Wednesday 22 June 2016

আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনু হানি


আবুল্‌ ক়াসিম মুহ়াম্মদ ইব্‌নু হানি   
(৯৩ – ৯৭৩ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 
পরিচিতি ও জন্মঃ
ইব্‌নু হানি একজন বিরল প্রতিভাধর স্পেনীয় কবি। পাশ্চাত্যের আরবি কবিগণের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি আব্বাসী যুগের অন্যতম কবি আল-মুতানাব্বীর সমকালীন ছিলেন, তাই তাঁকে মতানাব্বিউল্‌ গার্‌ব বা পাশ্চাত্যের মুতানাব্বী বলা হয়। প্রকৃত নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবুল্‌ কাসিম, পিতার নাম হানী, পিতামহের নাম সা’দূনতবে তিন ইব্‌নু হানি নামেই অধিক পরিচিত। তাঁর পিতাও কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর পিতার জন্ম আল্‌-মাহ্‌দিয়্যার কোনও এক গ্রামে হয়েছিল। বর্তমানে ওই অঞ্চলটি তিউনেসিয়ায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি স্পেনের আশবেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন। আর এখানেই কবি ইব্‌নু হানি ৩২৬ হিজরি মোতাবেক ৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন 
 
প্রতিপালনঃ  
তাঁর বাল্যজীবন খানিকটা ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় অতিবাহিত হয়; কখনও আশ,বেলিয়ায় আবার কখনও আল্‌-বিরাহ্‌তে। যেহেতু পিতা সাহিত্যিক ছিলেন, তিনি সন্তানকে সাহিত্য ও কাব্য শেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। আর তাই এই দুই শহরের বিভিন্ন পণ্ডিতের সান্নিধ্যে ইব্‌নু হানি কাব্য ও সাহিত্যে ঈর্ষনীয় বুৎপত্তি অর্জন করেন। আর সেই সুবাদে সেখানকার তদানীন্তন আমীর-ওমারাদের, শাসক ও গভর্নরদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন।
 
কর্মজীবনঃ  
তাঁর দর্শনতত্ত্বের জন্য তাঁর নিজ শহরের অধিবাসীগন তাঁর প্রতি বিরুপ ধারণা পোষন করা শুরু করেন। তাঁর প্রতি বিভিন্ন প্রকার অপবাদ লাগানো হয়। বাধ্য হয়ে তিনি মরক্কো যাত্রা করেন। অতঃপর আয্‌-যাব শহরে গিয়ে জাফর ও ইয়াহ্‌ইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কিছুদিন পর আবু তামীম মা’আদ বিন মান্‌সুর আল্‌-ফাতেমী তাঁকে ডেকে পাঠান। কবি সেখানে আল্‌-কির্‌ওয়ানের নিকটবর্তী আল্‌-মান্‌সুরিয়্যাহ্‌ প্রাসাদে অবস্থানকালে তাঁর প্রশংসায় এক অসাধারণ কবিতা রচনা করেন। এছাড়া তিনি জাওহার আস্‌-সাক্‌লী ও মুহাম্মদ বিন ‘উমার আশ্‌-শায়বানীরও প্রশংসা করেন। তবে ইব্‌নু হানীর স্পেন হতে মরক্কোয় স্থানান্তরের প্রকৃত কারণ কী সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিশাল বিতর্ক ও মতপার্থক্য রয়েছে।
 
মৃত্যুঃ  
৩৬ মতান্তরে ৪২ বছর বয়সে ৩৬২ হিজরীর রজব মাসে মোতাবেক ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। কথিত আছে যে, তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে শাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু সংবাদ আবু তামীম আল্‌-মু‘ইয্‌য-এর নিকট পৌঁছলে তিনি দুঃখ করে বলেন
هذا الرجل، كنا نرجو أن نفاخر به شعراء المشرق، فلم يقدر علينا ذلك.
(ইব্‌নু হানি এমন একজন কবি, আমরা আশা করেছিলাম আমরা তাঁর মাধ্যমে প্রাচ্যের সকল কবিকে পরাজিত করবো; কিন্তু, তা আর হল না।)
 
তাঁর কাব্য প্রতিভাঃ
কাব্যকবিতায় তাঁর বুৎপত্তির জন্যই প্রচলিত আছে যে কবি হলে ইব্‌নু হানীর মতো হও। এ মর্মেই বলা হয়ে থাকে—
إن تكن فارسا فكن كعلي                    أو تكن شاعرا فكن كابن هاني
(তুমি যদি অশ্বারোহী হতে চাও তাহলে ‘আলীর মতো হও। আর যদি কবি হতে চাও তাহলে ইব্‌নু হানীর মতো হও।)       
 
কারণ, তিনি অনন্য প্রতিভাবান কবি ছিলেন। তাঁর কবিতার মধ্যে মুতানাব্বীর সাহসিকতা, আবু তাম্মামের বর্ণনাভঙ্গী, বুহ্‌তারীর ভাব ও মা’আর্‌রীর দর্শন পাওয়া যায়। তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। তাঁর কবিতার উপজীব্য রূপে আমরা শোক, কুৎসা ও প্রশংসার আধিক্য লক্ষ করি। এছাড়া মরু অঞ্চলে ব্যবহৃত রূক্ষ শব্দসমূহের প্রয়োগ তাঁর কবিতায় লক্ষ করা যায়। ইব্‌নু খাল্লিকান তাঁর সম্পর্কে বলেছেন
ابن هانئ عند أهل المغرب كالمتنبي عند أهل المشرق
(প্রাচ্যবাসীদের কাছে যেমন মুতানাব্বী, ঠিক তেমনই পাশ্চাত্যবাসীদের কাছে ইব্‌নু হানী।)
 
তিনি তাঁর এক কবিতায় আল্‌-মু‘ইয্‌যু লে-দ্বীনিল্লাহ্‌-এর প্রশংসায় বলেছেন
أرياك أم نشر من المسك ضانك          ولحظك ام غضب الغرارين باتك
তাঁর একটি গযল কবিতায় তিনি বলেছেন
فتكات كرفك أم  سيوف أبيك               و كؤوس خمر أم مراشف فيك

No comments:

Post a Comment