আবুল্ ‘আতাহিয়া ইস্মা‘য়িল বিন আল্-ক়াসিম
(৭৪৭ – ৮২৬ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও
জন্ম
প্রকৃত নাম ইস্মা‘য়িল। উপনাম আবু ইস্হাক়্। পিতার
নাম আল্-ক়াসিম। পিতামহের
নাম সুয়াইদ। তবে তিনি আবুল্ ‘আতাহিয়া নামে অধিক পরিচিত। অবশ্য এই নামকরণের প্রকৃত কারণ কী সে-বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তিনি কূফার
পশ্চিমে আম্বার-এর নিকটবর্তী ‘আইনুত্-তামার গ্রামে ৭৪৭
খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ১৩০ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
লালন-পালন
শৈশবেই তিনি
পিতার সঙ্গে কূফায় চলে আসেন। এখানেই তিনি অতি সাধারণভাবে লালিত পালিত হন। তাঁর
পরিবার কুমোরের কাজ করত, তিনি উক্ত কাজে পরিবারকে সাহায্য করতেন। মাটির পাত্রগুলি
ঝুড়িতে করে কুফার অলিগলিতে ফেরি করতেন। সেই সময় কুফা ছিল জ্ঞান-নগরী, তাই তিনি
সেখানে ওয়াইস কারনী, নাখ্’য়ী, শা’বী, সুফিয়ান সাওরী, আবু হানিফা, কাসায়ী ও ফাররা প্রমুখ বহু বিদগ্ধ
পণ্ডিতের সাহচর্য লাভ করেছিলেন।
বাগদাদ-
যাত্রা
তিনি ত্রিশ
বছর বয়সে, খালীফা আল-মাহদীর শাসনামলে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের
পীঠস্থান বাগদাদ যাত্রা করেন। বাগদাদে দ্রুত তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, তাই খালীফা
মাহদী তাকে রাজদরবারে স্থান দেন এবং বাশশার বিন বুরদ ও অন্যান্যদের ওপর তাঁকে
প্রাধান্য দেন।
শায়েরুয্-যুহ্দ বা ধার্মিক কবি
হারুন রাশীদের
শাসনামলে কবি ধর্মানুশীলনের প্রতি আগ্রহী হন। দুনিয়া হতে বিমুখ হয়ে পড়েন। ইসলামী
বিদ্বান ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গ দেন। এই সময় তাঁর কাব্যচর্চার উপজীব্য ছিল কুরআন ও
হাদিস। ইসলামী আদেশ-নিষেধ-উপদেশ সমন্বিত বহু কবিতা তিনি এই সময়ে রচনা করেন।
তিনি পার্থিব
জগতের যাবতীয় মায়ামোহ ত্যাগ করেন। আখেরাতের পথে নিজেকে চালিত করেন। এই বিরল
প্রতিভাধর কবি বাগদাদে অধিকাংশ মতানুযায়ী ৮২৬ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক
২১৩ হিজ্রিতে মৃত্যু বরণ করেন।
কাব্য-শৈলী
তাঁর
কবিতাসমূহ বিশেষত “আয্-যুহ্দ” (ধর্মপরায়ণতা, পার্থিব
মোহমুক্তি) সম্পর্কিত কবিতাগুলো তাঁর যুগে আরবি কাব্যের উন্নতিতে এক দিগন্তের সূচনা করেছিল। এ ক্ষেত্রে
নবায়নের সূচনা তাঁর কবিতা থেকেই বলে মনে করা হয়। কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে
প্রাচীন পন্থার অনুকরণ থেকে মুক্ত করেছিলেন, বিশেষ করে কবিতার বিষয়বস্তু ও
শব্দ-বাক্যের ক্ষেত্রে। তাঁর এ ধরণের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট হল সহজ সরল শব্দের
ব্যবহার, জনসাধারণের জন্য কবিতার ভাবকে সহজবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা এবং তাতে
বাস্তবিক জীবনের রং মিশিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। যেমন তিনি জনসাধারণের কষ্টের কথা উল্যেখ
করে তাঁর একটি কবিতায় বলেছেন—
|
إِنِّي أَرَى الأَسْعَارَ أَسْ عَارَ الرَّعِيَّةِ غَالِيَهْ
তিনি অন্য একটি কবিতায় বলেছেন—
رَغِيفُ خُبْزٍ يَابِسٌ تَأْكُلُهُ فِي زَاوِيَهْ
وَكُوزُ مَاءٍ بَارِدٍ تَشْرَبُهُ مِنْ صَافِيَهْ
وَأَرَى المَكَاسِبَ نَزْرَةً وَأَرَى الضَّرُورَةَ فَاشِيَهْ
No comments:
Post a Comment