Monday 4 April 2022

রাশীদ সালীম আল-খূরীঃ আরবীর পল্লীকবি



রাশীদ সালীম আল্‌-খ়ূরী
(১৮৮৭১৯৮৪)
 
রাশীদ সালীম আল্‌-খ়ূরী একজন আরব খ্রিস্টান বিখ্যাত প্রবাসী কবি আশ্‌-শায়েরুল্ক়ারাবী (পল্লীকবি) নামে খ্যাত জন্ম লেবাননের আল্‌-বার্বারাহ নামক গ্রামে শনিবার ১৭ই এপ্রিল ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন তাঁর পিতা একজন শিক্ষক ছিলেন কিন্তু বিয়ের পর শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তামাক রেশমের ব্যবসা আরম্ভ করেন

বিদ্যার্জন
গ্রামের স্কুলেই তাঁর শিক্ষাদীক্ষার হাতে খড়ি পরবর্তীতে ১৩ বছর বয়সে তিনি সায়দা নামক জায়গায় চলে যান এবং সেখানে মাদ্রাসাতুল্ফুনূন আল্‌-আম্রিকিয়্যাহতে ভর্তি হন, পরবর্তীতে যেটি আল্‌-জামেআতুল্আমেরিকিয়্যাহ নামে খ্যাতি লাভ করে  তারপর তিনি মাদ্রাসাতু সূক়িল্গ়ার্ এবং বৈরুতের আল্‌-কুল্লিয়্যাতুস্সুরিয়্যাহ আল্‌-ইঞ্জীলিয়্যাহতে পড়াশোনা করেন

কর্মব্যস্ততা
১৯১৩ সালে তিনি ব্রাজিলে পাড়ি জমান সাথে ছিলেন তাঁরই সহোদর কায়সার সেখানে তিন বছর যাবৎ আর্‌-রাবেত়াহ্পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেন তারপর সাহিত্য সংগঠন আল্‌-‘উস়্‌বাতুল্আন্দালুসিয়্যাহর সভাপতির দায়ভার গ্রহণ করেন মিশাল মালূফ়ের পর তিনি ছিলেন এর দ্বিতীয় সভাপতি প্রবাসে তিনি তাঁর জীবনের প্রায় পঁয়তাল্লিশটি বসন্ত অতিক্রান্ত করেন

প্রত্যাবর্তন
পঁয়তাল্লিশ বছর পর নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে ওঠেন একাধিক কবিতা লেখনীতে তিনি তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন অবশেষে সময়-সুযোগ মেলে এবং তিনি ১৯৫৮তে দেশে ফিরে আসেন তখন মিশর সিরিয়ার পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে একটি ঐক্য জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন তীব্র রূপে ধারণ করেছিল

পরলোকগমন
দেশে ফিরে তিনি প্রায় তেরো বছর বেঁচে ছিলেন তারপর সোমবার সকালে ২৭শে আগস্ট ১৯৮৪ সালে তিনি পরলোকগমন করেন তিনি খ্রিস্ট ধর্মের অর্থোডক্স মতের অনুসারী ছিলেন আর এই মতের আদর্শ বিশ্বাস অনুযায়ী যীশু (আঃ) হলেন একজন মানুষ, কোনও ঈশ্বর বা উপাস্য নন তিনি যদিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি, তবে চলার পথে নিজ জীবনে বহু ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করতেন এবং ইসলামকে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধর্ম বলে মনে করতেন

তাঁর কাব্যকবিতা
তিনি ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসনের চরম বিরোধী ছিলেন নিজ কবিতায় ফরাসিদের এবং তাদের আগ্রাসনের তীব্র সমালচনা করতেন তিনি তাঁর একটি কবিতায় সুলতান আত্রাশকে সম্বোধন করেছেন, কেননা এই সুলতান ১৯২৫ সালে ফরাসীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সাহিত্য সমালোচক ফালিহ আল্‌-হুজ্জিয়্যাহ নিজ গ্রন্থ শু‘আরাউন্‌ নাহ্‌দ়াতিল্‌ ‘আরাবিয়্যাহতে লিখেছেন— আল্‌-খূরী প্রবাসে থাকলেও সর্বদা তাঁর দেশে হওয়া অত্যাচার, নিপীড়ন, অন্যায় ও ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতেন। এক্ষেত্রে কবিতাই ছিল তাঁর মূল ও প্রধান অস্ত্র। কবিতার মাধ্যমেই তিনি তাঁর জাতির অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যের কথা বলতেন। তিনি প্রকৃতার্থেই আরবীয় নবজাগরণের কবি ছিলেন। এছাড়া তিনি তাঁর একাধিক কবিতায় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের আহ্বান জানিয়েছেন।

তাঁর রচনাসমূহ
তিনি বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। বহু কবিতা রচনা করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তাঁর একাধিক কাব্যসংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। আর্‌-রাশীদিয়্যাত তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন, ১৯১৬ সালে ব্রাজিলে প্রকাশিত হয়েছিল। আল্‌-ক়ারাবীয়্যাত নামে তাঁর আরও একটি সংকলন ১৯১৬ সালে ব্রাজিলেই প্রকাশিত হয়েছিল। আল্‌-আ‘আসীর তাঁর জাতীয়তাবাদী কবিতাসমূহের সংকলন, এটি ১৯৩৩ সালে প্রথম প্রকাশ পায়। আজ়্-জ়ামাজ়িম তাঁর সাহসিকতামূলক কবিতাসমূহের সংকলন, ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া আল্‌-লামিয়াতুস্‌ সালাস নামের তিনটি কবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়, তাতে প্রথম দু’টি কবিতা তাঁর ছিল, আর তৃতীয়টি ছিল আমীর শাকীব আরসালানের। তবে তাঁর অনবদ্য কাব্যসংকলন দীওয়ানুল্‌ ক়ারাবী প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫২ সালে ব্রাজিলে। এই কাব্যসংকলনটি মূলত তাঁর ছটি কাব্যসংকলন দ্বারা সন্নিবেশিত; সেগুলি হল— ফ়াজারুন্‌ ‘আলা শাফ়াক়, আল্‌-বারাকীন, আল্‌-জামাহীর, জ়াওয়াইয়াশ্‌ শাবাব, আল্‌-মাওজাতুল্‌ ক়াস়ীরাহ এবং আল্‌-আজ়াহীর।

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment