Wednesday 8 June 2016

জামীল সিদকী আজ-জাহাবীঃ আমার বুসাইনার প্রতি


আমার বুসাইনার প্রতি

জামীল স়িদ্‌ক়ী আজ়্-জ়াহাবী
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম


বুসাইনা, শত্রুরা আমার
গলা কাটুক বা গুলি করুক
তুমি ঘাবড়িয়ো না,
ধৈর্য ধরো আর মনে রেখো
স্বপ্নে আমাদের দেখা হবে

বিশ্বাস করো- বিপদের আনাগোনা 
কোন সম্ভ্রান্তের প্রতি শাপে বর হয়,
যদি সে ধৈর্য ধরে

তোমার প্রেমাস্পদকে, হে বুসাইনা!
কোনও বালুময় স্থানে রক্তাক্ত করে
যদি ঠেলে দেওয়া হয় মৃত্যুর পথে 
তুমি কেঁদো না, অশ্রু মুছে ফেলে
ধৈর্যের বর্মে নিজেকে মুড়ে নিও
আমি যে প্রথম নই;
যারাই নিজ জাতির উন্নতি চেয়েছে
অস্বীকার করেছে তাদের স্থবিরতাকে
আর সংগ্রাম করেছে
কুসংস্কার থেকে তাদের মুক্ত করার নিমিত্তে
তাঁরাই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে
আমার ও তাদের বাসনায় এ যে বিশাল ব্যবধান-
তাঁদের আমি বাঁচাতে চেয়েছি
আর তাঁরা চেয়েছে আমায় মারতে।
ধ্বংস হোক সে, যে ডেকে এনেছে
আমার তরে এ ঘোর বিপদ,
কবিসাহিত্যিকদের অভিসম্পাত হোক তার প্রতি!

জানো, এই ভূগর্ভে শুয়ে আছে অনেকে;
যদি প্রাণদণ্ডিত হই- এ পথে আমি একা নই।
চেয়ে দেখো উজ্জ্বল সূর্যের দিকে
তারও দীপ্তি অন্ধকারের চাদরে গা ঢাকা দেয়।
স্মরণ করো, বহুদিন সুখে কাটিয়েছি দুজনে
প্রণয়খেলাকে উপভোগ করেছি বহু দিন

তুমি তো জানো, প্রত্যেকেই ধ্বংসশীল।
তাই মৃত্যুর পরেও আমার অভিবাদন নিও;
তবে এ যাত্রায় যদি রক্ষা পাই
আত্মপ্রত্যয়ে সকল বিচ্যুতি বর্জন করবো,
অঙ্গীকার রইল।

অস্থির হয়ো না তুমি, হে বুসাইনা!
নির্দোষ মুক্তি পাবো- এ আমার নিটোল বিশ্বাস।

কবিতা প্রসঙ্গঃ
জামীল স়িদ্‌ক়ী আজ়্-জ়াহাবী প্রসিদ্ধ ইরাকী কবি। তিনি সারা জীবন মুক্ত চিন্তার চর্চা করেছেন। তার আল-মারআতু ওয়াদ-দিফায়ু আনহা’ (নারী ও তার প্রতিরক্ষা) শীর্ষক প্রবন্ধটি বিখ্যাত আল-মুয়াইয়াদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সারা ইরাকজুড়ে গণবিক্ষোভ আরম্ভ হয়। তৎকালীন প্রশাসন তাঁকে বন্দী করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। সেই সময় কবি নিজ স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে উক্ত কবিতাটি রচনা করেন।
[শব্দের মিছিল, অনুবাদ বিভাগ, জানুয়ারি ২০১৭-তে প্রকাশিত]


কবিতাটির সরল অনুবাদ নিম্নে প্রদত্ত হল—
ও বুসাইনা, যদি শত্রুরা মৃত্যুকে আমার  নিকটবর্তী করে দেয়, তারা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বা তরবারি দিয়ে আমাকে হত্যা করে;

তাহলে তুমি বিপদের সময় ধৈর্য ধরো আর বিশ্বাস রেখো আমি স্বপ্নে তমার সঙ্গে মিলিত হবো (আমাদের আবার দেখা হবে, গল্প হবে)

আর ধৈর্যই হল সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। যদি কোনও সম্ভ্রান্ত মহিলার উপর বিপদ আপতিত হয় তখন তার সম্মান বেড়ে যায়।

ও বুসাইনা, যদি তোমার জামীলকে ধ্বংস করে দেওয়া হয় রক্তাক্ত করে, এমনভাবে যে তার রক্ত প্রবাহিত হয় বালুময় উপত্যকার ভূমির উপর।

এই ধরণের বড় বিপদের জন্য তুমি ধৈর্যের বর্ম পরিধান করো আর (তোমার) গণ্ডদেশের দিয়ে প্রবাহিত অশ্রু মুছে ফেলো।

অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজ সম্প্রদায়ের অগ্রগতি ও উন্নতি কামনা করে বিপর্যস্ত হয়েছে এমন ব্যক্তি আমার জাতির মধ্যে আমিই প্রথম নই (বরং আমার পূর্বেও নিজ জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি চেয়ে একাধিক ব্যক্তি এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে)।

সেই ব্যক্তি তাদের জন্য গতিহীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাছাড়া সর্বদা তাদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করেছে।

আমি তাদের জন্য জীবন চেয়েছি আর তারা আমার জন্য মৃত্যু। তাদের ও আমার বাসনার মাঝে বিশাল ব্যবধান।

আব্দুল্লাহ ধংস হোক। সে আমার জন্য এই বিপদ ডেকে এনেছে। তার প্রতি অভিশাপ সকল লেখক কবিসাহিত্যিকদের পক্ষ থেকে।

যদি মৃত্যু বরণ করি (তাহলে জেনে রেখো) আমি একাই ভূগর্ভে সমাধিস্থ হবো না, বরং বহু সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ এই মাটিতে শুয়ে আছেন।

আর (এও মনে রেখো) সূর্য যদিও তা সর্বাধিক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, তারও আলো ক্ষীণ হয়ে পড়ে অন্ধকারের কারণে।

(স্মরণ করো) আমরা বহুদিন সন্তুষ্টি ও সুখের সহিত অতিক্রান্ত করেছি। আমরা উপভোগ করেছি প্রেম-ভালবাসা ও আসক্তিকে।

অতঃপর যদি আমি নিহত হই, (মন খারাপ করো না, জানোই তো) প্রত্যেক বস্তুই ধংসশীল। ও বুসাইনা, তোমার নিকট আমি আমার সালাম উপঢৌকন স্বরূপ প্রেরন করছি।

আর আমি যদি বেঁচে যাই, তাহলে (কথা দিচ্ছি) আমি আমার ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন হবো এবং নিজ পায়ে সুদৃঢ় ভাবে দাঁড়াবো।

বুসাইনা, তুমি অস্থির হয়ো না। আমি আমার নিষ্কৃতি ও সুপরিণতির ব্যাপারে নিশ্চিত এবং দৃঢ় বিশ্বাস।


جميل وبثين

جميل صدقي الزهاوي

[كان شاعر العراق جميل صدقي الزهاوي رجل الفكر الحر، ولأجل ذلك انتقده المسلمون شديدا وكرهوه كرها. ولما نشرت مقالته "المرأة والدفاع عنها" في مجلة "المؤيد" ظهر الخلاف وخرج الناس ضده في الطريق، حتى حبس وقضي بعقوبة الإعدام. فقال الشاعر هذه المنظومة يخاطب زوجه بثينه وسلّى بها يوم أصابته المحنة على أثر ما نشره في المؤيد عن المرأة المسلمة. الأدب العصري في العراق العربي، قسم المنظوم، ص-53، رفائيل بطئ]

 

أبثين إن أدنى العدو حمامي             بمسدس يذكيه أَو بحسامِ

فتجلدي عند الرزية واحسبي              أني اجتمعت إليك في الأحلام

والصبر أجدأ إن ألمّت نكبة             بكريمة ينمونها لكرام

أبثين إن أودى جميلك خابطاً            بدم له أهريق فوق رغام

فتدرعي للخطب صبراً وامسحي          من أَدمع فوق الخدود سجام

أَنا لست أول هالك في قومه             يَرجو تقدمهم مع الأقوام

يأبى لهم هذا الجمود ولا ينى             يَسعى لينقذهم من الأوهام

رُمتُ الحياة لهم وراموا مقتلي            شتّان بين مرامهم ومرامي

ويل لعبدالله جالب نكبتي                 ويل له من حاملي الأقلام

أَنا لست وحدي إن أمت رهن الثرى      كَم من كرام في التراب نيام

والشمس وهي أجلّ جرم بازغ             مقلوة أنوارها بظلام

عشنا زَماناً في بلهنية الرضى            متمتعين بألفة ووئام

فإذا قضيت وكل شيء هالك             فإليك أهدي يا بثين سلامي

ولئن أعش فسأنتهب من سقطتي         وأقوم منتصبا على الأقدام

لا تجزعي يا بثين إني واثق              ببراءتي وعواقب الأيام 



[1]

وفي بعض الروايات "بيراعتي" بدل "ببراءتي". 

No comments:

Post a Comment