মিখ়াইল নু‘আইমাহ্
(১৮৮৯ – ১৯৮৮ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
জন্ম ও পরিচয়ঃ
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যে সব শিক্ষাবিদ ও সুসাহিত্যিক আরবী ভাষা ও সাহিত্যের আধুনিকীকরণ ও বিশ্বসাহিত্যে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক মিখ়াইল নু‘আইমাহ্ও ছিলেন অন্যতম। তিনি ১৮৮৯ সালে বাস্কান্তাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর নাম মিখ়াইল নু‘আইমাহ্। বাল্যকালে তিনি পিতামাতার পরম আদরস্নেহে লালিত পালিত হন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং খুবই বিনয়ী ও নম্র প্রকৃতির ছিলেন। মেধা ও চরিত্রগুণে মা-বাবার মন জয় করতে পেরেছিলেন। ফলে পুরো পরিবারের পরম আদরের পাত্র ছিলেন।
জন্মস্থানেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। অতঃপর ১৮৯৯ সালে রুসিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এই মাদ্রাসাটি অর্থোডক্স বংশধরদের খিদমত করার জন্য সে দেশে তৈরি হয়েছিল। অতঃপর তিনি ১৯০২ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ফিলিস্তিনের নাসেরাহ্-তে যান। সেখানে দীর্ঘ ছয় বছর অতিবাহিত করেন। চতুর্থ বছরের পাঠ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ হতে বৃত্তি লাভ করেন। অতঃপর ১৯০৬ সালে বোলতাফার আর্-রূহীতে চলে যান। সেখানে রাশিয়ান সাহিত্য অধ্যয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং টলস্টয়ের রচনাসমূহ অধ্যয়নে মনোসংযোগ করেন। কিন্তু ১৯১১ সালে তিনি রাশিয়ার প্রতি বিদ্রোহী মনোভাব নিয়ে লেবাননে ফিরে আসেন। অতঃপর এ বছরেই তিনি নিজ ভাইয়ের সাথে ওয়াশিংটনের সফর করেন। এবং সেখানে ইংরেজী সাহিত্য পড়া শুরু করেন, যা তাঁকে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পাঠে সহযোগিতা করেছিল।
মিখ়াইল নু‘আইমাহ্ ১৯১১ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর লেবানন থেকে ফিরে আসেন এবং আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। কিছুদিন সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার পর ফ্রান্স যাত্রা করেন। অতপরঃ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ফ্রান্সের ইতিহাস ও সাহিত্য অধ্যায়ন করেন। ক’বছর বাদে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে তিনি প্রত্যাবর্তন করে সেখানে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ আরম্ভ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি ওয়াসিংটন বিশ্বাবদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডক্টরেট লাভ করেন।
এরপর মিখ়াইল নু‘আইমাহ্ নিজ কাজে গভীর ভাবে মনোযোগী হয়ে পড়েন। চিন্তাচেতনার জগতে ডুবে যেতে লাগলেন। খানিকটা নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়লেন। কোলাহলপূর্ণ জনসমাজ থেকে দুরে থাকতে আরম্ভ করলেন। চিন্তাভাবনা দ্বারা উম্মুক্ত ও উদ্ভাসিত অবস্থার মূল এবং অস্তিত্বের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করতে লাগলেন। আর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজের মাধ্যমে চুপিচুপি নিজ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
আইন ও বিধানের শিক্ষক হওয়ার জন্য তিনি অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও চিন্তা শক্তির দ্বারা আরবী সাহিত্যের আধুনিকীকরণ করেছেন। তিনি অসংখ্য সাহিত্য রচনা করে আরবী সাহিত্যের জগৎকে নতুন রুপ দিয়েছেন। আরবী সাহিত্যের আধুনিকীকরণ ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ২৫টিরও বেশী গ্রন্থ ও বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন, যেমন— যাদুল্ মা‘আদ, আল্—য়াদির, আল্-আওসান, সাওতুল্ ‘আলাম, আন্-নূর ওয়াদ্ দাইহূর, ফী মাহাব্বির্ রীহ, দারূব, আব্‘আদু মিন মোস্কো ওয়া মিন্ ওয়াশিন্তান, আল্-মারাহিল। এছাড়া তিনি অনেক গল্প কাহিনী লিখেছেন যেমন— হাওয়ামিশ, আবূ বাত্তাহ্, কানা মা কানা, ইয়া ইব্না আদাম, আল্-ইয়াওমুল্ আখীর, মির্দাদ, লেকা, মুজাক্কারাতুল্ আর্কাশ, আকাবির। তিনি বহু নাটকও রচনা করেছেন যেমন— আইয়ুব, আল্-ওয়ারাকাতুল্ আখীরাহ্, আল্-আবাউ ওয়াল্ বানূন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ রচনা করে আরবী সাহিত্যের জগতে এক নতুন দিগন্তের সুচনা করেন। প্রবন্ধ, গল্প, কাহিনী, নাটক, রম্য রচনা, দৃষ্টান্ত মুলক কবিতা, চিঠিপত্র, পূর্বের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী সংক্রান্ত বিষয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থ রচনা করে স্বীয় অবদান অক্ষুন্ন রেখেছেন।
প্রায় এক শ’ বছরের দীর্ঘ জীবনে নানা বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে, আরবি সাহিত্য ও আরব সমাজকে নানা আঙ্গিকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করে ২২শে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সালে আশ্-শাখ্রূব গ্রামে ইহলোক ত্যাগ করেন।
No comments:
Post a Comment