আমাদের
“সোনে কি চিড়িয়া”-র নিশান এবার চাঁদের গায়ে। যদিও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চন্দ্রযান
২-এর বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযোগ এই মুহূর্তে
বিচ্ছিন্ন। ল্যান্ডারের
সঙ্গে ফের যোগাযোগের চেষ্টা এখনও সফল হয়নি। ইতিমধ্যে, বিক্রমকে
অরবিটার মডিউলের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠে দেখতে পাওয়া গিয়েছে এবং তার থার্মাল ইমেজও
তুলতে পেরেছে ল্যান্ডার। বিক্রমের
অবস্থা কী, তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে নাকি
সম্পূর্ণ অটুট রয়েছে- সে কথা এখনও অজানা।
চন্দ্রপৃষ্ঠে
নামার ঠিক আগ মুহূর্তে বিক্রমের সঙ্গে ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায়
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসরোর চেয়ারম্যান কে
শিবন। প্রধানমন্ত্রী তাকে বুকে
জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন। গণমাধ্যমে সেই ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়। নজরে আসে একটি
ইংরেজি পোর্টালের সিটিজেন জার্নালিস্ট ফাইজান
বুখারির। তিনি কাশ্মিরি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা তিনি জানেন। তাই ইস্রো
প্রধান শিবনকে একটি আবেগঘন চিঠি লেখেন—“প্রিয়জনের
সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা যে কতটা যন্ত্রণা ও কষ্টের, তা
আমি জানি। কেননা, আমি আমার চাঁদের (অর্থাৎ মা) সঙ্গে
যোগাযোগ করতে পারছি না”।
তিনি আরও লেখেন, “আপনি
ভাগ্যবান। তাই প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়েছেন। কিন্তু আমার
মতো হতভাগ্যকে দেখুন, পরিবার থেকে এক মাস ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার
পরেও কেউ সান্ত্বনা দিতে, সহমর্মিতা জানাতে এলো না। আমার মতো
মানুষদের জন্য একটি শব্দ পর্যন্ত খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী।”
অন্যদিকে
আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বাধীন কমিটি। ৩ কোটি এগারো লাখ ২১ হাজার ৪ জন অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন, আর ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭জন ওই তালিকায় স্থান পান নি। যদিও গতবছর
প্রকাশিত খসড়া এন আর সি তালিকায় প্রায় ৪১ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়েছিল। তার
মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ তালিকায় নাম তোলার জন্য পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন নি। এখন তাদেরকে বিদেশী
ট্রাইবুনালে আবেদন করতে হবে ১২০ দিনের মধ্যে।
সত্যিই
বড় অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে আমরা। একদিকে চাঁদে অভিযান চালিয়ে চাঁদের বুকে তেরঙ্গা
উড্ডীন করতে চলেছি। অন্যদিকে, সেই তেরঙ্গার ছায়া ও আশ্রয়টুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে
বহু নাগরিকের মাথা থেকে; যাদের পূর্বপুরুষরা এ মাটির সেবা করেছে কত না
যুগ-যুগান্তরে।
এবং
স্বাধীনতা পরবর্তী মুহূর্তে টু নেশন থিওরিকে যারা ছুঁড়ে দিয়েছিল এই মাটির টানে, এই
বলে যে, “সপ্ত
পুরুষ যেথায় মানুষ সে
মাটি সোনার বাড়া!”
তীব্র ঝঞ্ঝা সামলে আঁকড়ে রয়েছে নিজ জন্ম-ভিটেকে, তারা এখন যেন ‘দুই বিঘা জমি’-র
উপেন ‘সাধু’বেশী ভূস্বামীদের নজরে। এবং ঐ সাধুবেশী ভিড় দিনদিন আরও বে-লাগাম হয়ে
পড়ছে। সর্বক্ষেত্রে তাদের যেন অবাধ বিচরণ। যার ফলে পেহলু
খান হত্যা মামলায় ছয় অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করল
রাজস্থানের এক আদালত। উল্লেখ থাকে যে,
২০১৭ সালের ১ এপ্রিল গোরক্ষার নামে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৫৫ বছর বয়সী
পেহলু খানকে। ভিডিও
ফুটেজ দেখে ৯ জন অভিযুক্তকে শনাক্ত করার পর গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজন
নাবালক হওয়ায় আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছিল।
বাকি ছয়জনকেও বেকসুর খালাস করলো রাজস্থান আদালত।
এক
অন্য ঘটনায়, মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে
(এটা একটা গুজবও হতে পারে) ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খারসাওন
এলাকায় পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল তাবরেজ
আনসারি নামে এক যুবককে। গত জুন মাসের এই ঘটনা চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিল গোটা দেশ
জুড়ে। এ বার নতুন করে শোরগোল ফেলে দিল তাবরেজের
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গণপিটুনি
নয়, হার্ট
অ্যাটাকে মারা গিয়েছিল সদ্য বিবাহিত ২৪
বছরের ওই যুবক। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের উপর থেকে খুনের অভিযোগ
তুলে নিয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।
তাই,
আমাদের এই সময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শে’আবে আবি তালেব বা প্রাক্-হিজ্রত মক্কার
করুণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে আমরা অবগত। এসব দেখেশুনে আমরা খানিকটা হলেও অনুমান করতে
পারি আমাদের সালাফ-সালেহীনদের সংগ্রাম ও লড়াইয়ের সেই ইতিহাসকে। এবার আমাদের করণীয়
তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে, ধৈর্য ধরা, একে-অপরকে ন্যায় ও সত্যের অসিয়ত করা,
পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতা করা; মহান আল্লাহ্র আদেশ-নির্দেশ মেনে এই সমাজ, এই দেশ
এবং এই পৃথিবীকে শান্তির নীড় তৈরি করা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের প্রতি সহায় হন,
আমীন!
No comments:
Post a Comment