৬৫) সূরাতু আত়্-ত়ালাক় (বিবাহ-বিচ্ছেদ)
بِسْمِ
اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاء
فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ
رَبَّكُمْ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِن بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَن
يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن يَتَعَدَّ
حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ
بَعْدَ ذَلِكَ أَمْرًا
হে নবী
(মুহাম্মদ সাঃ), তোমরা (অর্থাৎ তুমি বা তোমার কোনো অনুগামী) যখন (তোমাদের) স্ত্রীদেরকে
তালাক দেবে, তাদের ইদ্দতের (অর্থাৎ ঋতুচক্রের বিষয় ও সময়সীমার) প্রতি লক্ষ্য রেখেই
তাদেরকে তালাক দেবে এবং (তাঁদের) ইদ্দতের সম্পূর্ণ হিসেব রাখবে। আর তোমরা তোমাদের
পালনকর্তা মহান আল্লাহকে সব ক্ষেত্রেই ভয় করে চলবে। তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দেবে না এবং তারা
নিজেরাও যেন চলে না যায়; তবে তারা যদি কোনো স্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয় (তাহলে
হয় তারা নিজেরাই চলে যাবে আর না হয় তোমরা তাদেরকে বের করে দেবে)। এগুলো আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত
সীমারেখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র
নির্ধারিত সীমারেখা লংঘন করবে সে নিজেই নিজের অনিষ্ট করবে। কেননা, তুমি তো জানো না, হয়তো আল্লাহ্
এই তালাকের পরে কোনো নতুন উপায় বের করে দেবেন (যার দ্বারা তোমাদের মাঝের দূরত্ব
ঘুচে যাবে এবং তোমরা আবার পরস্পরের প্রতি আগ্রহী ও আকৃষ্ট হয়ে পড়বে)।
فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ
بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ
وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ ذَلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
অতঃপর তারা যখন
তাদের ইদ্দতের নির্ধারিত সময়সীমায় পৌঁছে যাবে, তখন হয় তোমরা তাদেরকে উপযুক্ত ও
উত্তম পন্থায় রেখে দেবে নয়তো উপযুক্ত পদ্ধতিতে ছেড়ে দেবে এবং (তোমরা ছেড়ে দেওয়া বা
রেখে দেওয়া যে কাজটিই করবে তার জন্য) তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন
নির্ভরযোগ্য, সৎ ও বিশ্বস্তলোককে সাক্ষী রাখবে। আর তোমরা নিজেরাও আল্লাহর উদ্দেশ্যে
সাক্ষ্য দেবে। এসব কথা বলে তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে, তাদেরকে
উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। (মনে রাখবে) যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহ তার নিষ্কৃতি ও
পরিত্রাণের পথ করে দেন।
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَن
يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ
جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
এবং তার জন্য
জীবিকার ব্যবস্থা করেন এমন জায়গা ও উৎস থেকে, যে জায়গা ও উৎস থেকে জীবিকা লাভের
কল্পনাও সে করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহ্ তার জন্য যথেষ্ট।
আল্লাহই তার সব কাজ ও ইচ্ছা পূর্ণ করে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর জন্যই নির্দিষ্ট
পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن
نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي
لَمْ يَحِضْنَ وَأُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
তোমাদের স্ত্রীদের
মধ্যে যাদের আর ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই (অর্থাৎ যাদের বয়স হয়ে গেছে আর ঋতুচক্র হয়
না), (বিবাহ বিচ্ছেদের পর) তাদের (ঋতুচক্রের) ব্যাপারে সন্দেহ
হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুচক্রের বয়সে পৌঁছোয়নি, তাদেরও অনুরূপ (অর্থাৎ তিন মাস) ইদ্দত কাল হবে। আর গর্ভবতী নারীদের
ইদ্দত কাল হল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যারাই (নারী হোক বা পুরুষ) আল্লাহকে ভয় করে
(অর্থাৎ তাঁর বিধান ও অনুশাসন মেনে চলে), আল্লাহ তাদের কাজ সহজ করে দেন।
ذَلِكَ أَمْرُ اللَّهِ أَنزَلَهُ إِلَيْكُمْ وَمَن
يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا
এটাই আল্লাহর
নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে
ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহা মূল্যবান পুরস্কারে
পুরস্কৃত করেন।
أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ
وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ
فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ
فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ
فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَى
(বিছেদের পর)
তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যে গৃহে তোমরা বাস করো, বসবাসের জন্য সেই রকম গৃহে তাদেরকেও
স্থান প্রদান করো। তাদেরকে কষ্ট
দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। আর যদি তারা গর্ভ ধারণ করে থাকে, তবে সন্তান প্রসব
করা পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান
করে (অর্থাৎ দুধ পান করায় এবং লালন করে), তাহলে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক
দেবে এবং এ বিষয়ে পরস্পরে সংযত ভাবে পরামর্শ ও আলাপআলোচনা করবে। তবে (স্তন্যদান বা
লালনপালন বা পারিশ্রমিক কোনো বিষয়ে) তোমরা যদি পরস্পরে বিতর্ক এবং জেদাজেদি করো
তাহলে অন্য কোনো নারী (সেই শিশুকে) স্তন্য দান করবে।
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ
عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ
نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
(এবং অমন
শিশুর ক্ষেত্রে) বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। তবে যে ব্যক্তিকে
সীমিত জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়েছে, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে (সাধ্য মতো) ব্যয় করবে। আর আল্লাহ যে ব্যক্তিকে যতটুকু
অর্থসম্পদ দিয়েছেন, তাকে তার চেয়ে বেশী ব্যয় করার আদেশ করেন না। আল্লাহই কষ্টের পর
সুখ দেবেন।
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ عَتَتْ عَنْ أَمْرِ
رَبِّهَا وَرُسُلِهِ فَحَاسَبْنَاهَا حِسَابًا شَدِيدًا وَعَذَّبْنَاهَا عَذَابًا نُّكْرًا
(অতীতে) বহু জনপদ
তাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণের আদেশ অমান্য করেছিল (যাঁদেরকে
তিনি নিজ বিধান ও বার্তা দিয়ে তাদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন); ফলে আমি কঠোর
ভাবে তাদের হিসেনিকেশ করেছি এবং তাদেরকে ভীষণই কঠিন রকম শাস্তি দিয়েছি।
فَذَاقَتْ وَبَالَ أَمْرِهَا وَكَانَ عَاقِبَةُ
أَمْرِهَا خُسْرًا
অতঃপর তারা (অর্থাৎ
ওই জনপদগুলির অধিবাসীরা) তাদের (অসৎ) কর্মের শাস্তি আস্বাদন করল। আর তাদের সেই সব
অবাধ্যতা ও অসৎ কর্মের পরিণাম চরম ক্ষতি ও কঠোর শাস্তি বৈ কিছুই হতে পারে না।
أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا فَاتَّقُوا
اللَّهَ يَا أُوْلِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ آمَنُوا قَدْ أَنزَلَ اللَّهُ
إِلَيْكُمْ ذِكْرًا
কেননা মহান আল্লাহ্
তাদের জন্য তীব্র যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন। অতএব হে বিবেকবান লোকেরা তোমরা যারা
(আল্লাহ্র প্রতি) ঈমান এনেছো (এবং অন্যান্য বিষয়গুলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছো), তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। মহান আল্লাহ্ই তোমাদের প্রতি (এই)
উপদেশ (অর্থাৎ মহাগ্রন্থ আল্-কুর্আন) অবতীর্ণ করেছেন।
رَّسُولًا يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِ اللَّهِ
مُبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنَ
الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا
يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
أَبَدًا قَدْ أَحْسَنَ اللَّهُ لَهُ رِزْقًا
(এবং তোমাদের
নিকট প্রেরণ করেছেন) একজন রাসূল (বা বার্তাবাহক), যিনি তোমাদের
কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (অর্থাৎ নিদর্শনাবলী) পাঠ (ও বর্ণনা) করেন, যাতে তিনি বিশ্বাসী ও সৎ কর্মপরায়ণ লোকেদের অন্ধকার থেকে আলোর
পথে নিয়ে আসতে পারেন। আর যারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম সম্পাদন
করে, মহান আল্লাহ্ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে (নানা ধরণের) নদীনালা প্রবাহিত, সেখানে তারা
চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ্ তাদেরকে উত্তম জীবিকা প্রদান করবেন।
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ
الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ
اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ
عِلْمًا
আল্লাহ্ই সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও (সৃষ্টি করেছেন) সেই রকম করে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পারো যে, আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এবং সবকিছুই তাঁর গোচরীভূত।
ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
No comments:
Post a Comment