Tuesday 28 June 2016

আবুল ওয়ালীদ আহমাদ ইবনু যায়দুন


আবুল্‌ ওয়ালীদ্‌ আহ়্মাদ ইব্‌নু যায়দুন  
(১০০৩ – ১০৭০ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
জন্ম ও পরিচয়ঃ
আব্বাসি খেলাফত ছিল আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ। সেই যুগের একজন বিখ্যাত স্পেনীয় সাহিত্যিক ছিলেন ইব্‌নু যায়দুন। তিনি একাদশ শতকের প্রথম ভাগে আরবি সাহিত্যের একজন অন্যতম সাধকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আহ্‌মাদ, উপনাম আবুল্‌ ওয়ালীদ। পিতার নাম ‘আব্দুল্লাহ্‌, পিতামহের নাম যায়দুন। তবে তিনি ইব্‌নু যায়দুন নামেই অধিক পরিচিত। ৩৯৪ হিজরি মোতাবেক ১০০৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ‘আব্দুল্লাহ্‌ ধর্মীয় শাস্ত্রে এবং সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন।
 
শিক্ষা ও জীবনঃ
সুপণ্ডিত পিতার সান্নিধ্য কবির জীবনের উপযুক্ত ভিত্তি গড়ে দেয়। তাছাড়া জ্ঞান-নগরী কর্ডোভায় তাঁর শিক্ষার কোনও অভাব হয়নি। নিজ পিতার কাছেই তাঁর বিদ্যাচর্চার শুরু। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্ডিতদের সাহচর্য তাঁর জ্ঞান ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করে। তাঁদের কাছে তিনি সাহিত্য ও নানাবিধ বিষয়ের পাঠ গ্রহণ করেন।      
 
প্রাথমিক জীবনে প্রেম সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তাঁকে অহেতুক কারাবরণ করতে হয়। খ্যাতনামা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে তৎকালীন বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌ম শত্রুদের প্ররোচনায় কারারুদ্ধ করেন। যাইয়্যাত সহ একাধিক ঐতিহাসিক মনে করেন, এটা ছিল কিছু সমকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী কবিসাহিত্যিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে।  
 
কর্মজীবনঃ
শিক্ষা-দীক্ষা শেষে আমাদের এই স্বনামধন্য কবি তৎকালীন বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌ম ইব্‌নু জাহ্‌ওয়ারের রাজদরবারে মন্ত্রী রূপে নিযুক্ত হন। ঘটনাচক্রে কারারুদ্ধ হলে রাজপুত্র আবুল্‌ ওয়ালীদের সহায়তায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সিভিলিতে রাজা মু’তামিদের দরবারেও মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
 
পরলোকগমনঃ
আব্বাসি যুগের ও মুসলিম স্পেনের এই স্বনামধন্য কবি ৪৬৩ হিজরি মোতাবেক ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে ইশ্‌বেলিয়ায় (সেভিলায়) ইহলোক ত্যাগ করেন।
 
কাব্য প্রতিভা ও রচনার বৈশিষ্টঃ
কাব্যরচনার পাশাপাশি তিনি গদ্য সাহিত্যেও যথেষ্ট সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। তাঁর কাব্যের সর্বাধিক লক্ষনীয় বিষয় হল তাঁর জাতীয়তাবোধ। অর্থাৎ তিনি প্রাচ্য সংস্কৃতির অনুকরণ ত্যাগ করে স্পেনীয় চিন্তাধারার বাহক হয়েছিলেন। প্রেমিকার মিলনে ব্যর্থ কবির সাহিত্যেও বিয়োগান্ত নিদর্শন বিদ্যমান। তাঁর কাব্য সাহিত্য সম্বন্ধে যাইয়্যাত মন্তব্য করেছেন, ইব্‌নু যায়দুনের কবিতা স্পেনীয় আবেগ ও অনুভূতির প্রকৃত ছবি ও চিত্রায়ন।
 
পাশাপাশি, তাঁর গদ্যও ছিল সূক্ষ্ম সারমর্ম বিশিষ্ট। তাতে ছন্দের কৃত্রিমতা বা ভাষার দুর্বোধ্য ভাব তেমন দেখা যায় না। খুবই কম ছিল। তবে তাঁর গদ্যে বর্ণনার অতিরঞ্জন লক্ষ্য করা যায়। তাঁর রচনা পদ্ধতি আল্‌-জাহিযের সঙ্গে অত্যাধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিখ্যাত সাহিত্যিক ইব্‌নুল্‌ ‘আমীদের ন্যায় প্রবাদ ও সংবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, কঠিন গদ্যের মধ্যে কবিতার সাদৃশ্য তাঁর রচনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট।
 
তিনি উৎকৃষ্টমানের ছন্দ-রচয়িতা ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্য সৃষ্টি আল্‌-কাসীদাতুন্‌ নূনিয়্যাহ্‌, প্রেমিকা ওয়ালাদাহ্‌ বিন্‌তু আল্‌-মুস্তাক্‌ফী-কে উদ্দেশ্য করে লেখা। সেই কবিতার প্রথম পঙক্তিটি হল—
أضحى التنائي بديلا من تدانينا     وناب عن طيب لقيانا تجافينا
 
তাঁর বিখ্যাত দু’টি গদ্য নিদর্শন হল— (ক) রিসালাতুন্‌ জিদ্দিয়্যাহ্‌, কারারুদ্ধ অবস্থায় নিজ নির্দোষিতা প্রমান করে বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌মকে উদ্দেশ্য করে এই রিসালাহ্‌ (চিঠি) লিখেছিলেন। (খ) রিসালাতুন্‌ হাযালিয়্যাহ্‌, নিজ প্রেমিকা ওয়ালাদাহ্‌র ভাষায় ইব্‌নু ‘আব্দুস-কে উপহাস করে এই রিসালাহ্‌ লিখেছিলেন। 

No comments:

Post a Comment