Thursday 7 April 2022

আহমাদ জাকী আবু শাদীঃ জীবন ও কর্ম


আহ়্মাদ জ়াকী আবু শাদী
(১৮৯২১৯৫৫)
 
পরিচয় জন্ম
তিনি একজন মিশরীয় কবি এবং চিকিৎসক ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্য সংগঠন অ্যাপোলো সংঘের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর পিতা মুহাম্মদ আবু শাদী একজন বিখ্যাত আইনজীবী ছিলেন এর পাশাপাশি তিনি ওয়াফদ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন কবি কায়রোতে আবেদীন নামক মহল্লায় ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন
 
প্রতিপালন শিক্ষা
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা আল্‌-হায়াতিম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন, যেটি আল্‌-হানাফী মহল্লায় অবস্থিত ছিল তারপর আবেদীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি তাঁর মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শিব্রায় অবস্থিত তাওফীকিয়্যাহ মাধ্যমিক স্কুলে সম্পন্ন করেন এই সময় ১৯০৫ সালে তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায় পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয় হতে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাঁর সাহিত্য চর্চার শুরু সে সময়েই তিনি বহু কবিতা, প্রবন্ধ গদ্য রচনা করেন এর পাশাপাশি তিনি জাতীয় আন্দোলনেও অংশ নেন; তিনি মুস্তাফা কামিলের সমর্থক ছিলেন
 
অতঃপর কাস্রুলআইনীতে অবস্থিত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তারপর ১৯১৩ সালে মেডিক্যাল সাইন্সে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান সেখানে গিয়ে ব্যাক্ট্রলোজিতে স্পেশালাইজেশন করেন এর পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে বুৎপত্তি অর্জন করেন সেখানেও ভাষা সাহিত্যের জন্য নানা ধরণের আন্দোলন গড়ে তোলেন
 
অ্যাপোলো সংঘ প্রতিষ্ঠা
১৯২২ সালে তিনি মিশরে ফিরে আসেন। ফিরেই জাতীয় স্তরের নানা বিষয়ে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে আরম্ভ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি জামা‘আতু আবোলো বা অ্যাপোলো সংঘ নামে একটি সাহিত্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সাথে সংঘের মুখপত্র স্বরূপ একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তিনি আরবি কাব্যকবিতায় নতুনত্বের আহ্বান জানান। প্রাচীন শৈলী হতে আরবি কবিতাকে মুক্ত করার জোরালো আওয়াজ তোলেন। এক্ষেত্রে তাঁর সাথে শামিল হয়েছিলেন আলি আমহ্‌মুদ তাহা, ইব্‌রাহিম নাজি প্রমুখ। রোমান্টিক কবিতা চর্চার পাশাপাশি দীর্ঘ কবিতায় অন্ত্যমিলের পরিবর্তনের পক্ষেও তারা কথা বলেন। বিভিন্ন কারণে তাদের সাথে প্রাচীনপন্থী নানা কবি এবং আক্কাদ ও মাজিনীর মতো বহু আধুনিকপন্থী কবিদেরও বিরোধ বিতর্ক তৈরি হয়।
 
বিদেশ যাত্রা
নানা ধরণের বিরোধিতার কারণে একটা সময় আবু শাদী বিরক্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে তিনি ১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্ক পাড়ি দেন।  সেখানে গিয়ে বেশ কিছু আরবি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি আরম্ভ করেন। ব্যবসাবাণিজ্যের চেষ্টা করেন। কিছুদিন রেডিও বিভাগে চাকরি করেন। নিউ ইয়র্কেও তিনি একটি সাহিত্য সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার নাম দিয়েছিলেন রাবেতাতু মুনিরফা। তাঁর এই সংঘে সমকালীন বহু আরব ও অ্যামেরিকান সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী যোগ দিয়েছিলেন। এসবের পাশাপাশি তিনি নিউ ইয়র্কের এশিয়ান ইন্সটিটিউটে আরবি ভাষার শিক্ষকতা করেন। তাঁকে মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয় সদস্যও করা হয়। এবং তিনি নানাবিধ কাজে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করতে থাকেন। তবে ১২ই এপ্রিল ১৯৫৫ সালে তিনি হঠাৎ করে মৃত্যু বরণ করেন।
 
রচনাসমূহ
তিনি বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তাঁর বহু কাব্যসংকলনও রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে— আশ্‌-শাফাক আল্‌-বাকী (১৯২৬), ইহ্‌সান (১৯২৭), আশি‘আতুন ওয়া জিলাল (১৯২৮), আশ্‌-শো’লা (১৯৩৩), ফাওকাল্‌ ‘উবাব (১৯৩৫)। তিনি বেশ কিছু নাটকও লিখেছেন; যেমন— আল্‌-আলিহাহ্‌ (১৯২৭), ইখ্‌নাতুন ফির্‌আউনু মিস্‌র (১৯৩৩)।
 
কাব্য প্রতিভা
তিনি একজন সফল ও প্রতিভাবান কবি ছিলেন। তাঁর কবিতায় সূক্ষ্ম ও বাস্তব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কবিতা অন্যান্য সকল কবিদের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করে। তাঁর কবিতায় জাতীয়তা বোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয় মুখ্য উপজীব্য রূপে স্থান পেয়েছে।
 
নিজ মাতৃভূমি মিশরের প্রতি তাঁর আবেগ এভাবে তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে—
وددت قبل مـماتي                أراك يا مصرُ مَرَّة
وإن أكن  في  جنانٍ                فريدةِ  الحُسْنِ حُرَّة
(মৃত্যুর পূর্বে হে মিশর আমি তোমাকে একবার দেখতে চাই। যদিও আমি এক স্বাধীন, সুন্দর ও অপরূপ স্বর্গে থাকি)
 
অন্য একজায় কবি আর্তনাদের স্বরে বলেছেন—
وطني لو دعيت أن افتديه        ما تمنيت غير تخليد رمسي
(প্রিয় জন্মভূমি, আমাকে যদি ফিদিয়া বা মুক্তিপণ দিতে বলা হয়, আমার চিরস্থায়ী সমাধি ছাড়া আমার স্বপ্ন, বাসন, কামনা যা কিছু আছে সবই দিয়ে দেবো)।
 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment