আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) সর্বাধিক হাদিস
বর্ণনাকারী সাহাবী
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
নাম ও পরিচিতিঃ
ইসলাম-পূর্ব যুগে আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর নাম ছিল ‘আব্দুশ্ শামস্। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর নাম রাখেন
‘আব্দুর্ রাহ্মান। তাঁর উপনাম আবু হুরায়রাহ্ (বিড়ালছানার পিতা)। বিড়ালছানার প্রতি তাঁর আসক্তি, বিড়ালছানা নিয়ে নানা রকমের ক্রীড়াকৌতুকের কারণে রাসূল (সাঃ) তাঁকে আদর করে আবু হুরায়রাহ্ বলে ডাকতেন। তিনি নিজেও রাসুল (সাঃ)-এর দেওয়া নামটি খুব পছন্দ করতেন। পিতার নাম সাখ্র আর মায়ের নাম উমাইয়া। দাওস
গোত্রের সন্তান বলে তাঁকে
আবু হুরায়রাহ্ আদ্-দাওসী নামেও
অভিহিত করা হয়।
ইসলাম গ্রহণঃ
বিশুদ্ধ মতে,
বিখ্যাত সাহাবী তুফায়িল
ইব্নু ‘আম্র আদ্-দাওসী (রাঃ)-এর দাওয়াতে ৭ম হিজরীতে খাইবার বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ
করেন। মদীনায় আসার পর দাওস গোত্রের এই যুবক
নিরবচ্ছিনভাবে রাসূল (সাঃ)-এর খিদমত ও
সাহচর্য অবলম্বন করেন। আহ্লু সুফ্ফার সদস্য হিসেবে
রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা মসজিদে
নববীতে অবস্থান
করতেন। সব সময় রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করতেন। নানা বিষয়ে আলাপআলোচনা শুনতে পেতেন।
হাদিস শাস্ত্রে অবদানঃ
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হলেন সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী। তাঁর বর্ণিত
হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। সহীহ
বুখারীতে তাঁর
বর্ণিত একটি হাদীসে রয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে একমাত্র আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) ব্যতীত আর কেউই আমার থেকে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী নেই। আর তা এজন্য
যে, তিনি (আব্দুল্লাহ বিন্ উমার রাঃ) হাদিস লিখতেন,
আর আমি লিখতাম না। রাসুল (সাঃ) থেকে এতো বেশী হাদিস বর্ণনার ব্যাপারটি অনেকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতো। তাই তিনি বলেন, তোমরা হয়তো মনে করছো আমি খুব বেশী হাদিস বর্ণনা করছি। আমি ছিলাম রিক্তহস্ত, দরিদ্র্য, পেটে পাথর বেঁধে সর্বদা রাসুল (সাঃ)-এর সাহচর্যে
কাটাতাম। আর অন্যান্য সাহাবীদের মধ্যে মুহাজিররা ব্যস্ত থাকতো তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং আনসাররা তাদের ধন-সম্পদ
রক্ষণাবেক্ষণে। তিনি আরও বলেন, একদিন আমি বললাম, নবীজি (সাঃ) আমি আপনার অনেক কথাই শুনি।
কিন্তু তার কিছু কথা, কখনো অনেক কথাই ভুলে
যাই। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, “তোমার চাদরটি মেলে
ধরো।” আমি মেলে ধরলাম। রাসূল (সাঃ) ফুঁ দিলেন এবং
বললেন, “তোমার বুকের সাথে চাদরটি লেপ্টে ধরো।” আমি লেপ্টে
ধরলাম। এরপর থেকে আর কোনো কথাই ভুলিনি। ইমাম বুখারী (রাহঃ)-এর মতে, আটশ’রও বেশী সাহাবী
ও তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা
করেছেন।
সাহাবীদের মধ্যে যাঁরা তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইব্নু ‘আব্বাস, ইব্নু ‘উমার, জাবির, আনাস, ওয়াসিলা (রাঃ) প্রমুখ।
প্রাত্যহিক জীবন ও শাসনকার্যঃ
দ্বিতীয় খলিফা উমার (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বাহ্রাইনের শাসক
নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তাঁকে অপসারণ করেন। তারপর
আবার নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি
প্রত্যাখান করেন
এবং মদীনা ছেড়ে আকীক নামক স্থানে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর শাসনামলে আবু
হুরায়রাহ্ (রাঃ) একাধিকবার মদীনার শাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে শাসন ক্ষমতা তাঁর স্বভাবগত মহত্ব, উদারতা ও অল্পেতুষ্টি ইত্যাদি গুণাবলীতে কোনো পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারেনি।
অগাধ জ্ঞান, সীমাহীন বিনয় ও উদারতার সাথে আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর মধ্যে তাকওয়া
ও আল্লাহ প্রীতির এক পরম সম্মিলন ঘটেছিল।
তিনি দিনে রোযা রাখতেন, রাতের তিন ভাগের প্রথম ভাগ নামাযে অতিবাহিত করতেন। তারপর তাঁর
স্ত্রীকে ডেকে দিতেন। তিনি রাতের
দ্বিতীয়ভাগ নামাযে কাটিয়ে তাদের কন্যাকে জাগিয়ে দিতেন। কন্যা রাতের বাকী অংশটুকু নামাযে দাঁড়িয়ে অতিবাহিত করতেন। এভাবে
তাঁর বাড়ীতে সমগ্র রাতের মধ্যে কখনো ইবাদত বন্ধ হতো
না। বিখ্যাত পণ্ডিত ইক্রামা বলেন,
আবু হুরায়রাহ্
(রাঃ) প্রতিদিন বার হাজার বার তাসবীহ পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, আমি আমার
প্রতিদিনের
পাপের সম পরিমাণ তাসবীহ পাঠ করে থাকি।
আবু হুরায়রাহ্
(রাঃ) নিজে যেমন মুরুব্বিদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন,
তেমনি সকলকে
তিনি উপদেশ দিতেন মাতাপিতার সাথে সদাচরণের,
আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার। একদিন
তিনি দেখতে পেলেন, দু’জন লোক পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন
অন্যজন থেকে অধিকতর বয়স্ক।
কনিষ্ঠজনকে ডেকে
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সঙ্গে যে লোকটি হাঁটছেন, তিনি তোমার কে হন? ছেলেটি উত্তর দিল, আমার আব্বা। তিনি বললেন, তুমি কখনো তাঁর নাম ধরে ডাকবে না, তাঁর আগে আগে চলবে না এবং তাঁর বসার আগে কোথাও
বসবে না।
মৃত্যুঃ
অধিক হাদিস বর্ণনার কারণঃ
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) মাত্র তিন বছর রাসুল (সাঃ)-এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। অথচ তাঁর থেকে ৫৩৭৪টি হাজার হাদিস
বর্ণিত হয়েছে। মাত্র তিন বছর সময়ে এত সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব
হয়েছিল তিনটি কারণে—
(ক) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) শেষ তিনটা বছর
খেয়ে না খেয়ে রাসুল (সাঃ)-এর নিকট পড়ে থাকতেন।
তিনি ছিলেন আহ্লু সুফ্ফার একজন। মুহাজিররা যখন বাজারে ব্যস্ত থাকতেন আর
আনসাররা যখন নিজেদের সম্পদের
দেখাশনা করতেন, তখনও তিনি রাসুল (সাঃ)-এর সাথে থাকতেন। ফলে অনেক হাদিস তার পক্ষে
শোনা সম্ভব হতো, তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতো না।
(খ) তাঁর স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। সেটা আসলে ছিল রাসুল (সাঃ)-এর একটি মু’জিযা। একবার তিনি স্মরণশক্তির
ব্যাপারে অভিযোগ করায় রাসুল (সাঃ) তাঁকে তাঁর চাদর বিছিয়ে দিতে বলেন। অতঃপর রাসুল (সাঃ) ওই চাদরের উপর
নিজের দু’হাত ফেরে তাঁকে চাদরটি জড়িয়ে নিতে
বলেন। এরপর থেকে তিনি আর কোনো হাদিস ভুলেননি।
অসাধারণ লিখা অনেক নতূন কিছু জানতে পারলাম
ReplyDelete