Saturday 1 February 2020

অ্যাডোনিসঃ আমার মাতৃভূমি



 আমার মাতৃভূমি 
অ্যাডোনিস, সিরিয়া   
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

বিষাদের প্রকোপে শুকিয়ে যায় যে মুখ  
আমি তার কাছে মাথা নত করি,
আমি মাথা নত করি সেই রাস্তার কাছে
যার প’রে দাঁড়িয়ে ভুলে যাই নিজ কান্নার কথা;  
যে পিতা মারা গেল মেঘের মতো সবুজ হয়ে
নিজের বুকে পাল তুলে, আমি তার কাছে মাথা নত করি;   
আমি মাথা নত করি সেই শিশুর কাছে, যে শিশু
বিক্রি হয়ে যায় প্রার্থনা জুতো পালিশের জন্য
যদিও আমার দেশে সকলে প্রার্থনা করে  
জুতো পালিশও করে প্রতিদিন।       
আমি মাথা নত করি সেই পাথরের কাছে
যার প’রে নিজ ক্ষুধা দিয়ে আমি খোদাই করেছি এ কথা;
সে যে আবর্তিত হয় আমার চোখের পাতায়
বৃষ্টি ও বিদ্যুৎ হয়ে। আমি মাথা নত করি
সেই বাড়ির কাছে, যার মাটি আমি বয়ে চলেছি
আমার এই ভবঘুরে জীবন জুড়ে—
সবই আমার মাতৃভূমি; শুধু দামেস্ক নয়


وطن
أدونيس

لِلْوجوهِ التي تَتيبّسُ تحت قناع الكآبه
أنحني؛ لدروبِ نسيتُ عليها دموعي
لأبٍ مات أخضراً كالسّحابه
وعلى وجهه شراعُ
أنحني؛ ولطفل يُباعُ
كي يُصلّي وكي يمسحَ الأحذيه-
كلنا في بلادي نصلّي كلنا نمسح الأحذيه
ولِصخرٍ نقشتُ عليه بجوعي
أنّه مَطرٌ يتدحرجُ تحت جفوني وبَرْقُ
ولبيتٍ نقلتُ معي في ضياعيَ تُرابَهْ
أنحني - هذه كلها وَطني، لا دِمشْقُ.


أغاني مهيار الدمشقي (الأعمال الشعرية-1) 259


অ্যাডোনিস। প্রকৃত নাম ‘আলি আহ়্‌মাদ সা‘য়ীদ ইস্‌বার। জন্ম ১৯৩০ সালে পশ্চিম সিরিয়ার কাশাবিন গ্রামেঅন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের লেখকদের মতো তিনিও আবিষ্কার করেছেন নির্বাসনের সীমাহীন যন্ত্রণাআর তাই আক্ষেপ করে একদিন বলেছিলেন, আমি এমন একটি ভাষায় লিখি যেটি আমাকে নির্বাসন দিয়েছেতাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টি হল আগ়়ানী মিহ্‌ইয়ার আদ্‌-দিমাশ্‌ক্বী (দ্য সংস অফ মিহ্‌ইয়ার দ্য দামাস্কিন) ১৯৬১-তে প্রকাশিত। এই কাব্যগ্রন্থে তিনি আবিষ্কার করেছেন এমন এক কাব্যকৌশল যার মাধ্যমে তিনি কবিতার সামাজিক-রাজনৈতিক দায়িত্বের সাথে অভিজ্ঞতার সুক্ষ্ণ পরিশীলীত বুনন, কবিতার আকর্ষনীয় নান্দনিকতা এবং নির্বাসনের প্রতীকী কাব্যভাষার মেলবন্ধন ঘটাতে সফল হয়েছেন ফলে ধীরে ধীরে তাঁর কবিতা হয়ে ওঠেছে জটিল নাটকীয়তায় ঋদ্ধ, বিবিধস্বরে জারিত এবং ভাষা ফর্মের দিক দিয়ে অনেক নিরীক্ষণ-প্রবণএর সাথে তিনি সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন ক্লাসিক্যাল আরবি কবিতার মরমী গভীরতা এবং স্বদেশ আশ্রিত বিপ্লবী মনোভাব আর  ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিসেতু গড়েছেন আরবি ভাষার সাথে পশ্চিমা ও গ্রীক ঐতিহ্যেরকবিতাকে মুক্ত করেছেন ঐতিহ্যগত, গতানুগতিক রীতিনীতি থেকে। তাঁর দীর্ঘ লেখক-জীবনে তিনি দুবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছেন তাঁর কবিতার সামগ্রিক উপস্থাপনরীতি যেকোনো কাব্যমোদীর মনকে ছুঁয়ে যায়; বিশেষ করে ভাব ও ভাষার নিরীক্ষণ-প্রবণতা, আরবি কবিতার গনগনে আগুন আর তাতে জ্বলে ওঠা এক নির্বাসিত কবির পরিশীলিত নান্দনিক প্রাণময়তা

[কর্ণ, জানুয়ারি ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত] 




No comments:

Post a Comment