Wednesday 2 March 2016

আব্দুল্লাহ ইবনুল মুকাফফা


আব্দুল্লাহ্‌ব্‌নুল মুক়াফ়্ফ়া’
(৭২৪ ৭৫৯ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্ম
আব্বাসী যুগের লেখকদের প্রথম স্তরের শিরোমণি ছিলেন ইব্‌নুল্‌ মুক়াফ়্ফ়া। আরবী ও ফারসী মিশ্রণে তিনি এক অভিনব বর্ণনা ভঙ্গির আবিষ্কার করে ছিলেন, যার দরুন তিনি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রকৃত নাম ‘আব্দুল্লাহ্‌, উপনাম আবু মুহাম্মাদ। পিতা দাজ়্ওয়াইহ্‌ একজন পারসিক অগ্নি উপাসক ছিলেন। তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আমলে বায়তুল মালের কর্মচারী ছিলেন। দুর্নীতি করার কারণে হাজ্জাজ তাকে শাস্তি স্বরূপ লোহার লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড প্রহার করেন, যার কারণে তার একটি হাত বেঁকে যায়। ফলে তার নামকরণ করা হয় মুক়াফ়্ফ়া’ অর্থাৎ বাঁকা হাত বিশিষ্ট ব্যাক্তি। ইব্‌নুল্‌ মুক়াফ়্ফ়া৭২৪ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের জূর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
 
প্রতিপালন ও শিক্ষাঃ
তিনি বাসরা নগরীতে অন্যান্য ধনী-পুত্রদের ন্যায় বেশ আদর যত্নেই লালিত পালিত হন। ছোটবেলা থেকেই তার লালন পালন হয়েছিল ইসলামী আদব-কায়দা মেনেতিনি শুরু থেকেই শিক্ষার প্রতি প্রচণ্ড যত্নবান ও আগ্রহী ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই ফারসী সহ আরবী ভাষা ও সাহিত্যে বুৎপত্তি অর্জন করেন।
 
ইসলাম গ্রহণঃ
তাঁর প্রতিভা ও ভাষার প্রতি দক্ষতাকে দেখে উমাইয়া যুগে দাউদ বিন হুবাইরাহ্‌ ও পরবর্তীতে আব্বাসী খলীফা মানসুরের পিতৃব্য ঈসা বিন ‘আলী তাঁকে কাতিব (কেরানী) নিয়োগ করেন। তাঁর হাতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পূর্ব নাম ছিল রোয্‌বাহ। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম রাখেন ‘আব্দুল্লাহ ও উপনাম আবু মুহাম্মদ।
 
মৃত্যুঃ
ঈসা ও সুলামান পিতৃব্যদ্বয়ের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন বলে মানসুর তাঁর প্রতি প্রচণ্ড রেগে ছিলেন। এমন সে জন্য তিনি বাসরার শাসক সুফিয়ান বিন মু’আবিয়াকে তাঁর হত্যার প্ররোচনা দেন। সুফিয়ান নিজেও সেই ইচ্ছা পোষণ করতেন, তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে পুড়িয়ে মারেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ছত্রিশ বছর।
 
স্বভাবচরিত্রঃ
তিনি অত্যন্ত প্রখর মেধা সম্পন্ন এক ব্যাক্তিত্ব, স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ ভাষী ছিলেন। তাঁর সাহিত্য জ্ঞান ও বুৎপত্তি অতুলনীয়। তাই বলা হয়ে থাকে
لم يكن للعرب بعد الصحابة أذكى من الخليل ولا كان في العجم أذكى من ابن المقفع
(সাহাবাদের (রাঃ) পরে আরবদের মাঝে খালীল-এর থেকে অধিক মেধাবী এবং অনারবদের মাঝে ইব্‌নুল্‌ মুক়াফ়্ফ়া’-এর থেকে অধিক মেধাবী জন্মায়নি।)
 
তাঁর রচনা সমূহঃ
তিনি প্রচুর গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে— কালীলাহ্‌ ওয়া দিম্‌নাহ্‌ (ফারসী হতে অনূদিত), আল্‌-আদাবুল্কাবীর, আল্‌-আদাবুস্সাগীর (চরিত্র বিষয়ক) আয়ীননামাহ্‌ (ঘোড়ার স্বভাব সম্পর্কে), আত্‌-তাজ (নৌশেরওয়ার বর্ণনায়), রেসালাতুস্‌ সাহাবাহ্‌, ঈসাগুজী, মুয্‌দাক, আদ্‌-দুর্‌রাতুস্‌ সামীনাতু ওয়াল্‌ জাওহারাতুল্‌ মাক্‌নূনাহ্‌।
 
তাঁর রচনাভঙ্গীঃ
তিনি খুব সংক্ষিপ্ত বাক্য লিখতেন। সাবলীল ও অন্তমিল শব্দ ব্যবহারে তিনি সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। তবে তিনি শব্দ অপেক্ষা অর্থের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করতেন। আরবী ও ফারসীর মিশ্রণে তিনি এক অভিনব ভঙ্গীর আবিষ্কার করে ছিলেন।

1 comment: