Monday 7 March 2016

আবু তাম্মাম হ়াবীব বিন আওস

আবু তাম্মাম হ়াবীব বিন আওস  
(৮০৪ ৮৪৬ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ
মুয়াল্লাদুন কবিগোষ্ঠির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আবু তাম্মা দীওয়ানুল্‌ হামাসা সংকলনের দৃষ্টিকোন থেকে তিনিই শীর্ষস্থানীয়। প্রশংসা ও শোকগাথামূলক কবিতা রচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি একাধারে কবি, সংকলক ও সুসাহিত্যিক ছিলেন। প্রকৃত নাম হ়াবীব, উপনাম আবু তাম্মাম। পিতার নাম আওস। তবে পিতার প্রকৃত নাম ছিল সাদূস। ইসলাম গ্রহণের পর তা পরিবর্তিত করে আওস রাখেন। তিনি নিজেকেত়্-ত়ায়ী বংশোদ্ভূত দাবী করতেন। দামেস্ক প্রদেশের জাসিম গ্রামে ৮০৪ মতান্তরে ৮০৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
 
বাল্য জীবনঃ
কবির জন্মের কিছুদিন পরেই তাঁর তাঁতি পিতা দামেস্কে বসবাস শুরু করেন। কবি সর্বদা বয়নকাজে পিতাকে সাহায্য করতেন বলে বাল্যকালে বিদ্যার্জনের সুযোগ পাননি।
 
যৌবনকালে বিদ্যার্জনঃ
যৌবনের প্রারম্ভে পিতার মৃত্যুর পর তিনি মিশর যাত্রা করেন। সেখানে জামে’ঊ আম্‌র ইব্‌নুল্‌ ‘আস়্ নামক মসজিদে পানি সরবরাহের কাজে নিযুক্ত হন। সে যুগে মসজিদই ছিল জ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের আশ্রয়স্থল। তাই অবসর সময়ে তিনি বিদ্যার্জনের প্রতি মনযোগী হন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি লব্ধকবি রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।
 
কাব্যচর্চা ও দেশভ্রমনঃ
কবির স্বীয় বর্ণনানুসারে তিনি সর্বপ্রথম আব্বাস বিন লাহিয়ার প্রশংসায় কবিতা রচনা করেন। কিছুদিন পর তিনি সিরীয়ায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে খলিফা মামুনের সম্মুখে কবিতা পাঠ করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে বাগদাদে উপস্থিত হয় খলিফা মুতাসিম কর্তৃক পুরস্কৃত ও সমাদৃত হন।
 
 হামাসা সংকলনঃ
খোরাসান হতে বাগদাদ প্রত্যাবর্তনের সময় হামাদানে ইব্‌নু সালামাহ্‌ নামক জনৈক বন্ধুর নিকট অবতরন করেন। প্রচন্ড বরফ পড়ার কারণে যাত্রা অসম্ভব হওয়ায় অতিথি বিষন্ন, কিন্তু আপ্যায়ক উৎফুল্ল হন এবং বলেন "وطن نفسك على البقاء, إن الثلج لا يخسر الا بعد زمان" (এখানে থাকার ব্যাপারে নিজের মনকে বোঝান, মনস্থির করুন। কারণ তুষারপাত বন্ধ হতে সময় লাগবে।) আর স্বীয় সংগৃহিত পুস্তকসমূহ তাঁর নিকট উপস্থিত করেন। কবি সেগুলি অধ্যায়ন করে সেখানে পাঁচটি পুস্তক রচনা করেন। তার মধ্যে দীওয়ানুল্‌ হ়ামাসাহ্‌ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।
 
মৃত্যু-বরণঃ
অত্যাধিক পরিশ্রমের কারনে কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ইহকাল ত্যাগ করেন।
 
চরিত্র ও বৈশিষ্টঃ
তিনি কৃষ্ণবর্ণের, দীর্ঘকায় ও অত্যন্ত মিষ্ট ভাষী ছিলেন। কিঞ্চি জড়তা থাকায় নিজে না করে সালেহ নামক এক ব্যক্তিকে দিয়ে নিজের কবিতাগুলি আবৃত্তি করাতেন। অসাধার মেধা, উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর স্মৃতি-শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। কথিত আছে, কাসীদাহ্‌ ও মাক্‌তু’আহ্‌ ছাড়াও তাঁর চৌদ্দ হাজার উর্‌জুযাহ্‌ মুখস্থ ছিল।
 
কাব্য প্রতিভাঃ
তিনি মুয়াল্লাদুন কবিগোষ্ঠির ২য় স্তরের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তিনি তাঁর কবিতায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধন করেছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতি-সভ্যতার দৃষ্টিকোন থেকে আরবদের সর্বাধিক গৌরবময় যুগে জন্ম গ্রহণ করায় তাঁর কবিতায় অভিনব কলা-কৌশল স্থান পায়। তার ভাষা ছিল সাধারণ, তবে কোথাও এমন যুক্তিপূর্ণ বাক্য ব্যবহার করেছেন যে রচনায় সাবলীলতার বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই অনেকে মনে করেন, তিনি কবিতা রচনার চেয়ে কবিতা সংকলনে অধিক বুৎপত্তি ও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।
 
কবিতার উপাদানঃ
বেদুঈন আরবদের দৈনন্দিন জীবনের রীতি-নীতি ও কার্যকলাপ তাঁর সাহিত্যের অন্যতম উপাদান। তিনি বীরত্ব, শোকগাথা, শিষ্টাচার, প্রনয়গীতি, ব্যাঙ্গাত্বক, বর্ননাবিষয়ক ও আক্রমন প্রত্যুত্তর মূলক কবিতা প্রচুর রচনা করেছেন। তিনি বেদুঈন ও আরব ভদ্র সমাজের প্রচলিত রীতি-নীতির সমন্বয় সাধন করেছেন। তবে তাঁর সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপাদান ইতিহাস।
 
কাব্যিক বৈশিষ্টসমূহঃ
মুয়াল্লিদুন কবিগোষ্ঠির দ্বিতীয় স্তরের শীর্ষস্থানীয় এই কবি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল কবিদের ভাবের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তিনি নিজের কবিতার জন্য নতুন স্টাইল গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভাষার সহজতার চেয়ে অর্থের সৌন্দর্যকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তাঁর বহু কবিতায় ভাষাগত জটিলতা পরিলক্ষিত। তবে তাঁর ত্রুটিমুক্ত কবিতা ত্রুটিযুক্ত কবিতা অপেক্ষা অধিক সংখ্যক। তিনি কখনও কখনও চমৎকার অর্থপ্রদ প্রবাদবাক্য ও অভিনব প্রজ্ঞাসূচক বাক্য প্রয়োগ করতেন। তিনি জ্ঞানপূর্ণ বক্তব্যগুলিকে প্রবাদবাক্যে, যুক্তি, প্রমান ও সূক্ষ্ম ইঙ্গিতের মাধ্যমে পেশ করতেন। এরপর তিনি তা তিবাক, ইস্‌তে’আরাহ্‌ ও জেনাস (আরবি অলংকার শাস্ত্রের কিছু বাক্য-কৌশল) দ্বারা গোপন করার চেষ্টা করতেন। তিনি তাঁর এক কবিতায় আহমাদ-বিন-মুতাসিমের প্রশংসা করে বলেছেন—
إقدام عمرو في سماحة حانم                    في حلم أحنف في ذكاء إياس
لا تنكروا ضربي له من دونه                    مثلا شرودا في الندى والبأس
فالله قد ضرب الأقل لنوره                    مثلا من المشكاة والنبراس

No comments:

Post a Comment