Wednesday 1 June 2022

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ আবু নুওয়াসের শেষের কবিতা

 


 
আবু নুওয়াসের শেষের কবিতা
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
আবু নুওয়াস। আব্বাসী যুগের একজন বিখ্যাত আরবি কবি। প্রকৃত নাম আল্‌-হাসান বিন্‌ হানী। জন্ম আল্‌-আহ্‌ওয়াজে ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আর মৃত্যু বিখ্যাত বাগদাদ নগরীতে ৮১৪ খ্রিস্টাব্দে। গোলাপের শহর বাসরাতে লালিতপালিত হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছে বাগদাদে। খলীফা হারুন আল্‌-রাশীদ ও পুত্র মামুন আল্‌-রাশীদ এবং অত্যন্ত প্রতিভাধর আল্‌-বারামিকাহ্‌ পরিবারের কাছের মানুষ ছিলেন তিনি।
 
তাঁর কবিতায় অশ্লীল ও অশালীন উপজীব্য প্রচুর। মদের বিবরণে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাই তাঁকে শায়েরুল খামর বা মদের কবি বলা হয়। তাঁর কাব্যিক উপাদান ও স্বেচ্ছাচারিতা সহ নানা কারণে অনেকে তাঁর প্রচুর সমালোচনা করেছেন। বহু সমকালীন বিদ্বান ও ওলামা তাঁর সম্পর্কে কুফ্‌র ও নাস্তিক্যবাদের অভিযোগও তুলেছেন। তিনি তাঁর একটি কবিতায় লিখেছেন

دع المساجد للعبّاد تسكنها       وطُف بنا حول خَمَّار لِيُسقينا
ما قال ربُكَ ويلٌ للذين سَكروا    ولكنه قال ويلٌ للمُصلينَا

মসজিদ আবিদ ও উপাসকদের জন্য রেখে দাও। তুমি আমাদের নিয়ে চলো কোন পানশালায়
যাতে সাকী আমাদের পান করায় উতকৃষ্ট সুরা।
প্রভু তো কোথাও বলেননিউন্মাদদের জন্য দুর্ভোগবরং তিনি বলেছেন, দুর্ভোগ নামাজিদের জন্য!
 
তাঁর কবিতায় এধরণের অনেক কথাই পাওয়া যায়। কোথাও ব্যঙ্গাত্মক স্বরে তো কোথাও স্বচ্ছাচারিতার দরুন। আর তাঁর এধরণের কাব্যকবিতার জন্যই একসময় খলিফা হারুন আল্‌-রাশীদ তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফরমান জারি করেন। অতঃপর যখন কবিকে আত্মপক্ষ আলোচনা ও ডিফেন্সের অবকাশ দেওয়া হয়কবি বলেন ইয়া আমিরাল্‌ মুমেনী (অর্থাৎ হে বিশ্বাসীদের নেতা ও শাসক)কবিরা তাঁদের কবিতায় এমন অনেক কথা বলে থাকে যা তাঁরা বিশ্বাস করে না বা যে কাজগুলো তাঁরা নিজেরা করেন না। তাঁর এমন যুক্তি ও কথা শুনে খলিফা তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
 
পরবর্তীতে যখন তাঁর মৃত্যু হল। তাঁর কাব্যিক উপজীব্য, স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন ও মাদকাসক্তির দরুন সমকালীন বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ইমাম শাফেয়ী (রাহঃ) তাঁর জানাযার নামাজ পড়াতে অমত প্রকাশ করেন। কিন্তু কবিকে গোসল করাতে গিয়ে লোকেরা তাঁর পোশাকের ভেতর ছোট্ট একটি চিরকুটে লেখা একটা কবিতা পেলোযা তিনি মৃত্যুর পূর্বে লিখেছেন বলে অনেকের অনুমান। তিনি ওই কবিতায় বলেছেন— 

يا رب إن عظُمت ذُنُوبي كَثرةً   فقد علمتُ بأن عفوك أعظم
إن كان لا يرجوك إلا مُحسِنٌ    فبمن يلوذُ ويستَجِيرُ المُجرِمُ
أدعوك ربي كما أمرت تَضرُعاً   فإذا رَدَدتّ يدي فمن ذَا يَرحمُ
مالي إليك وسيلةٌ إلا الرَجَا       وجَميلُ عَطفِكَ ثم إني مُسلِمُ

প্রভু
আমার পাপ অনেক, আমার গুনাহ একেবারে পর্বতসম। তবে আমি জানিতোমার ক্ষমা তারচেয়ে অনেকঅনেক বেশি।
যদি শুধু সৎ ও ভালো লোকেরাই তোমার কাছে করুনা আশা করবেতাহলে আমরা পাপীরা কার নিকট আশ্রয় চাইবোকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো?!
প্রভুতুমি যেমন আদেশ করেছোআমি বিনয়ী হয়ে তোমাকে ডাকছিযদি তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দাওতাহলে কে আমার প্রতি রহম করবে!
তোমার কাছে চাওয়ার জন্য আমার নিকট কোনো উল্লেখযোগ্য ওসিলা বা মাধ্যম নেইতোমার প্রতি আস্থাআশা ও তোমার অশেষ অনুগ্রহ ছাড়া। তাছাড়া প্রভুআমি তো মুসলিমতোমার অসীম ক্ষমতাপ্রভুত্ব ও অনুগ্রহে বিশ্বাসী।
 
তাঁর এই লাইনগুলো পড়ার পর ইমাম শাফেয়ী (রাহঃ) অঝোরে কাঁদতে আরম্ভ করেনসেই সাথে উপস্থিত লোকজনও কাঁদতে আরম্ভ করে। অতঃপর সকলে মিলে তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করে তাঁকে সমাধিস্থ করেন— রাহেমাহুল্লাহ্‌ (মহান আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি করুণা করুক), আমীন!

No comments:

Post a Comment