‘আব্বাস মাহ়্মুদ আল্-‘আক়্ক়াদ
(১৮৮৯ – ১৯৬৪ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
আব্বাস মাহমুদ আল্-আক্কাদ একাধারে সাংবাদিক,
কবি ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। তিনি আরবি ভাষা আকাদেমির সদস্য ছিলেন। জীবনে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁর লেখনী কখনও থেমে
থাকেনি। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর বিদগ্ধ মিশরীয় লেখকদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তিনি রাজনীতি ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। অগাধ পাণ্ডিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। মানব সভ্যতার ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য ও সমাজ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে
তাঁর বুৎপত্তি ছিল ঈর্শনীয়।
জন্ম ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
আল-আক্কাদ মিশরের আসওয়ান শহরে ২৮ জুন ১৮৮৯ মোতাবেক ২৯ শাওয়াল ১৩০৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মিশরীয় আর মা ছিলেন কুর্দিশ। তাঁর বাবা মূলত
দামিট্টার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল খুব সামান্য। কেবলমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পেরেছিলেন। পরে তিনি বই কিনে এবং স্বশিক্ষণের মাধ্যমে অগাধ পাণ্ডিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সাপ্তাহিক ভাতা দিয়ে নানা ধরণের বই কিনতেন। ধর্ম, ভূগোল, ইতিহাস এবং অন্যান্য অনেক বিষয় সম্পর্কে পড়াশোনা করেন। দুর্দান্ত ইংরেজি এবং ফরাসি জন্য তাঁর খুব নামডাক ছিল । তিনি বিশেষ ভাবে জার্মান সাহিত্যে ওয়াকিবহাল ছিলেন ।
জীবন
যাপন
তিনি একজন স্পষ্টবাদী
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ছিলেন। এবং নিজ দেশের সরকারের সমালোচনা করার জন্য ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য তাঁকে জেলও যেতে হয়েছিল। ১৯৪২ সালে যখন
অ্যাডল্ফ হিটলারের বাহিনী মিশরের দিকে অগ্রসর হয়, তখন হিটলারের সমালোচনার জন্য প্রতিশোধের ভয়ে আল-আক্কাদ সুদানের দিকে পালিয়ে যাযন।
হিটলারের সামরিক আগ্রাসন ও নাৎসিবাদের তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা, আধুনিকতা ও মানব অস্তিত্বের ক্ষেত্রে হিটলার সবচেয়ে বড় হুমকি। তাছাড়া তিনি ফ্যাসিজম এবং কমিউনিজম উভয়ের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন। তিনি দু'দিনের জন্য ওয়াফদ পার্টির সদস্য এবং পরবর্তীকালে চেম্বার
অব ডেপুটিসের সদস্য হিসাবে মিশরের সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
তিনি আল্-কুরআনের দার্শনিক অধ্যয়নের পাশাপাশি বহু ঐতিহাসিক মুসলিম নেতার জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি দর্শন, ধর্ম এবং কবিতা সম্পর্কে শতাধিক বই লিখেছিলেন। ইব্রাহিম আল-মাজিনি এবং আব্দুর রহমান শুক্রিরকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসাতুদ্ দিওয়ান নামে একটি কবিতা স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার মাধ্যমে আধুনিক কবিতার পথ আরও প্রশস্ত হয় এবং নতুন নতুন আঙ্গিক আরবি কাব্যজগতকে অধিক সমৃদ্ধ করে তোলে।
মৃত্যু
আল-আক্কাদ ১২ মার্চ ১৯৬৪ মোতাবেক ২৬ শাওয়াল ১৩৮৩
হিজরিতে সকাল বেলা মৃত্যু বরণ করেন। সেদিনই তাঁর লাশ দাফনের জন্য তার নিজ শহর আসওয়ান স্থানান্তরিত করা হয়।
সৃজনশীলতা ও রচনাসমূহ
আল-আক্কাদ একজন বড় মাপের চিন্তক ও সৃজনশীল
ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি শতাধিক বই এবং কয়েক হাজার প্রবন্ধনিবন্ধ রচনা করেছেন। সাতটা বই নিয়ে
গঠিত তাঁর আল্-‘আব্কারিয়্যাত সিরিজ পাঠককুলের কাছে বিশেষ ভাবে সমাদৃত
হয়েছে। তাঁর রচনার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি
হল— ইয়াকজাতুস্ সাবাহ (তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে, তাঁর মোট দশটি দিওয়ান বা কাব্যসংকলন রয়েছে), আদ্-দীওয়ান ফিন্-নাক্দি ওয়াল্-আদাব (১৯২১), সারা (১৯৩৮), ওয়াহ্ইউল্ আর্বা’য়ীন (১৯৪২), আল্-ফাল্সাফাতুল্ কুর্আনিয়্যাহ্ (১৯৪৭), আদ্-দিমুকিরাতিয়্যাহ্ ফিল্ ইস্লাম (১৯৫২) ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment