এভাবেই বেঁচে থাকুক মানবতা...!
একটা সরু গলির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে দেখি, ইলেকট্রিক পোষ্টের সাথে একটা কাগজ ঝুলছে। উৎসাহ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। গিয়ে
দেখি, কাগজের গায়ে লেখা আছে-- ''আমার ৫০ টাকার একটা নোট এখানে
হারিয়ে গেছে। আপনারা যদি কেউ খুঁজে পান তবে আমাকে সেটা পৌছে দিলে বাধিত থাকবো। আমি একজন বয়স্ক মহিলা। চোখে খুব
কম দেখি"। তারপরে নীচে একটা ঠিকানা।
এরপর, একে ওকে জিজ্ঞেস করে, খুঁজে খুঁজে ঐ ঠিকানায় পৌঁছলাম। হাঁটা পথে মিনিট
পাঁচেক হবে। গিয়ে দেখি, একটি জরাজীর্ণ বাড়ির উঠোনে এক বয়স্ক বিধবা মহিলা বসে আছেন। আমার পায়ের
আওয়াজ পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-- "কে এসেছো?" আমি বললাম, "মা, আমি...। রাস্তায় আপনার ৫০ টাকার নোটটা খুঁজে পেয়েছি। আর তাই সেটা ফেরত
দিতে এসেছি।"
আমি বললাম, সে যাই হোক, সন্তান মনে করে আপনি টাকাটা রেখে দিন। আমার কথা
শোনার পর টাকাটা নিয়ে বললেন "বাবা আমি খুব গরীব। তোমায় যে কী খেতে দিই! একটু বসো। একটু জল অন্তত খাও।" বলে ঘর থেকে এক গ্লাস জল নিয়ে এলেন।
ফেরার সময় তিনি বললেন, "'বাবা, একটা কথা রাখবে আমার। যাওয়ার সময় ঐ কাগজটা ছিঁড়ে ফেলবে। ওটা সত্যিই আমি লিখিনি।"
উনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজ গন্তব্যের দিকে হাঁটা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে ভাবছিলাম, হয়তো সবাইকে উনি ঐ কাগজটা ছিঁড়ে ফেলতে অনুররোধ করেছেন। তারপরেও কেউই ঐ কাগজটি ছিঁড়ে ফেলেনি! সাথে ভাবছিলাম ঐ মানুষটার কথা, যিনি কাগজে ঐ কথাগুলো লিখে সেঁটে দিয়েছিলেন। ঐ সহায়সম্বলহীন বয়স্ক মানুষটাকে
সাহায্য করার জন্য এত সুন্দর একটা উপায় বের করেছিলেন। মনে মনে তাঁকে ধন্যবাদ দিলাম...।
হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো। একজন কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "ভাই, এই ঠিকানাটা কোথায় একটু বলতে পারবেন। আমি একটি ৫০ টাকার নোট পেয়েছি। উনাকে ফেরত দিতে চাই।"
শুনে, চোখের কোণে জল চলে আসল। তাঁকে পথ বাতলে দিয়ে নিজ গন্তব্যের দিকে হাঁটতে লাগলাম। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, দুনিয়া থেকে মানবতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি!
আশা-হতাশা মিশ্রিত একটা দীর্ঘশ্বাস নির্গত হল বুকের গভীর থেকে। সাথে মনের অন্তঃকোণ থেকে একটা প্রার্থনা উঠে এসে ঠোঁটের দরজা দিয়ে পাড়ি জমালো আরশের দিকে-- এভাবেই বেঁচে থাকুক মানবতা, সকলের মাঝে!
০৮ জানুয়ারি, ২০১৯
পার্কসার্কাস, কোলকাতা
No comments:
Post a Comment