আর পাঁচটা ক্যালেন্ডারের মতো ইসলামী বা হিজ্রি ক্যালেন্ডারেও
মাসের সংখ্যা বারো। বলতে গেলে বছরে বারো মাসের এ দস্তুর পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই
প্রচলিত; আল-কুরআনে মহান আল্লাহ্ তাই বলেছেন [সুরাতু আত্- তাওবাহ্ ৩৬]। তবে
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবরা নিজেদের মতো করে, নিজের সুবিধার্থে মাসের সূচি ও শৃঙ্খলের
পরিবর্তন করত। ইসলাম আসার পর তারা সেই কুঅভ্যাস ত্যাগ করে। পরবর্তীতে অনেক
চিন্তাভাবনা, আলাপআলোচনার পর হিজরতের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূত্র ধরে দ্বিতীয় খলিফা
উমর (রা) নিজ শাসনামলে হিজ্রি ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করেন। শা’বান হল তারই অষ্টম
মাস।
এই শা’বান মাসে মুসলিম সমাজের অলিন্দে নানা রীতি-রেওয়াজের
প্রচলন। বিশেষ করে লায়লাতু নিস্ফি শা’বান (১৫ শা’বানের রাত)-এ নতুন বধুর সাজে
সেজে ওঠে পার্কসার্কাস, তালতলা, রাজাবাজার ও তপ্সিয়ার মতো মুসলিম প্রধান
এলাকাগুলো। আকাশে আলোর ঝলকানি, বাতাসে তীব্র সুগন্ধির বিচ্ছুরণ সমানে পাল্লা দেয়
দোল-দীপাবলি-দূর্গাপূজোকে। ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিরিয়ানি-হালওয়ার মতো নানা সুস্বাদু
রেসিপি। এর পাশাপাশি চলতে থাকে দুয়া-কালাম-তেলাওয়াত-সাদ্কা-সালাত-সিয়াম ইত্যাদি।
এ মাসে নফল সিয়াম (রোযা) পালন সম্পর্কে একাধিক হাদিস
বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। খোদ নবী (সা) এ মাসে একাধিক রোযা রাখতেন। মা
আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, “আমি নবী (সা)-কে রমাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোনো
মাসে রোযা রাখতে দেখিনি। আর না শা’বান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোযা রাখতে
দেখেছি” [সহিহ বুখারি]। কিন্তু কেন নবী (সা) এ মাসে এত বেশি রোযা রাখতেন? উসামা
বিন যায়েদ (রা) নবী (সা)-কে এ প্রশ্ন করলে তিনি (সা) তার উত্তর দেন— “রজব এবং রমাযানের মধ্যবর্তী এ মাসটি
সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে মহান আল্লাহর সকাশে মানুষের কৃতকর্মসমূহ উত্থাপিত হয়। আমি চাই আমার কর্মসমূহ রোযা অবস্থায় ওঠানো হোক।” [মুস্নাদ আহমাদ, সুনান নাসায়ী, সিল্সিলাতুল্ আহাদীস আস্-সাহীহাহ্ - ১৮৯৮] তবে ১৫ই শা’বানের পর রোযা
না-রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণীত, রাসুল (সা) বলেছেন— “শাবান মাস অধের্ক হয়
গেলে তোমরা রোযা রেখো না।” [মুস্নাদ আহমাদ ২/৪৪২, আবু দাউদ] হাদিস শাস্ত্রের পণ্ডিতগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন— যে ব্যক্তি শা’বান মাসের প্রথম থেকে
রোযা রাখেনি সে যেন অর্ধ (১৫ই) শা’বানের পর রোযা রাখা শুরু না করে। তবে যে
ব্যক্তি শা’বান মাসের শুরু থেকে রোযা রেখেছে, বা যার উপর গত বছরের রোযা
কাজা আছে অথবা যার সোম ও বৃহ:স্পতিবার রোযা রাখার অভ্যাস আছে, তারা পনের তারিখের পর রোযা রাখতে পারে। মা আয়েশা (রা) এ মাসে
তাঁর কাজা রোযাগুলো আদায় করতেন। আবু সাল্মা (রা) বলেন, আমি মা আয়েশা (রা)-কে বলতে
শুনেছি— “আমার রমাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শা’বান ছাড়া আদায় করতে পারতাম না” [সহিহ বুখারি]।
No comments:
Post a Comment