মায়ার কানন
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
দুপুরের আকাশ তখন আগুন ঝরাচ্ছে।
বাড়ি থেকে বেরোলেন আবু বাক্র (রাঃ)। বেরিয়ে মসজিদের
দিকে হাঁটতে লাগলেন। মাঝপথে উমার (রাঃ)-এর সাথে দেখা। উমার (রাঃ)-ও তাঁকে দেখে হতবাক। জিজ্ঞেস করলেন— এই অবেলায় বেরিয়েছেন!
কী ব্যাপার?
—সত্যি বলেতে,
আমি বাধ্য হয়ে
বেরিয়েছি। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে আর বাড়িতে তেমন কিছু নেই।
—আমিও ওই একই কারণে বেরিয়েছি।
অতঃপর তাঁরা দু’জনেই মসজিদের দিকে হাঁটতে লাগলেন। একটু পথ এগোতেই নবীজির সাথে তাঁদের দেখা। নবীজি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেন— তোমরা এই অবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছো! রোদে তো পথঘাট
সব তেতে রয়েছে। কী ব্যাপার?
দু’জনেই সমস্বরে
উত্তর দিলেন— নবীজি, প্রচণ্ড খিদে
পেয়েছে। বাড়িতে খাবার কিছুই নেই। ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এই অবেলায় বেরিয়েছি।
নবীজি বললেন— আমিও ওই একই কারণে এই অবেলায় বাড়ি থেকে বেরোলাম। এক কাজ করো, তোমরা আমার সাথে
চলো।
অতঃপর তাঁরা সকলে হাজির হলেন আবু আইউব
আনসারি (রাঃ)-এর বাড়িতে। আবু আইউবের একটা
স্বভাব ছিল, তিনি রোজ নবীজির জন্য পরিমাণ মতো খাবার তুলে রাখতেন। যখন
দেখতেন, নবীজি দেরী করছেন, আজ আর হয়তো আসবেন না,
তখন ওই খাবার
নিজ পরিবারের লোকেদের খেতে দিতেন।
আবু আইউবের
বাড়ির কাছে পৌঁছে নবীজি
দরজায় কড়া নাড়লেন। আওয়াজ শুনে উম্মু আইউব (রাঃ) বেরিয়ে এলেন। নবীজি ও তাঁর সঙ্গীদের সালাম ও অভিবাদন জানিয়ে বললেন— মার্হাবান বি-রাসুলিল্লাহ ওয়া বিমান্ মা’আহু (আল্লাহ্র রাসূল ও তাঁর সাথীদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছি)!
নবীজি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন— আবু আইউব কোথায়?
আবু আইউব (রাঃ) তখন পাশেই খেজুর
বাগানে কাজ করছিলেন। নবীজির কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ছুটে আসলেন। নবীজি ও তাঁর সহচরদ্বয়কে
স্বাগতম জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন— নবীজি, এই অবেলায়, এটা তো আপনার
আসার সময় নয়!?
—তুমি ঠিকই বলেছো আবু আইউব। খানিকটা বাধ্য
হয়ে।
আবু আইউব ছুটে গেলেন বাগানে। খেজুরের
একটা কাঁদি কেটে নিয়ে দ্রুত হাজির হলেন। তাতে কাঁচা, ডাগর ও পাকা সব রকমের খেজুর ছিল। নবীজি তা দেখে বললেন— পুরো কাঁদিটা কাটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বরং তুমি কাঁদি
থেকে খেজুরগুলো পেড়ে আনতে পারতে। সেটাই ভালো হতো!
—নবীজি, আপনি কাঁচা, ডাগর ও পাকা সব ধরণের খেজুর খেতে পান, তাই কাঁদিটা কেটে এনেছি। আপনি যদি খান তাহলে আমি খুব খুশি
হবো! তাছাড়া আমি আজ আপনার জন্য একটা মেষ জবাই
করবো।
—শোনো যদি তুমি মেষ জবাই করো, তবে কোনো দুগ্ধবতী মেষ জবাই করো না।
নবীজির কথা মেনে
আবু আইউব (রাঃ) একটি ছাগশিশু
ধরে জবাই করলেন। তারপর নিজ স্ত্রীকে ডেকে বললেন—
আইউবের মা, তুমি তো খুব ভালো রুটি বানাতে পারো। আজ আমাদের জন্য ক’টা রুটি বানাবে!
উম্মু আইউব
(রাঃ) যত্ন সহকারে রুটি তৈরি করলেন। এদিকে আবু আইউব (রাঃ) অর্ধেক মাংস রান্না করলেন। আর বাকি অর্ধেক ভুনা করলেন। একে
একে রান্নাবান্নার সব কাজ শেষ হল। খাবার একেবারে রেডি। নবীজি ও তাঁর দুই
সহচর আবু বাক্র ও উমার (রাঃ)-এর সামনে
দস্তরখান বিছানো হল। রুটি ও মাংসের আইটেমগুলো তাতে রাখা হল। নবীজি তা থেকে একটা
রুটি নিলেন। তাতে একটু মাংস রাখলেন। তারপর আবু আইউব (রাঃ)-কে ডেকে বললেন— শোনো আবু আইউব,
আমার এই কাজটা
একটু করে দেবে! এই একটা রুটি আর একটু মাংস ফাতেমা (রাঃ)-কে দিয়ে আসবে! মেয়েটা আমার অনেক দিন ধরে এমন ভালো খাবার খায়নি গো।
[তথ্যসূত্র— স়াহ়ীহ় ইব্নু হ়িব্বান, কিতাবুল্ আত়্‘ইমাহ্, বাবু
আদাবিল্ আক্ল, হাদিস নং ৫২১৬]
No comments:
Post a Comment