রক্তের ধর্ম
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পূজোয় বসেছেন বদ্রিনারায়ণ। বিহারের সীতামাড়ীতে পুনাওরা ধামের কাছে এক বিখ্যাত মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তিনি। সেই মন্দিরের দরজায় বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে— “অ-হিন্দু প্রবেশ
নিষেধ”। মন্দির লাগোয়া ছোট্ট বাড়িটি তাঁর। তিনি ধর্মের ব্যাপারে খুব কঠোর। নিজ স্ত্রী-সন্তানদেরকেও সেভাবেই তৈরি করেছেন। তবে
ছেলেদেরকে ধর্মাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তাদের পড়াশুনোর প্রতিও নজর দিয়েছেন। একটা শিক্ষানবিশি
মনোভাব ছিল তাঁর মধ্যে।
ছোট ছেলে বৈদ্য
নারায়ণ বাবার মতোই ধর্মপরায়ণ। দু’ বছর হল, সে এখন পাটনার কাছে এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বি-টেক
করছে। থাকে কলেজের হস্টেলে। পুরো হস্টেলে শান্ত, বিনয়ী, মিশুকে, ধর্মপরায়ণ ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে তার বেশ
সুখ্যাতি। গত পরশু বাড়ি ফিরেছে দশ দিনের ছুটিতে। আজ সকালে জলখাবার খেয়ে ডুমরা
যাচ্ছিল বাইকে চেপে। সহপাঠী পারভেজের সাথে দেখা করতে। চৌমাথার মোড়ে একটি মোটরভ্যান
এসে জোরে ধাক্কা মারে তার বাইককে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে পীচ রাস্তার উপর।
আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তাদের ক’জন মিলে তাকে নিকটবর্তী এক হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে স্থানীয় দোকানদারেরা চিনতে পেরে তার বাড়িতে খবর দেয়।
ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। বেশ ভালোরকম রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই প্রচুর পরিমাণে রক্ত লাগবে। আশেপাশের
দু’চারটে ব্লাডব্যাংকে
খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলের ওই বিরল গ্রুপের রক্ত কোথাও মিলছে না। সবাই হন্য হয়ে খুঁজছে। অসহায় বদ্রিনারায়ণ পূজোয় বসে মনেপ্রাণে ডাকছেন কুলদেবতাকে। নতজানু হয়ে ভগবানের কাছে ছেলের
জীবন ভিক্ষা চাইছেন। এমন সময় পড়িমরি
করে ছুটে এলো বড় ছেলে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল—
“বাবা একটা ব্লাড-ডোনার পাওয়া গেছে। তার ও ভাইয়ের
রক্তের গ্রুপও এক। কিন্তু ছেলেটা মুসলিম। নাম সাজিদ। ডুমরা হাই স্কুলে ভাইয়ের সহপাঠী ছিল। ওর রক্ত কি দেবো ভাইয়ের শরীরে?”
উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলেন বদ্রিনারায়ণ। তাঁর হতাশ চোখেমুখে দপ করে জ্বলে উঠল আশার আলো।
নিমেষেই শান্ত হয়ে গেল বুকের ভেতর ওঠা তুফান। এবং মুখ থেকে বেরিয়ে এল এক অমোঘ
বাস্তব—
“রক্তের কি কোনো
ধর্ম আছে!”
২৮-০৩-২০১৮
পার্কসার্কাস,
কোলকাতা
দারুন
ReplyDelete