জঞ্জাল
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
বরাহনগর মেট্রোর কাছে ড্রপ লোকেশন ছিল। সেখানে প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে দিয়ে আদিল গাড়িটা ঘুরিয়ে নিলো। ঘড়িতে তখন রাত ন’টা বাজে। সারা দিনের খাটাখাটুনিতে শরীরটা বেশ ক্লান্ত। ভাবলো, আজ আর বেশিক্ষণ গাড়ি চালাবে না। তাই হোম ডিরেকশন সেট করে অপেক্ষা করতে লাগলো।
আদিল পড়াশোনায় বেশ ভালো। দক্ষিণ দিনাজপুরের একেবারে বর্ডার লাগোয়া এক প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাড়ি। বাবা আদ্যোপান্ত চাষি। খুব সংগ্রামী জীবন আদিলের। আরবি সাহিত্যে মাস্টার্স করে নেটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হস্টেল ছেড়ে দিয়ে তোপসিয়াতে একটা এক কাম্রার ফ্লাট ভাড়া নিয়েছে। গ্রাম থেকে নিজের ছোট ভাইকে নিয়ে এসে কোলকাতার এক কলেজে ভর্তি করেছে। তাই অর্থের জোগান দিতে সে দিনে উবারে গাড়ি চালায়। আর রাতে নেট ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়।
হোম ডিরেকশন সেট করে দু’ মিনিটও হয়নি একটা কল ঢুকল। বেশ খুশী হল আদিল। কিন্তু লোকটা রাইড কেন্সেল করে দিল। কিছুক্ষণ পরে আবারও একটা কল ঢুকল। আদিল লক্ষ্য করলো ওই আগের লোকটাই। লোকটা আবারও কেন্সেল করে দিল। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল। চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক পরে আবারও একটা কল ঢুকল। আদিল খেয়াল করে দেখল, সেই লোকটাই। এবার কেন্সেল করার আগেই, আদিল নিজেই লোকটাকে কল করলো— হ্যাঁ দাদা, কোথায় যাবেন আপনি?
— এন আর এস মেডিকেল কলেজ জানা হ্যায়।
— দাদা, আমি বাঙালি।
— হুম...
— বেশ, আসছি আপনার লোকেশনে।
হোম লোকেশনের দিকে রাইড দিয়েছে দেখে খুব খুশি হল আদিল।
আল্-হামদু লিল্লাহ্ বলে গাল ভর্তি দাড়িতে একবার হাত বোলালো। তারপর দ্রুত লোকেশনে
পৌঁছে প্যাসেঞ্জারকে গাড়িতে তুলে রওয়ানা দিল এন আর এসের পথে। ড্রাইভ করতে করতে মাঝে একবার লুকিং গ্লাসে লক্ষ্য
করলো, লোকটা কেমন অস্বস্তি বোধ করছে। সাহস করে জিজ্ঞেস করল— দাদা, কোনো অসুবিধা হচ্ছে?
— নাহ্।
— দাদা, একটা কথা বলছিলাম, আপনি যে তখন বার বার কেন্সেল করে
দিচ্ছিলেন, তার কারণটা জানতে পারি!
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বিরক্তি ও তাচ্ছিল্য মিশিয়ে লোকটা উত্তর দিল— আপনার রেটিং বেশ ভালো। তবে আপনার চেহারাছবি কেমন লাদেন লাদেন...!
আদিল আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো। লোকেশনে তাকে ড্রপ করে সেখান থেকে সোজা গ্যারেজের পথে। গেটে পড়ে থাকা জঞ্জালের স্তুপকে পাশ কাটিয়ে গাড়িটা পার্ক করলো। তারপর গেটের ওই জঞ্জালের স্তূপ কোনোরকমে ডিঙিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, এ জঞ্জাল আজ না হয় কাল সরে যাবে, কিন্তু ওদের মনের জঞ্জাল!
২৫ জুলাই ২০২০
বাঁশকুড়ি, দঃ দিনাজপুর
দুঃখজনক হলেও বাস্তব চিত্র..!!!
ReplyDeleteসত্যি
ReplyDelete