মাদরাসাতুদ-দীওয়ান বা হারাকাতুদ-দীওয়ান
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি
মাদরাসাতুদ-দীওয়ান বা হারাকাতুদ-দীওয়ান (مدرسة الديوان، حركة الديوان) একটি সাহিত্য সংগঠন। আব্বাস
মাহমুদ আল-আক্কাদ, ইবরাহীম আল-মাযিনী ও আব্দুর রাহমান আশ-শুকরী-র
মিলিতপ্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত।আদ-দীওয়ানু ফিল-আদাবি ওয়ান-নাক্বদি (الديوان
في الأدب و النقد) সমালোচনামূলক গ্রন্থটির নামানুসারে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা
হয়। উক্ত গ্রন্থটি আক্কাদ ও মাযিনি যৌথভাবে ১৯২১ সালে প্রকাশ করেন। তবে আধুনিক
কবিতার স্বরূপ সম্বন্ধে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যানধারণার প্রকাশ এর বহু পূর্বে
১৯০৯ সালেই প্রকাশ পেয়েছিল। ফলে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই
এই আন্দোলন ও
ভাবধারার সূচনা হয়।
উদ্দেশ্যাবলী
মূলত শাওকি-হাফেয-মুতরান-রাফেয়িদের পরবর্তী প্রজন্মের
চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটানোর
নিমিত্তে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা। এর পাশাপাশি যে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি এই সংগঠনটি
গুরুত্ব আরোপ করেছিল তা হলো-
ক) জীবনের কোলাহল হতে মুক্ত হয়ে নিজস্ব ধ্যানধারণায় কবিতা
রচনা করা।
খ) একরকম ছন্দের সীমাবদ্ধতা ত্যাগ করে বিভিন্ন ছন্দে কবিতা
রচনার করা।
গ) দর্শন, চিন্তন ও ভাবের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা।
ঘ) কোনো বিষয়ের মৌলিকত্বের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা, সেই
সঙ্গে বাহ্যিক আড়ম্বর থেকে দূরে থাকা।
প্রভাব
আদ-দীওয়ানু ফিল-আদাবি ওয়ান-নাক্বদি হলো একটি সমালোচনা মূলক গ্রন্থ। এই গ্রন্থ প্রকাশে আক্কাদ
ও মাযিনি যৌথ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তবে দশটি খণ্ডে এটি প্রকাশ করতে চাইলেও দু’টির
বেশী প্রকাশ করে উঠতে পারেননি। এ গ্রন্থে প্রাচীন কাব্যরীতির সমালোচনা করা হয়েছে। এ
গ্রন্থেই আক্কাদ কবি
আহমাদ শাওকির কাব্যিক
ধ্যানধারণাকে নস্যাৎ করার প্রয়াস করেছেন। পাশাপাশি তাঁর রচনা শৈলীকেও আক্রমণ করেছেন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রাজনীতি ও সামাজিকতা-বিষয়ক তাঁর ও হাফিয ইবরাহিমের কবিতাগুলিকে বিভিন্ন কাব্যদোষে দুষ্ট আখ্যায়িত
করেছেন। আর দ্বিতীয় খণ্ডে মাযিনি মানফালুতির সমালোচনা করেছেন। তাঁর লেখন পদ্ধতিকে কটাক্ষ করেছেন। এমনকি তাঁর
দুর্বলতাগুলি প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন- “তিনি
(মানফালুতি) তাঁর রচনায় তাখান্নুস (স্বকীয়তাহীন, মেয়েলী)-র পথ অবলম্বন করেছেন।” (يتجه في
أدبه اتجاه التّخنُّث)।
তাঁদের এই ভাবধারায় বহু কবিসাহিত্যিক
প্রভাবিত হয়েছেন। যেমন- প্রবাসী কবি মিখাইল
নুয়াইমা, যিনি প্রবাসী সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তক- নিজ সমালোচনামূলক গ্রন্থ আল-গিরবাল (الغربال)–এ তাঁদের
পদ্ধতিতেই প্রাচীন কাব্যরীতিকে আক্রমণ করেছেন এবং তা হতে মুক্তির আহ্বান
জানিয়েছেন।
পতন
এই সাহিত্য প্রতিষ্ঠানটি যদিও বেশীদিন
স্থায়ী হয়নি তবে এর গভীর প্রভাব পড়েছিল সাহিত্য আন্দোলনের উপর, বিশেষভাবে নতুন প্রজন্মের কবিসাহিত্যিকদের উপর। এর কারণ হল- এর দুই প্রতিষ্ঠাতা মাযিনি ও শুকরির মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। মাযিনি অভিযোগ করেন যে, শুকরি কিছু ইংরেজি কবিতা চুরি করে নিজ দীওয়ানে সংকলন
করেছেন। তিনি সেগুলিকে নির্দিষ্ট করে তার উৎসও উল্লেখ করেন। অন্যদিকে শুকরিও নিজ
গ্রন্থ স্বানামুল-আলা‘য়িব (صنم الألاعيب)–এ তাঁর
সমালোচনা করেন। দু’জনের মধ্যে এই বিরোধিতা ক্রমশ তীব্র
আকার ধারণ করে। যার কারণে, শুকরি ও মাযিনি উভয়ে সাহিত্য সেবা ত্যাগ করেন। ফলে আক্কাদ একা হয়ে যান। এছাড়া শেষদিকে আক্কাদ নিজেও পূর্বের বহু ধ্যানধারণা ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি এই আন্দোলনে প্রায়
ত্রিশ বছর অতিক্রান্ত করেছেন। হয়তো সে কারণেই আধুনিক কবিতার সঙ্গীতমুখরতা তাঁকে মুগ্ধ
করতে পারেনি।
No comments:
Post a Comment