Friday 1 April 2022

আবুল ফারাজ আল-আস্ফাহানীঃ জীবন ও সৃজন

 
আবুল্ফ়ারাজ আল্‌-আস়্ফ়াহানী
(৮৯৭৯৬৭)
 
জন্ম পরিচয়
আবুল ফারাজ একজন বিরল প্রতিভা সম্পন্ন লেখক কিতাবুল্আগ়ানী তাঁর একটি কালজয়ী রচনা তিনি পারসিক বংশোদ্ভূত তবে তাঁর প্রতিপালন বেড়ে ওঠা আরবে উমাইয়াদের মাঝে বিখ্যাত উমাইয়া শাসক মার্ওয়ান বিন হাকাম বংশ পরম্পরায় তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষ তাঁর প্রকৃত নামআলী পিতার নাম হুসাইন উপনাম আবুল্ফারাজ ৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের (বর্তমানে ইরান) বিখ্যাত শহর ইস্পাহানে জন্ম গ্রহণ করেন সেই সুবাদে তাঁর উপাধি আল্‌-আস্ফাহানী
 
প্রতিপালন শিক্ষা
বিখ্যাত বাগদাদ নগরীতে তিনি বেড়ে ওঠেন সেখানে বিদগ্ধ ওলামা, ঐতিহাসিক বিদ্বানদের সাহচর্য লাভ করেন তিনি তাঁদের পাঠদানের বৈঠকে শামিল হতেন তাঁদের থেকে হাদিস ইতিহাস শুনতেন কবিতা বংশলতিকার বর্ণনা শিখতেন তিনি তাঁদের থেকে জ্যোতির্বিদ্যা, জীবনচরিত, পশুচিকিৎসা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বুৎপত্তি অর্জন করেন
 
কর্মব্যস্ততা
তিনি আন্দালুসিয়ায় (বর্তমান স্পেনে) বসে গোপনে উমাইয়াদের সমর্থনে বই লিখতেন ফলে উমাইয়া শাসকরা লাগাতার তাঁর প্রতি কৃপাদৃষ্টি বানিয়ে রেখেছিলেন তবে তিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে শিয়াদের পক্ষে কথা বলতেন নিজেকে শিয়া বলে প্রচার করতেন এটা ছিল তাঁর একটা রাজনৈতিক ডিপ্লোম্যাটিক কৌশল কারণ তিনি শিয়া প্রধান শহরে প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং তাঁর প্রতি শিয়াদের অনেক অবদান ছিল মন্ত্রী আল্‌-মাহ্লাবীর তিনি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন মন্ত্রী তাঁকে খুব খাতিরযত্ন করতেন তিনিও মন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন নিজ কবিতায় মন্ত্রীর প্রশংসা করতেন একসময় মন্ত্রীর ছায়াসঙ্গীতে পরিণত হন
 
মৃত্যু
পরবর্তীতে তিনি বাগদাদ শহরকে তাঁর কর্মস্থল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন সেখানেই ৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন
 
ব্যক্তিত্ব চরিত্র
তিনি খানিকটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের ছিলেন ফলে লোকে তাঁকে খুব ভয় পেতো যদিও শিক্ষাদীক্ষায় তিনি একজন মহৎ গুণী ব্যক্তি ছিলেন তবে খুবই নিম্ন মানের এবং ছেঁড়াফাটা পোশাকআশাক পরতেন প্রায়শই মলিন নোংরা কাপড়চোপড় পরতেন এমন নিম্ন রুচিহীন জীবন যাপন সত্ত্বেও মন্ত্রী তাঁকে সমীহ করতেন, তাঁর জ্ঞান, পাণ্ডিত্য বুদ্ধিমত্তার জন্য তিনি কাব্য চর্চা করলেও স্বভাব কবি ছিলেন না তবে তিনি তীক্ষ্ণ মেধা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখক ছিলন
 
রচনা সৃজনশীলতা
তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল মুখস্থ করা বা সংগ্রহ সংকলন করা জ্ঞান চর্চা নয় বরং চিন্তাভাবনা মননশীলতার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজস্বতার পরিচয় দেওয়া, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আলোকিত করা, যথাযথ মূল্যায়ন ইত্যাদিই হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানচর্চা তিনি বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন তারমধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য হলকিতাবুল্আগ়ানী, কিতাবুল্কিয়ান, কিতাবুল্ইমাইশ্শাওয়াইর, কিতাবুদ্দীয়ারাত কিতাবু দাওয়াতিল্আতিব্বা
 
কিতাবুল্আগ়ানী
কবিতা ও গানের একটি অনবদ্য সংকলন। এর আধুনিক সংস্করণ ২০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১০ হাজার পৃষ্ঠার এই বইটি রচনা করতে আবুল্‌ ফারাজের ৫০ বছর সময় লেগেছিল। এর তিনটি খণ্ড রয়েছে। প্রথম খণ্ড বা অংশে রয়েছে বিখ্যাত আব্বাসী খলীফা হারুন আর্‌-রাশীদের পছন্দকৃত ১০০ সেরা গান, দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রাজরাজড়াদের রচনা এবং তৃতীয় পার্টে লেখকের নিজের পছন্দ ও বাছাই করা কিছু গান। এই বইয়ে জাহেলী যুগ থেকে ১০ম শতক পর্যন্ত গান ও কবিতা সংকলিত হয়েছে। সেসময়ের কবিতা ও গানের রচয়িতাগণ নিজ নিজ গান ও কবিতায় নিজের পরিচয় ব্যক্ত করতেন। আর এ কারণেই এই বইটি সমকালীন সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি আকর গ্রন্থ রূপে বর্তমানেও স্বীকৃত ও সমাদৃত।
 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

2 comments: