হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) শায়েরুর রাসূল বা রাসূলের কবি
(৫৫৩ – ৬৭৪
খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
তিনি মুখাযরাম (যে সকল
কবিসাহিত্যিক প্রাক-ইসলামি ও ইসলামি উভয় যুগে সাহিত্য চর্চা করেছেন) কবিকুলের
মধ্যে অন্যতম। কুৎসা রচনায় ও প্রতি-উত্তর প্রদানে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। রাসুল সা
ও ইসলামের প্রশংসায় এবং কাফির-মুশরিকদের প্রতি-উত্তরে বহু কবিতা রচনা করেছেন। আর এ
কারণেই তিনি শায়েরুর-রাসূল (রাসুলের
কবি) উপাধিতে ভূষিত।
পরিচিতি ও জন্ম
তিনি খাযরাজ বংশীয় একজন
মুখাযরাম কবি। নাম হাসসান, উপনাম আবুল ওয়ালিদ, পিতার নাম সাবিত । ৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দে
মদিনায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
ইসলাম-পূর্ব জীবন
তিনি মদিনায় লালিত পালিত
হয়েছেন। প্রাক-ইসলামি ও
ইসলামি উভয় যুগেই কাব্য চর্চা করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি মানাযেরা
ও গাসাসেনাহ-দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তাঁদের থেকে প্রচুর উপহার-উপঢৌকনও পেয়েছেন। এছাড়া জাফনা
পরিবারের স্তুতি বর্ণনা করে অসংখ্য কবিতা রচনা করেছেন। ফলে ইসলামোত্তর জীবনেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও
তাঁদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর।
রাসুলের কবি রূপে
হিজরতের পরে, নিজ গোত্রের এক
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসুল সা-র নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সে-দিন
থেকেই রাসুল ও ইসলামের সেবায় আত্মনিবেদন করেন। পরবর্তীতে কোরায়েশের কুৎসা-বাণ
অসহনীয় হয়ে উঠলে রাসুল সা আক্ষেপের সুরে বলেন-
" مَا يَمْنَعُ
الَّذِيْنَ
نَصَرُوا
اللهَ
وَ
رَسُوْلَهُ
بأسلحتهم
أن
ينصروه
بألسنتهم"
(যারা নিজ তরবারি দিয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সাহায্য
করেছেন, কথা দিয়ে সাহায্য করতে কোন জিনিস তাঁদের বাধা দিচ্ছে)
কবি হাসসান "أنا
لها"(আমি এই কাজের লোক) বলে তাঁর আহ্বানে
সাড়া দেন। অতঃপর রাসুল সা হাসসানকে প্রশ্ন করেন- “আমিও কোরায়েশ বংশীয়, তাহলে
কীভাবে তুমি তাদের কুৎসা করবে?” এর উত্তরে কবি বলেছিলেন-
" أسُلُّكَ مِنْهُمْ
كَمَا
تُسَلُّ
الشَّعْرَةُ
مِنَ
الْعَجِيْنِ"
(আমি আপনাকে তাঁদের মধ্য থেকে বের করে আনবো, যেভাবে মথিত
আঁটা থেকে চুল বের করে আনা হয়)
অতঃপর রাসুল সা তাঁর জন্য
প্রার্থনা করলেন- اللّهُمّ أيّدْهُ بروْحِ القُدس (আল্লাহ্! তুমি জিবরাইল দ্বারা এর
সাহায্য করো)। ফলে রাসুল সা-এর
অনুমতি ও আশীর্বাদ নিয়ে হাসসান রা এমনভাবে কোরায়েশদের কুৎসা করলেন যে তাদের সকলকে
নির্বাক করে দিলেন।
পরলোকগমন
এ সফলতার পর তাঁর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল,
খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল চতুর্দিকে। বায়তুল-মাল (মুসলিমদের কোষাগার) হতে তিনি মৃত্যু কাল
পর্যন্ত ওযীফা (সাম্মানিক ভাতা) প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
১২০ বছর বয়সে ৬৭৪ খ্রি মোতাবেক
৫৪ হিজরিতে তিনি পরলোকগমন করেন।
কাব্য-প্রতিভা
তিনি জাহেলি যুগে খাযরাজের কবি ছিলেন। নবী সা-এর জীবদ্দশায় রাসুলের
কবি ও ইসলামি যুগে ইয়ামেনের কবি ছিলেন। জাহেলি যুগে তিনি কঠিন শব্দে ও দৃঢ়
ভঙ্গিমায় কবিতা রচনা করতেন, কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর এই তেজস্বীতা দুর্বল হয়ে
পড়ে। তাই আস্মায়ী মন্তব্য করেছেন- " إن شعره
لم
يقو
إلا
في
الشر،
فلما
جاء
الإسلام
بالخير
ضعف"
(নিশ্চয় তাঁর
কবিতা শুধু অমঙ্গলের ক্ষেত্রেই সবল ও শক্তিশালী ছিল। ফলে যখন ইসলাম মঙ্গল বয়ে আনল,
তাঁর কবিতা তীব্রতা ও তেজস্বীতা হারিয়ে ফেলল।)
উপজীব্য
তিনি আত্মগৌরবমূলক (فخرية), সাহসিকতা ও বিরত্বগাথা (حماسة), প্রশংসামূলক (مدحية) ও কুৎসামূলক (هجائية) বিবিধ আঙ্গিকে কবিতা রচনা করেছেন।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে গাসাসেনাহ ও মানাযেরাহদের প্রশংসা করে কবিতা রচনা করেছেন। আর
ইসলাম গ্রহণের পরে রাসুল সা-র প্রশংসায় ও মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে বহু কবিতা সৃজন
করেছেন। এছাড়া নিজ গোত্র ও বংশের বিরত্বের গান গেয়েছেন বহু কবিতায়।
কবিতার বৈশিষ্ট
(ক) তিনি তীব্র কুৎসাকারী ও
তীক্ষ্ণ বিদ্রূপকারী ছিলেন। বিশেষত, কোরায়েশদের এমন তীব্র কুৎসা করেছিলেন যে তারা
নির্বাক হয়ে পড়েছিল। এরই দরুন বলা হতো- " لو مزج
البحر
بشعره
لمزجه" (তাঁর কবিতা যদি সমুদ্রে মেশানো হয় তাহলে সমুদ্রকেও নিজ রঙে
রাঙিয়ে দেবে ।) যেমন তিনি বলেছেন-
بأن
سيوفنا
تركتك
عبدا و
عبد
الدار
سادتها
الإماء
(হে আবু সুফিয়ান!) আমাদের তরবারি তোমাকে দাসে পরিণত করেছে।
আর (তোমার গোত্র) আব্দুদ্দার-এর নেতৃত্ব দেয় বাঁদিরা।
(খ) গৌরব
বর্ণনায় অনেকের মতে তিনি আমর বিন কুলসুমের সমকক্ষ ছিলেন। নিজ গোত্রের গৌরব বর্ণনায়
বলেছেন-
لقد
تقلدنا
العشيرة
أمرها و
نسود
يوم
النائبات
و
نعتلي
নিঃসন্দেহে আমরা সমাজের বিষয়সমূহ নিজ-কাঁধে বহন করি। আর
দুর্যোগ ও সংঘর্ষের মুহূর্তে আমরাই নেতৃত্ব দিই এবং জয়ী হই।
(গ) প্রশংসামূলক কবিতা রচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যাবারকানের
প্রতিউত্তরে রাসুল ও তার গোত্রের প্রশংসায় বলেছিলেন-
إن
الذوائب
من
فهر
و
إخوتهم قد
بينوا
سنة
للناس
تتبع
নিশ্চয় ফাহার গোত্রের সিংহেরা (নেকড়েরা) জনগণের জন্য যে
পথ স্পষ্ট করে দিয়েছে, তা-ই অনুসরণ করা হবে।
(ঘ) তিনি ছিলেন ইসলামের তরে
নিবেদিত প্রাণ। তাই ইসলামী পরিভাষার প্রাচুর্য রয়েছে তার রচনায়। তিনি কবিতায়
কুরআনের বাক্যাংশ সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন, যেমন-
الحمد
لله
و
النعماء
و
الأمر
كله فإياك
نستهدي
و
إياك
نعبد
যাবতীয় স্তুতি, করুণা ও
কর্তৃত্ব তাঁরই। তাই আমরা শুধু তাঁরই সকাশে সু-পথের সন্ধান যাঞ্চা করি এবং শুধু
তাঁরই ইবাদত (আনুগত্য ও উপাসনা) করি।
(ঙ) অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের
বিষয়ও স্থান পেয়েছে তাঁর কবিতায়। তাঁর এ ধরণের কোনও কোনও কবিতা প্রবাদের আবহে আজও
সমানভাবে প্রচলিত। এও উল্লেখ্য যে, তিনি ছিলেন
স্বভাব কবি। কাব্যিক-সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অহেতুক পরিশ্রম করতেন না। সে-বিষয়ে
তিনি নিজেই বলেছেন-
لا
أسرق
الشعراء
ما
نطقوا بل
لا
يوافق
شعرهم
شعري
কবিরা কী বলেছেন- আমি তা অনুকরণ করি না। ফলে, আমার কবিতার
সাথে তাঁদের কবিতা মেল খায় না।
লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো৷ অল্প পরিসরে কবির বিশাল জীবন ও কাব্য চর্চার বিবরণ সংক্ষিপ্তভাবে এতে ফুটে উঠেছে৷ স্নেহভাজন তরুণ লেখকের সাফল্য কামনা করছি৷ আরো লেখা প্রত্যাশা করছি৷
ReplyDeleteSir, apnader sneho, valobasa o guidance amake poth dekhay...
Deleteলেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো৷ অল্প পরিসরে কবির বিশাল জীবন ও কাব্য চর্চার বিবরণ সংক্ষিপ্তভাবে এতে ফুটে উঠেছে৷ স্নেহভাজন তরুণ লেখকের সাফল্য কামনা করছি৷ আরো লেখা প্রত্যাশা করছি৷
ReplyDeleteKhub bhalo lagse
ReplyDeleteআলহামদুলিল্লাহ, লেখাটি পড়ে খুবই উপকৃত হলাম। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আপনাকে হায়াতে তাইয়েবা সে হাতে কুল্লিয়া দান করুক।
ReplyDeleteভালো লাগলো।
ReplyDeleteনবী করীম স.তার জন্য একটি মেম্বরও তৈরি করেছিলেন...
প্রত্যেকটা আরবী উল্টাপাল্টা লিখে বসে আছেন। ভালো কাজ ভালোভাবে করা লাগে।
ReplyDeleteGd
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete