Thursday 10 March 2016

আবু মুহাম্মদ আল-কাসিম বিন আলী আল-হারীরী


আল্‌-ক়াসিম বিন্‌ ‘আলী আল্‌-হ়ারীরী
(১০৫৪ – ১১২ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ 
আব্বাসী যুগে যারা গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রকে লালন করেছিলেন হারীরী তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি হামাযানীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রায় ৫০টি মাক়ামাহ রচনা করেন। এবং নিজের স্বতন্ত্র রচনাশৈলী দ্বারা সমকালীন গদ্য সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ক়াসিম, উপনাম আবু মুহ়াম্মদ, পিতার নাম আলী, পিতামহের নাম মুহ়াম্মদ, প্রপিতামহের নাম উস্‌মানতাঁর পূর্বপুরুষরা রেশমের ব্যবসা করতেন বলে তিনিও হ়ারীরী নামে পরিচিত হন। অনেক ঐতিহাসিক তিনি উক্ত পেশার সাথে জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ইরাকের বাস়রা শহরের নিকটবর্তী মাশান নামক গ্রামে ৪৪৬ হিজরী মোতাবেক ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
 
প্রতিপালন ও শিক্ষাঃ 
জ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি অধিক আগ্রহের কারণে তিনি পৈতৃক পেশাকে অপছন্দ করতেন। ফলে তা ত্যাগ করে জ্ঞানীজনদের আসরকে বেছে নেন। নিরলস প্রচেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে সাহিত্য জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর বিখ্যাত কতিপয় গুরু হলেন আল্‌-ফাযল আল্‌-কাসবানী, ইবনুস্‌-সাব্বাগ, আবু ইস্‌হাক সিরাজী, আল-মুকরী প্রমুখ।
 
কর্মজীবনঃ 
তিনি কর্মজীবনে তথ্য-সচিবের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাই সুধীমহল ও সর্বসাধারণের নিকট তাঁর বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা ছিলতিনি বাসরায় আজীবন তথ্য-সচিবের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এমনকি তাঁর পরে খলীফা মুক্তাফী বিল্লাহর আমল পর্যন্ত উক্ত পদটি তাঁর বংশে বহাল ছিল।
 
মৃত্যুঃ 
তিনি ৬ই রজব ৫১৬ (মতান্তরে ৫১৫) হিজরী মোতাবেক ১১ই সেপ্টেম্বর ১১২২ খ্রিস্টাব্দে বাসরার বানু হারেম মহল্লায় পরলোক গমন করেন। অনেকে তাঁর মৃত্যু সন সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তিনি ৫৩৮ হিজরীর পর মৃত্যু বরন করেন। কারণ, ইব্‌নু খাল্লিকান ৫৩৮ হিজরীতে তাঁর ওয়াসিত ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেছেন।
 
ব্যক্তিত্বঃ 
তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী, সূক্ষ্ম চিন্তাশীল, ভাষা ও সাহিত্যে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিত্ব। শব্দ-জ্ঞান, প্রবাদ-প্রবচন, বাগ্‌ধারা, আরবী ব্যাকরণ ও অলংকার শাস্ত্রে তিনি বিশেষ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। গদ্য ও পদ্য উভয়ে তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। তিনি অত্যন্ত সহনশীল, সৎ স্বভাব ও সত্য-প্রিয় মানুষ ছিলেন।
 
রচনাবলীঃ 
তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন, যেগুলি তাঁর অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর। যেমন দুররাতুল্‌ গ়াওয়াস় ফী আওহামিল্‌ খ়াওয়াস় (এতে তিনি সমকালীন লেখকদের সমালোচনা করে শব্দ ও বাক্যের যথার্থ ব্যবহারের প্রতি দিকনির্দেশনা করেন), মুলিহ়্হ়াতুল্‌ ই‘রাব (আরবী ব্যাকরণের বিষয়গুলিকে পদ্যে বর্ণনা করেছে), স়ুদূরু যামানিল্‌ ফুতূর ওয়া ফুতূরু যামানিস়্ স়ুদূর (এটি ইতিহাস গ্রন্থ), দীওয়ানুল্‌ হ়ারীরী (তাঁর কাব্য সংকলন), দীওয়ানু রাসাইলিল্‌ হ়ারীরী (তাঁর ক্ষুদ্র রেসালাহ-সমষ্টি) আল্‌-মাক়ামাতুল্‌ হ়ারীরিয়্যাহ্‌ তাঁর শ্রেষ্ঠ ও অমর কীর্তি।
 
মাক়ামাহ্‌ সাহিত্য তাঁর অবদানঃ 
মাক়ামাহ কী? এ প্রসঙ্গে আহ্‌মাদ হাসান যাইয়াত বলেছেন
المقامة حكاية قصيرة أنيقة الأسلوب تشتمل على عظة أو ملحة
অর্থাৎ, রম্য রচনার ধাঁচে রচিত ছোট গল্পকে মাকামাহ বলা হয়, যাতে কোনও উপদেশ বা রসাত্মক বর্ণনা থাকে। মাক়ামাহ শব্দটি মূলত মাক়াম শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ দাঁড়াবার স্থান। ধীরে ধীরে শব্দটির অর্থে ব্যাপকতা সৃষ্টি হয় এবং তা মজলিস ও স্থানের অর্থ ব্যবহার হতে থাকে। পরবর্তীতে মজলিসে উপস্থিত ব্যক্তি, অতঃপর প্রদত্ত বক্তৃতা অর্থেও ব্যবহার হয়। সাহিত্যের এ শাখাটির উদ্ভাবক বাদীয্‌ যামান হামাযানী। তিনি চার শত মাক়ামাহ্‌ রচনা করেছিলেন। তাঁরই অনুসরণ করে পরবর্তীতে অনেকে রচনা করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেছেন হারীরী। তিনি প্রায় পঞ্চাশটি মাক়ামাহ্‌ রচনা করেন। তাঁর মাক়ামাহ্‌তে বর্ণনাকারী হলেন হ়ারিস বিন হাম্মাম এবং নায়ক হলেন আবু যায়েদস্‌-সুরুজী।   

No comments:

Post a Comment