Wednesday 9 January 2019

হারিস বিন হিল্লিযাহ্‌ আল্‌-ইয়াশ্‌কুরী

হারিস বিন হিল্লিযাহ্‌ আল্‌-ইয়াশ্‌কুরী  

(মৃত ৫৮০ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

জন্ম ও পরিচিতিঃ

প্রাক্‌-ইসলামী যুগে আরবী কাব্যসাহিত্য চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল। সে যুগে রচিত কাব্যগুলো আজও বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বিপুলভাবে সমাদৃতএই আরবী সাহিত্য কাব্যাকাশে উজ্জল নক্ষত্রগুলির মধ্যে কবি হারিস বিন হিল্লিযাহ উল্লেখযোগ্য ও অন্যতম তাঁর প্রকৃত নাম হারিসপিতার নাম হিল্লিযাহ্‌উপনাম আবুয্‌-যুলাইম কোন্‌ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত রূপে কিছু বলতে পারেননি।  

 

জীবনযাপনঃ  

বানু বাক্‌র গোত্রের অন্যতম প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। নিজ গোত্রের প্রতি ব্যাপক গর্ব করতেন। এমন কি সে কথা পরবর্তীতে প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। তাঁর জীবন আলেখ্য সম্বন্ধে বেশী কিছু জানা যায় না। শুধু তদানীন্তন শাসক আম্‌র বিন্‌ হিন্দের বিচারানুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে তাঁর কবিতা পাঠের ঘটনাটি ইতিহাস সুত্রে বর্ণীত হয়েছে

 

বাক্‌র ও তাগ্‌লিব গোত্রদ্বয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সেই বিরধের মীমাংসার জন্য উভয় গোত্রই শাসক আম্‌র বিন হিন্দের নিকট দ্বারস্থ হয়। হারিস শ্বেত রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাই পর্দার আড়াল থেকে তিনি সেই সালিশি সভায় নিজ গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন বলে ঐতিহাসিক হান্না আল্‌-ফাখুরী অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মুখে এই কবিতাটি শুনে আম্‌র এতটাই মুগ্ধ হন যে শ্বেত রোগী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অন্ন গ্রহণ করেন এবং তাঁর গোত্রের পক্ষে রায় দেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১৫৩ বছর।

 

পরলোকগমনঃ  

তিনি ষষ্ঠ শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে ইহলোক ত্যাগ করেন। হান্না আল্‌-ফাখুরী এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও আহ্‌মাদ হাসান যাইয়াত মনে করেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে

 

মু’আল্লাকাঃ

হারিসই একমাত্র কবি যিনি প্রাক-ইসলামী যুগে আবির্ভূত হয়েও মহাকবি ইম্‌রাউল কায়েসের প্রভাব মুক্ত হয়ে কবিতা রচনা করেছেন। তিনি তাঁর মু’আল্লাকাটি হীরা-রাজ আম্‌র বিন হিন্দের সম্মুখে তাঁরই সমকালীন এক অন্যতম কবিম্‌র বিন কুলসুমের প্রতিউত্তরে আবৃত্তি করেছিলেন। তাঁর এই মু’আল্লাকা রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর জাতির পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও প্রতিউত্তর প্রদান করা। এতে ৮৫টি পঙক্তি আছেরচিত হয়েছে ৫৫৪-৫৬৯-এর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে। এটি “আল্‌-বাহ্‌রুল্‌খাফীফ ছন্দে রচিত। এর আলোচ্য বিষয়গুলি হল— কবি প্রেমিকা ও তার বাস্তুভিটার স্মৃতি রোমন্থন করে এবং উষ্ট্রির বর্ণনা দিয়ে নিজ মু’আল্লাকার সূচনা করেছেন। অতঃপর বানু তাগ্‌লিব গোত্রের লোকেদের বিরোধিতা করে তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন। নিজেদের কীর্তিসমূহের উল্লেখ করেছেন। তাগ্‌লিবীদের ষড়যন্ত্র, নিকৃষ্টতা ও বিশ্বাসঘাতকতার উল্লেখ করেছেন। অবশেষে রাজার প্রশংসা করে রাজা ও তাঁদের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার উল্লেখ করেছেন।

  

তাঁর এই মু’আল্লাকাটি যুদ্ধ বিষয়ক কবিতাগুলির মধ্যে অনন্য ও উৎকৃষ্ট। এ প্রসঙ্গে আবু আম্‌আশ্‌-শাবানী বলেছেন   

" لو قالها في حول لم يلم "

(তিনি যদি এক বছর সময় নিয়ে এটি রচনা করতেন, তাতেও দোষনীয় কিছু হতো না।)

 

জনৈক পণ্ডিত মন্তব্য করেছেনঃ   

" تحوي القصص وألوانا من التشبيه الحسّي كتصوير الأصوات والاستعداد للحرب وفيها من الرزانة ما يجعله أفضل مثال للشعر السياسي والخطابي في ذلك العصر. "

(তাঁর এই মু’আল্লাকায় গল্প রয়েছে। কিছু বাস্তব অনুভূত উপমাও আছে। শব্দ দিয়ে ছবি আঁকা হয়েছে। যুদ্ধের প্রস্তুতির বিবরণ আছে। তাঁর এই কবিতায় এমন দৃঢ়তা ও সাবলীলতা রয়েছে যা সে যুগের রাজনৈতিক কাব্যকবিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রূপে এই কবিতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।)

 

তিনি তাঁর মু’আল্লাকার সূচনায় বলেছেন 

آذَنَتْنا ببَيْنهِا أَسْمَــاءُ     ربَّ ثَـاوٍ يُمَلُّ مِنْهُ اُلْثَّوَاءُ

بَعْدَ عَهْدٍ لَنَـا بِبُرْقَةِ شَمّــاءَ     فَأَدْنَى دِيَــارِهَا اٌلْخَلْصاءُ

فَالُمحَيَّاةُ فالصِّفـاحُ فَأَعْنـاقُ     فِتَـاقٍ فَعادِبٌ فَالْوَفَاءُ

فَرِيــاضُ اُلْقَطَا فأوْدِيَةُ الشُّرْ    بُبِ فالشُّعْبَتَـانِ فالأَبْــلاءُ

لا أرى مَنْ عَهِدْتُ فيهَـا فأبكي     اٌلْيَوْمَ دَلْهاً وَمَا يُحِيرُ اُلْبُكَاء

وَبِعَيْنَيْكَ أَوْقَدَتْ هِنْدٌ اُلْنَّــارَ      أَخِيراً تُلْوِي بِها اُلْعَلْيَـاءُ

No comments:

Post a Comment