Wednesday 29 December 2021

জাকারিয়া তামিরঃ নদী


 
নদী
জ়াকারিয়া তামির, সিরিয়া
 
জাবির আল্‌-মালাহি প্রথম দেখাতেই একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল কিন্তু মেয়েটা তাকে পাত্তাও দিলো না আর না তার কথায় কোনো গুরুত্ব দিলো বরং তাকে ঘৃণা করতে লাগলো কোথাও দেখা হলে মেয়েটি সহসা মুখ ঘুরিয়ে নিত। কিছু দিন পর এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল ওই ব্যক্তির এলাকায় বেশ নামডাক ছিলতার চার পাশে সব সময় লোকেদের ভিড় লেগে থাকতো তার সাথে দেখা করবে বলে লোকেরা ঠেলাঠেলি-হুড়োহুড়ি করতো আর তাই যখন সে ঘরে বউ নিয়ে এলো, লোকজন জানতে পেরে দলে দলে ছুটে এসে তাদের দু’জনকে অভ্যর্থনা জানালো
 
এসব দেখে জাবিরের মন দুঃখে-অপমানে-ঘৃণায় ভরে গেলো মনের দুঃখে একদিন সে নিজের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো অজানার উদ্দেশ্যে দূরবর্তী কয়েকটা শহরে ভবঘুরে জীবন যাপন করতে লাগলো। অবশেষে বিভিন্ন শহরে জীবনের দশটা বসন্ত অতিক্রান্ত করে আবার ফিরে এলো নিজ গ্রামে তার ফিরে আসার খবর জানতে পেরে পাড়ার লোকজন তার সাথে দেখা করতে ছুটে এলো তারা তাকে অভিনন্দন জানালো সেই সাথে আবদার করলো, ওই আজব শহরগুলোতে জীবনধারণের সময় যা কিছু সে দেখেছে সেসব যেন তাদেরকে শোনায় পাড়াপ্রতিবেশীর এই আবদার শুনে সে খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়লো তারপরআজ শরীরটা বড্ড ক্লান্তএই অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে অন্য কোনো দিন সেসব শোনাবে বলে কথা দিলো
 
সপ্তাহ পরে তারা যখন আবার তার কাছে সে-সব গল্প শুনতে এলো সে এমন ভান করলো যেন সেদিন তাদের ওই আবদার সে শোনেইনি উলটো তাদেরকে হাবিজাবি গল্প শুনিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিলো। মাস পরে একদিন তারা যখন আবার তার কাছে সে-সব গল্প শুনতে চাইলো সে বলল, যা কিছু সে ওই শহরগুলোতে দেখেছিল সবই ভুলে গেছে একটা কথাও তার আর মনে পড়ছে না তাছাড়া সে-কথাগুলো মনে রাখার মতো নয়ও
 
তারপর বেশ কয়েক বছর অতিক্রান্ত হল একদিন সে সবকিছুই অস্বীকার করে বলল, সে কখনো কোথাও যায়নি শুরু থেকে এ যাবৎ পাড়াতেই রয়েছে এবং পাড়ার লোকেরাও তার এই কথাকে সমর্থন করলো। এমনকি তাদের কেউ কেউ বলে বসলো, জাবির কোনোদিন কোথাও যায়নি তারা শুধু শুধু কল্পনা করতো, জাবির তাদের ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেতাছাড়া তারা কল্পনায় এমন সব ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করতো যেগুলো আদৌ কোনোদিন ঘটেনিঠিক তেমনই তারা কল্পনায় ভেবে বসেছিল, জাবির তাদের পাড়া ছেড়ে চলে গেছে এবং দশ বছর অন্য কোথাও কাটিয়ে এসেছে
 
ক’ মাস বাদে একদিন হুট করে জাবির একটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে এলো বিয়ের পর মেয়েটিকে সে খুবই ভালবাসতে লাগলো মেয়েটি কোনোদিন মা হতে পারবে না, কথা সে জানতো না প্রথম জানতে পারলো যেদিন তার মনে বাবা হবার সাধ জাগলো এ কথা জানতে পেরে জাবির খুবই দুঃখ পেলো। তবে সে মেয়েটিকে তালাক দিলো না আর না দ্বিতীয় বিয়ে করলো 
 
জাবিরের বাড়িতে ছোটোখাটো কিন্তু বেশ সুন্দর একখানা বাগান ছিল তাতে তিনটা ফলের গাছও ছিল জাবির অবসর সময়ে ওই গাছ তিনটার বেশ যত্ন নিতো তবে কোনোদিন তার ফল পাড়ত না তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখত, কুঁড়ি ফুটছে তাতে ফল হচ্ছে ফল পাকছে তারপর তা মুর্ঝে গিয়ে ধীরে ধীরে শুকিয়ে নির্জীব হয়ে যাচ্ছে তারপর একদিন ধপাস করে মাটিতে পড়ছে আর এসব দেখে শরৎ এবং শীত কালে তাদের উভয়ের মন বিষণ্ণতায় ভরে যেতো তবে বসন্ত গ্রীষ্মে তাদের মন আনন্দে নেচে উঠতো
 
এভাবেই তাদের দিন কাটছিল। কিন্তু একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা দুজনেই অবাক হয়ে গেলো তিনটা গাছেরই সব ফল চুরি হয়ে গেছে যাবার আগে চোরেরা হিংসায় সব ডালপালা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে যেন চোরেরা গাছগুলোর থেকে কোনোকিছুর প্রতিশোধ নিতে এসেছিলো যেন এই গাছগুলো আগে কখনো তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল গাছগুলোর এই অবস্থা দেখে জাবির তার স্ত্রীর খুবই মন খারাপ হল মনে হল যেন তাদের সন্তান মারা গেছে তারপর একদিন জাবির নিজের বাড়িটা বিক্রি করে দিলো তারপর সবকিছু বিক্রিবাট্টা করে নিজ বন্ধ্যা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আবার সে বেরিয়ে পড়লো দূরবর্তী শহরগুলোর পথে
 
[৫৪ আন্‌-নাহারআল্‌-হিস্রিম ১৭৭১৭৮]

অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম  

No comments:

Post a Comment