Wednesday 20 January 2016

জারীর বিন আতিয়্যাহ্‌

জারীর বিন্‌ ‘আত়িয়্যাহ্‌

(৬৫৩ – ৭২৮ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

পরিচিতি ও জন্মঃ

উমাইয়া যুগের শ্রেষ্ঠ কবিত্রয়ীর মধ্যে তিনি অন্যতম। চারিত্রিক গুণাবলীর বিচারে তিনি তাদের মধ্যে উত্তম। কুৎসা রচনায় আরব কবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এছাড়া স্তুতি ও গাযল রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর নাম জারীর, উপনাম আবু হ়ার্‌যাহ্‌পিতার নাম ‘আত়িয়্যাহ্‌। তামীম গোত্রের কুলাইব শাখায়, ইয়ামামার আসিসিয়্যায় নামক স্থানে তৃতীয় খলিফা উসমান (রা)-র খেলাফত কালে ৩৩ হিজরি মোতাবেক ৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতামহ বিত্ত্ববান হলেও পিতা ছিলেন অভাবী। তাঁর জননী ছিলেন কাব্যপ্রেমী

 

শৈশব ও লালন পালনঃ

তিনি ইয়ামামায় লালিত পালিত। দরিদ্র পিতার সঙ্গে মেষ-বকরি চরিয়ে শৈশব অতিবাহিত করেন। মরু অঞ্চলে শৈশব ও কৈশর অতিক্রান্ত করেছেন বলে তার ভাষা মিশ্রণের দোষে দুষ্ট হয়নি। অল্প বয়সেই কবিতার প্রতি তাঁর ঝোঁক দেখা দায়। অতঃপর তিনি কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

 

খলীফার সানিধ্যেঃ

জারীর বাসরায় গিয়ে গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রশংসায় কবিতা রচনা করেন। অতঃপর অল্প দিনের মধ্যে গভর্নর তাঁকে খলিফার দরবারে প্রেরন করলেন। কিন্তু খলিফা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট থাকায় অনুমতি দেননি। তাই কবি তাঁর প্রশংসা গাথা রচনা করে বললেন

          أ لستم خير من ركب المطايا     وأندى العالمين بطون راح؟

তাঁর এই কবিতা শুনে খলিফা মুগ্ধ হয়ে একশ উষ্ট্রী এবং আটজন রাখাল তাঁকে উপঢৌকন স্বরূপ প্রদান করেছিলেন।

 

কাব্য প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্বমূলক কবিতা রচনাঃ

উমাইয়া যুগের এমন এক সময়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন, যখন প্রত্যেক গোত্রের নিজস্ব কবি থাকত র সেই কবি তার গোত্রের প্রতিরোধের কাজে নিয়োজিত থাকত। সুতরাং, তিনিও কাব্য-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। জারীর ফারাযদাক ও আখতালের মতো প্রথম শ্রেনীর কবিদের সঙ্গে লড়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রায় আশিজন কবি ছিল বিপক্ষে। একমাত্র ফারাযদাক ও আখতাল ব্যতীত তিনি সকলকে পর্যুদস্ত করেছিলেন। ফারাযদাকের সঙ্গে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল পর্যন্ত এই কাব্য প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ছন্দের লড়াই চলেছিল।

 

পরলোকগমনঃ  

তিনি ফারাযদাকের মাতৃভূমি বাসরায় গিয়ে কাব্যচর্চা শুরু করায় উভয়ের মাঝে কাব্য লড়াই আরম্ভ হয়, যা ফারাযদাকের মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফারাযদাকের মৃত্যুর অল্প দিন পরেই কবিও ১১০ হিজরি মোতাবেক ৭২৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে ইয়ামামাতেই সমাধিস্থ করা হয়।

 

কবিতার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ  

ঐতিহাসিক ও সমালোচকগণ এ বিষয়ে একমত যে, আখতাল, জারীর ও ফারাযদাকই উমাইয়া কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তবে, তাঁদের মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ?-এ ব্যাপারে আরবি সাহিত্যের পণ্ডিতেরা দ্বিধাগ্রস্ত। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন জনকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। জারীর দুশ্চরিত্র ও মদের নেশা থেকে মুক্ত ছিলেন। সূক্ষ্ম অনুভূতি, ধর্মের সঠিক জ্ঞান এবং সচ্চরিত্রের গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তাঁর সকল গুণাবলী তাঁর কাব্যে প্রতিভাত হয়েছে। সুন্দর রচনাশৈলী, সুমিষ্ট অভিসার, তিক্ত নিন্দাবাদ এবং বিমোহিত শোকগাথা তাঁর বৈশিষ্ট। এ কারণেই তিনি কাব্যাকাশে সমুজ্জ্বল এবং আখতাল-ফারাযদাক অপেক্ষা ভিন্নমুখী প্রতিভার অধিক অধিকারী।      

 

একদা ফারাযদাক গর্ব করে বলেছিলেন

حلل الملوك لباسنا في أهلنا     والسابغات إلى الوغى نتسربل

তাঁর প্রতিউত্তরে তাঁর অহংবোধকে চুরমার করে দিয়ে জারীর তাঁকে বিদ্রূপ করে বলেছিলেন

لا تذكروا حلل الملوك فإنكم     بعد الزبير كحائض لم تغسل

নিজ প্রিয়ার চোখের প্রশংসা করে তাঁর একটি কবিতায় তিনি বলেছেন

إن العيون التي في طرفها حور     قتلتنا ثم لم يحيين قتلانا

তিনি গৌরবগাঁথা রচনাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর এক গৌরবগাঁথায় তিনি বলেছেন

إذا غضبت عليك بنو تميم     وجدت الناس كلهموا غضابا

পঞ্চম সৎ খলিফা উমার বিন আব্দুল আযীযের প্রশংসায় একটি কবিতা রচনা করেছেন। সেই কবিতায় এক জায়গায় তিনি বলেছেন

إنا لنرجو إذاما الغيث أخلفنا     من الخليفة ما نرجو من المطر

نال الخلافة إذ كانت له قدرا     كما أتى ربّه موسى على قدر

No comments:

Post a Comment