বদিউর রহমান
শরতের বৃষ্টিতে ভেজা
টুকটুকে লাল রঙন গোছার দিকে
ছোট্ট আঙুল তুলে
পরীর মত এক মেয়ে বলল
তার সেটা চাই।
ফুল আকর্ষণ করে, শুধু মানুষকে নয়;
প্রজাপতি রঙিন ডানা মেলে ঘোরে তার চারপাশে
মৌমাছি গান শুনিয়ে যায় গুনগুনিয়ে
অন্যান্য পতঙ্গও একাত্ম হতে চায় ফুলের সঙ্গে।
রূপের গরিমায় গরবিনী ফুল
পরম তৃপ্তিতে হাসে।
হাওয়ায় দোল খায় পরম সুখে,
লাল টুকটুকে রঙন থোকা।
ছোট্ট মেয়েটার আব্দার
তার চাই সে ফুল।
সে আব্দার দুর্নিবার
রঙনের গোছাটা দিলাম তুলে
পদ্মকুঁড়ির মত ছোট্ট করতলে।
ফুলের মধ্যে অদৃশ্য পিঁপড়ের দল
তুলতুলে নরম কচি হাত নিমেশে ক্ষতবিক্ষত
তীব্র দংশন জ্বালায়
অঝোর কান্নায় ভেসে যায় দু’চোখ।
অনেক যতনে শান্ত হল শিশু
ক্ষত সারল বেশ কিছুদিন পর।
আঠার বছরে তার যাওয়ার পর
আজ কেন ভেসে ওঠে সেই বেদনাবিদুর স্মৃতি?
কেন মুষড়ে যায় প্রাণ!
ব্যথায় টনটন করে বুক!!
তোমার যাওয়ার পর
দু-দুটো বর্ষা গেল
আকাশে মেঘের ঘনঘটা,
বিদ্যুতের ঝলসানি,
প্রবল কালবৈশাখীর পর
বৃষ্টি এলো ঝমঝমিয়ে
বারবার Macbeth-এ বর্ণিত পরিবেশ হল সৃষ্টি
মনে উদয় হলঃ ‘Where
shall we meet!’ কিন্তু,
তুমি আসনি।
কথা রাখনি।
মনে পড়ে কি তোমায় শুনিয়েছিলাম
‘We are seven’ কবিতাটা?
আমারও বিশ্বাস তুমি আছ বড় কাছাকাছি।
তোমার ঘাসের ঢিবিটার পাশে কতবার দাঁড়িয়েছি।
‘Nay, we are
seven’ কথাটার মতো
আমার কেন মনে হয়না ‘We are three!’
হয়তো কবিতার শিশুটার মতো নিষ্পাপ নই বলে।
যার উদ্দেশ্যে কবি বলেনঃ
‘What should
it know of death?’
আমি কিছুটা জানি –
মৃত্যু নিয়ে আসে অমোঘ চির বিচ্ছেদ।
আর একটা বিখ্যাত কবিতার উক্তি
‘Tell them; I came but nobody answered’ তুমিও জানতে
তোমার শিয়রে দাঁড়িয়ে কত কথা বলি
কোন উত্তর পাইনা।
ঐ উক্তিটা যে অত কঠিন বাস্তব হতে পারে
ভাবিনি কোন দিন।
দুই জগতের অভেদ্য, অমোঘ পার্টিশনের আড়ালে
একদিকে তুমি, অন্যদিকে আমি।
দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভাঙার অধীর অপেক্ষায়
তোমার দেখা পাওয়ার আশায়।
তোমার অভিমানের কথা শোনার অপেক্ষায় উদগ্রীব হ’য়ে
মহাকালের মুহূর্ত গুণে চলেছি।
No comments:
Post a Comment