ভোর হবে!
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
বাগদী পাড়া জঙ্গলে ঘন বনের ভেতরে এক হরিণী বাস করতো। বেশ
নির্বিঘ্নেই তার দিন কাটছিল। কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় নিজের সেই
পরিচিত জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল এক উপযুক্ত জায়গার খোঁজে। অনেক
খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে একটা উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেল। সেখানে বনের ধার দিয়ে দুলে
দুলে মন্থর গতিতে বয়ে চলেছে একটি ছোট নদী। তার পাশে বিছানো রয়েছে একটি সবুজ ঘাসের গালিচা।
নদীতে আয়নার মতো ঝকঝকে জল। সন্তান প্রসব করার জন্য একেবারে উপযুক্ত। জায়গাটা বেশ
মনে ধরল তার। স্থির করল এখানেই প্রসব করবে।
খানিকটা সময় অতিক্রান্ত হবার পর তার প্রসব বেদনা আরম্ভ
হয়েছে; এমন সময় শূন্যমার্গে আলো-অন্ধকারের লড়াই বেঁধে গেল। কুস্তিতে কখনো আলো তো
কখনো অন্ধকার জেতে। উপরে তাকিয়ে দেখল, ধীরে ধীরে ঘন-কালো মেঘের আবরণে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। তার মনে এবার আশংকার মেঘ জমতে শুরু করল। নিজের
অজান্তেই জঙ্গলের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ কোপালে, ঘন জঙ্গল হঠাৎ করে
দাবানলের কবলে। তা
দেখে কার্যতই সে অসহায় বোধ করতে লাগলো। চোখের সামনে থেকে ভিটে-মাটি-আশ্রয়
শব্দগুলো ক্রমে ক্রমে অদৃশ্য হতে থাকলো। এরই মাঝে, সামনের দিক থেকে একটা ক্ষুধার্ত
সিংহ গুটি গুটি পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে, খানিক পরে সে টের পেল। এখন
পালানোর একটাই পথ!
ভেবে পেছন ফিরে তাকাল। সেখানেও, এক শিকারী তিরধনুক নিয়ে তাকে বধ করার জন্য
প্রস্তুত।
কী করবে এবার! সন্তানসম্ভবা সে। তাই
শরীরও অসাড়। একপাশে জঙ্গলে দাবানল, অপর পাশে নদী, মাথার উপর বজ্রবিদ্যুতের অশনি সংকেত, সম্মুখে ক্ষুধার্থ সিংহ আর পশ্চাতে নির্দয়
শিকারী।
বিপদের বজ্রআঁটুনিতে আবদ্ধ। বড্ড অসহায় হয়ে পড়ল সে। কী
করবে কিছুই স্থির করতে পারল না। চোখ দু’টো বুজে আসল তার। কিছুক্ষণ চোখ-বন্ধ রেখে মনে
মনে স্থির করল, সব বিপদআপদ অগ্রাহ্য করে সে নিজ সন্তানকে জন্ম দেবে। অশুভ কোনো
কিছু ঘটলে, ঘটবে।
জীবনমরণ যার হাতে, তিনি ভাববেন; সেটা তাঁর দায়িত্ব...।
হঠাৎ করে তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো; সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত। বিদ্যুতের
ঝলকানিতে শিকারীর চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। এক পর্যায়ে অপ্রস্তুতভাবে তার হাত থেকে তির
ছুটে গেল এবং সেই তির হরিনীকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে বিঁধল সিংহের মাথায়।
অন্যদিকে, মুষলধার বর্ষণে দাবানল নিভে গিয়ে জঙ্গলও শান্ত হয়ে গেলো। অতঃপর হরিণীটি
নির্বিঘ্নে একটি সুস্থ ও সুন্দর শাবক জন্ম দিলো...
গল্পটা পড়ে আয়েশা মোবাইলটা অফ করল। কামিজের ডান পকেটটা খুলে তাতে মোবাইলটা রেখে চেনটা ভালো করে এঁটে দিল। বেগুনী রংয়ের হিজাবটা ঠিক করে মাথায় বেঁধে নিজের মনকে আশ্বস্ত করে বলল, একদিন নিশ্চিত ভোর হবে! তারপর চোয়াল শক্ত করে, ক্লাসমেট উষসীর সাথে দ্রুত পা চালিয়ে মিছিলে শামিল হল। অতঃপর দু’জনেই সকলের সাথে গলা মিলিয়ে স্লোগানের ঢেউ তুলতে লাগলো। উষসীর গলায় ঝুলছিল, "রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়"। "হাম কাগাজ নেহি দিখায়েঙে" স্লোগান থামিয়ে এবার তারা সমস্বরে গাইতে আরম্ভ করল, "হাম দেখেঙে, লাযিম হ্যায় কে হাম ভি দেখেঙে"। আর আয়েশা দু’ হাত উঁচু করে যতটা সম্ভব ফেস্টুনটা উপরে তুলল। তাতে লেখা ছিল—
If you divide, we will multiply!
No NPR No
NRC No CAA
২১ জুলাই ২০২০
বাঁশকুড়ি, দঃ দিনাজপুর
নাইস। ধন্যবাদ
ReplyDelete