কলেরা
নাযিক আল-মালায়িকা
অনুবাদঃ কাজী মাকিন
[কবি পরিচিতিঃ ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৩শে আগস্ট ইরাকের
বাগদাদে জন্ম এই মহিলা কবির। আরবীতে স্নাতকের
পাশাপাশি সংগীতে আগ্রহের ফলে ডিগ্রী করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য
আমেরিকায় গিয়ে ইংরাজি, ফরাসি, ল্যাটিন
ও জার্মান ভাষাতেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কর্ম জীবনে বাগদাদ,
বসরা ও কুয়েতের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
মাত্র
দশ বছর বয়সে কবিতা লেখার সূচনা। অনেকেই তাকে মুক্ত
ছন্দ কবিতার পথিকৃৎ মনে করেন। তার লেখায় শেক্সপীয়ার,
শেলি, বায়রন,আলী মাহমুদ তহা,
ইলিয়া আবু মাদ্বী প্রমুখের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পারকিন্সন
রোগে আক্রান্ত হয়ে কবি ৮৪ বছর বয়সে ২০০৭ সালে কায়রোয় মৃত্যুবরণ করেন।
অনুদিত
কবিতাটি আরবী সাহিত্যের প্রথম মুক্ত-ছন্দ কবিতা হিসাবে
গণ্য করা হয়। ১৯৪৭ সালে মিশরে ঘটিত মহামারী কলেরায় মর্মান্তিক মৃত্যুমিছিল
চাক্ষুষ করে কবির বেদনার বহিঃপ্রকাশ এই কবিতা।]
রাত্রি নিঃস্তব্ধ
ওই শোনো হাহাকারের প্রতিধ্বনি
নিশ্ছিদ্র অন্ধকার, মৃত্যু
কঠিন নীরবতায়
ভেসে বেড়ায় সকরুণ চিৎকার
তীব্র দুঃখে ছারখার হয় সব
যেথা প্রতিহত হয় আর্ত অনুরণন
প্রতিটি হৃদয়ে ফুটন্ত নীর
দুঃখ-দগ্ধ আজ শান্ত
কুটীর
অন্ধকার বিদীর্ণ ক’রে
চারিদিকে
আত্মার বুকফাটা ক্রন্দন
আর সকরুণ বিলাপধ্বনি
যাকে ছিন্নভিন্ন করে যায় মৃত্যু—
মৃত্যু, মৃত্যু আর
মৃত্যু!
শোনো আর্ত নীলের দীর্ঘশ্বাস,
মৃত্যুর এ কী পরিহাস!
ফুটল নতুন ভোর
ওই শোনো! মন দিয়ে
পথিকের পদধ্বনি শোনো
ভোরের নীরবতায়;
ওই দেখো শোকের কাফেলাখানি
শ’য়ে শ’য়ে
মৃত্যু মিছিল
না, তুমি গুনবে
না
শুধু শোনো উৎকর্ণ হয়ে
অসহায় শিশুটির অবুঝ রোদন
শুধু নিষ্প্রাণ দেহ, কমে
যায় মানব
শুধু মৃতের সারি, বাঁচেনি
সময়
ছড়িয়ে থাকা লাশের উপর
আছড়ে পড়ে ক্রন্দিত প্রিয়জন
নেই ক্ষণিকের সান্নিধ্য
না আছে নীরবতা
আছে শুধু মৃত্যুর করাল থাবা—
মৃত্যু, মৃত্যু আর
মৃত্যু!
মানব আজ যন্ত্রণাকাতর
মৃত্যুর ভয়াল গ্রাস—কলেরায়;
দেহাংশ ভরা ভয়ের গুহায়
অনন্ত কঠিন নৈঃশব্দ মাঝে
যেথা মৃত্যুই হলো নিরাময়
জেগে উঠেছে সেথা মহামারী কলেরা
আতংক ছাপিয়ে যায় বুকের গভীরে
উপত্যকায় ভূলুণ্ঠিত আজ নির্মল আনন্দ
শুধু প্রাণের অস্থির উন্মাদ চিৎকার
চারিদিকে তার ‘অরণ্যে রোদন’
আর ফেলে যাওয়া প্রতিধ্বনি
অসংখ্য শবের সারি
কিষাণের গৃহমাঝে পাক খায়
কেবল মৃত্যু-বিলাপ—
মৃত্যু, মৃত্যু আর
মৃত্যু!
নির্মম কলেরার রূপ ধরে
যেন প্রতিশোধ নেয় মৃত্যু
উফ! নীরবতাও কী
দুঃসহ!
ভেসে আসে
শুধু আযানের ধ্বনি
শেষের শয্যা সাজাবে যে জন
সে নিজেই আজ শয়ান সেথায়
নেই, কেউ নেই;
আছে মসজিদ, চলে গেছে মুয়াযযিন
সে আজ নিয়েছে বিদায়
অচিরেই যার গুণ
গাওয়া হবে মুখে মুখে
বিলাপ আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া
বাকী নেই আর কিছু
আছে শুধু পিতামাতাহীন শিশুর
হৃদয়বিদারক কান্না
কোনো সন্দেহ নেই
কাল তাকেও লুফে নেবে
এ শয়তান আময়
ওহে বিসূচিকার শিকার
কেউ দয়া পেল না
নেই, কিছু নেই
আছে শুধু মৃত্যুর হাহাকার—
মৃত্যু, মৃত্যু আর
মৃত্যু!
ওগো মিশর
মোর হিয়া বিদীর্ণ আজি
মৃত্যুর নখরাঘাতে।।
No comments:
Post a Comment