস্তের) অপেক্ষা করতে লাগলাম, তাঁর সাথে
আমিও ইফ্তার (নাশ্তা) করবো। অতঃপর যখন মাগ্রিবের
নামাজ সম্পন্ন হল, আমি তাঁর দাসকে জিজ্ঞেস করলাম— খাবারে কী কী আছে? সে বলল— তিনি তো অনেক
আগেই খেয়ে নিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম— তিনি রোজা ছিলেন না? বলল— না। বললাম— আমি কি তাহলে না খেয়ে থাকবো! বলল— না, না। তিনি আপনার জন্য খাবারের
ব্যবস্থা করেছেন। আপনি খেয়ে নিন। অতঃপর সে আমাকে দুটো রুটি এবং একটু লবণ বের করে
দিলো। আমি তাই খেলাম। কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। অতঃপর সকালে
আমরা আবার যাত্রা আরম্ভ করলাম। দীর্ঘক্ষণ চলার পর এক জায়গায় অবতরণ করলাম।
অবতরণ করে তিনি তাঁর দাসকে বললেন— যাও আমাদের জন্য এক দিরহাম দিয়ে মাংস কিনে আনো। সে কিনে
আনল। তিনি বললেন— আমাদের জন্য কিছুটা কাবাব
বানাও। সে তাই করলো। তিনি তা খেলেন। তারপর হাঁড়ি চাপাল। যখন হাঁড়ির মাংস টগবগ করে
ফুটতে লাগলো, বললেন— আমার জন্য এক অঞ্জলি মাংস বার
করো। সে তাই করলো। তিনি পুরোটা খেলেন। তারপর বললেন— এবার তাতে
একটু লঙ্কা ও লবণগুড়ো মেশাও এবং তার একটু আমাকে দাও। সে তাই করলো। তারপর তিনি
বললেন— এবার তাতে মশলা মিশিয়ে আমাকে দাও। সে তাই করলো। আমি বসে বসে
সবই দেখছিলাম। তিনি একবারও আমাকে ডাকলেন না। যখন তাঁর খাওয়াদাওয়া শেষ হল, দাসকে বললেন— এবার আশ্আবকে খাওয়াও। এবং আমার
দিকে দুটো রুটি ছুঁড়ে দিলেন। তা নিয়ে আমি হাঁড়ির কাছে গেলাম। দেখলাম, তাতে হাড় ও ঝোল বাদে আর কিছুই নেই। আমি তা-ই দিয়ে রুটি দুটো খেলাম।
তারপর তিনি তাঁর একটা থলে বার
করলেন। তাতে কিছু ড্রাই ফ্রুটস ছিল। সেখান থেকে এক মুঠ নিয়ে প্রায় সবটাই খেয়ে
ফেললেন। শুধু ক’টা খোসা যুক্ত বাদাম অবশিষ্ট ছিল। এবার তাঁর আর কোনো বাহান
খাটল না, বাধ্য হয়ে তা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন। আর বললেন— আশ্আব তুমি এটা খেয়ে নাও। আমি তার থেকে একটা বাদাম ভাঙ্গতে
গেলাম; কিন্তু বাদামটা ভাঙল না, উল্টে আমার
মাড়ির দাঁতের একটা অংশ ভেঙ্গে থুপ করে সামনে পড়লো। এরপর আমি বাদাম ভাঙ্গার জন্য
একটা পাথরের সন্ধান করতে করতে একটু দূরে চলে গেলাম। একটা পাথর পেয়েও গেলাম। তা
দিয়ে খুব জোরে বাদামটার উপর বাড়ি মারলাম, আল্লাহ্ই ভালো জানেন কত জোরে
মেরেছিলাম, বাদামটা ছিটকে বহু দূরে চলে গেলো। আমি দ্রুত তার খুঁজে
ছুটলাম। আমি খোঁজাখুঁজি করছিলাম এরই মধ্যে সেখানে মুস্’আবের
বংশধরেরা উঁচু ভূমির গা বেয়ে তাল্বিয়া পাঠ করতে করতে হাজির হলেন। তাঁদেরকে দেখে
আমি চিৎকার করে উঠলাম— আমাকে বাঁচাও, আমাকে রক্ষা করো। আমি আল্লাহ্র আশ্রয় চাইছি, অতঃপর তোমাদের সাহায্য চাইছি। হে জুবায়েরে বংশধরেরা, আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে চলো, আমাকে উদ্ধার
করো। আমার আওয়াজ পেয়ে তাঁরা ছুটে আসলো। আমাকে দেখে বলল— আশ্আব কী
ব্যাপার, তুমি এখানে! এ কী অবস্থা তোমার?
বললাম— আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।
আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করো। তাঁরা আমাকে তুলে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে
গেলো। আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম, খিদে পেলে পাখীর ছানারা মা’কে দেখে যেমনটা করে। তাঁরা
জিজ্ঞেস করলো— কী হয়েছে? বললাম— এখন কোনো কথা বলতে পারবো না।
তোমাদের কাছে যা আছে আগে আমাকে কিছু খাওয়াও। আমি তিন ধরে না খেয়ে প্রায় মরতে
চলেছি। তাঁরা আমাকে খাওয়ালেন। খেয়েদেয়ে খানিকটা প্রাণ ফিরে পেলাম। এরপর তাঁরা
আমাকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে গেলেন। তারপর আমাকে বললেন— এবার বলো, কী হয়েছে? আমি আমার পুরো কাহিনীটা
তাঁদেরকে শোনালাম। আমার ভেঙ্গে যাওয়া দাঁতটা দেখালাম। তাঁরা হো হো করে হাসতে
লাগলো। কেউ কেউ তালি বাজাতে লাগলো। আর বলল— তুমি কীভাবে এই লোকের পাল্লায়
পড়েছিলে? এ তো পৃথিবীর
সবচেয়ে বড় বখিল। এর মতো ছোট মনের দ্বিতীয় কেউ নেই। অতঃপর আমি তাঁর থেকে মুক্তির
প্রতিজ্ঞা করলাম। স্থির করলাম, যতদিন তিনি মদিনার শাসক থাকবেন আমি মদিনায় ফিরবো না। এবং
তাঁর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই আমি মদিনায় ফিরেছিলাম।
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
أشعب
والبخيل
أبو الفرج الأصفهاني
حدّث أشعب
فقال: ولي المدينة رجل من ولد عامر بن لؤي، وكان أبخل الناس وأنكدهم، وأغراه الله
بي يطلبني في ليله ونهاره، فإن هربت منه، هجم على منزلي بالشرطة، وإن كنت في موضع
بعث إلى من أكون معه أو عنده يطلبني منه، فيطالبني بأن أحدّثه وأضحكه، ثم لا أسكت
ولا ينام، ولا يطعمني ولا يعطيني شيئاً، فلقيت منه جهداً عظيماً وبلاء شديداً.
وحضر الحج، فقال لي: يا أشعب كن معي. فقلت: بأبي أنت وأمي، أنا عليل، وليس لي نية
في الحج. فقال: عليه وعليه.
وقال: إن
الكعبة بيت النار، لئن لم تخرج معي لأودعنك الحبس حتى أقدم. فخرجت معه مكرهاً، فلمّا
نزلنا المنزل، أظهر أنه صائم ونام حتى تشاغلت، ثم أكل ما في سفرته وأمر غلامه أن
يطعمني رغيفين بملح، فجئت وعندي أنه صائم، ولم أزل أنتظر المغرب أتوقع إفطاره، فلمّا
صُليتْ المغرب قلت لغلامه: ما يُنتظر بالأكل؟ قال: قد أكل منذ زمان؟ قلت: أولم يكن
صائماً؟ قال: لا! قلت: أفأطوي أنا. قال: قد أعدّ لك ما تأكله فكل،
وأخرج إليّ الرغيفين والملح، فأكلتهما، وبتّ ميتاً جوعاً، وأصبحت فسرنا حتى نزلنا
المنزل.
فقال
لغلامه: ابتع لنا لحماً بدرهم، فابتاعه، فقال: كبّب لنا قطعة، ففعل، فأكله ونصب
القدر، فلما نغرت. قال: أغرف لي منها قطعاً ففعل، فأكلها، ثم قال: أطرح فيها دقة
وأطعمني منها، ففعل، ثم قال: ألق توابلها وأطعمني منها، ففعل، وأنا جالس أنظر إليه
لا يدعوني؟ فلمّا استوى اللحم كله قال: يا غلام أطعم أشعب. ورمى إليّ برغيفين.
فجئت إلى القدر وإذا ليس فيها إلا مرق وعظام، فأكلت الرغيفين.
وأخرج له
جراباً فيه فاكهة يابسة، فأخذ منها حفنة فأكلها، وبقي في كفه لوز بقشره، ولم يكن
فيه حيلة، فرمى به إليّ وقال: كل هذا يا أشعب .فذهبت أكسر واحدة منها، فإذا بضرسي قد انكسرت منه
قطعة فسقطت بين يدي، وتباعدت أطلب حجراً أكسره به، فوجـدته فضربت بـه لـوزة،
فطفـرت يعلم الله مقدار رمية حجر، وعدوت في طلبها، فبينما أنا كذلك إذ أقبل بنو
مصعب يلبون بتلك الحلوق الجهورية، فصحت بهم الغوث الغوث، العياذ بالله وبكم، ياآل
الزبير ألحقوني أدركوني. فركضوا إليّ فلما رأوني قالوا:
أشعب، مالك؟ ويلك!
قلت: خذوني وتخلصوني من الموت. فحملوني معهم، فجعلت أرفرف بيدي، كما يفعل الفرخ إذا طلب الزق من أبويه. فقالوا: ما لك ويلك! قلت: ليس هذا وقت الحديث، زقّوني مما معكم، فقد متّ ضرا وجوعا منذ ثلاث. قال: فأطعموني حتى تراجعت نفسي، وحملني معهم في محمل ثم قالوا: أخبرنا بقصتك. فحدثتهم وأريتهم ضرسي المكسورة، فجعلوا يضحكون ويصفقون. وقالوا: ويلك من أين وقعت على هذا؟! هذا من أبخل خلق الله وأدنئهم نفسا. فحلفت بالطلاق أني لا أدخل المدينة ما دام بها سلطان. فلم أدخلها حتى عُزل.
No comments:
Post a Comment