Thursday 18 April 2019

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৯১) সূরাতু আশ্‌-শাম্‌স — (৯৪) সূরাতু আশ্‌-শার্‌হ়


 আল্‌-কুর্‌আনের ভাবানুবাদঃ জুয্‌উ 'আম্মা (আমপারাঃ ৩০তম অধ্যায়)


৯১) সূরাতু আশ্‌-শাম্‌ (সূর্য)

মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত-১৫, রুকু- ১

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহর নামে (শুরু করছি); তিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু

 

وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا

সূর্য ও তার কিরণের শপথ,

وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا

চাঁদের শপথ যখন তা সূর্যের পেছন পেছন আসে,

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا

দিনের শপথ যখন সে সূর্যকে প্রখর ভাবে প্রকাশ করে,

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا

রাতের শপথ যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,

وَالسَّمَاء وَمَا بَنَاهَا

আকাশের শপথ এবং তাঁর, যিনি আকাশকে নির্মাণ করেছেন,

وَالْأَرْضِ وَمَا طَحَاهَا

পৃথিবীর শপথ এবং তাঁর, যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন,

وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا

প্রাণের (অর্থাৎ আদম আঃ, মানুষ ও সকল প্রাণীর আত্মার) শপথ এবং তাঁর, যিনি প্রাণকে সুবিন্যস্ত করেছেন,

فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا

অতঃপর তাকে সৎ ও অসৎ কর্মের সঠিক জ্ঞান দান করেছেন (অর্থাৎ তার মধ্যে ভালো ও মন্দের বোধ সঞ্চার করেছেন),

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا

অতএব যে ব্যক্তি (আল্লাহ্‌র সকল আদেশ-নিষেধ পালন করে, সৎ কর্ম সম্পাদন করে) নিজেকে শুদ্ধ করবে, সেই সফলকাম হবে

وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا

আর যে ব্যক্তি (আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, অন্যায় ও অসৎ পথ অবলম্বন করে) নিজেকে কলুষিত করে ফেলবে, সে নিঃসন্দেহে ব্যর্থ  হবে

كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَاهَا

সামুদ সম্প্রদায় নিজেদের অবাধ্যতা বশতঃ (নবী সালেহ আঃ-এর প্রতি) মিথ্যারোপ করেছিল;

إِذِ انبَعَثَ أَشْقَاهَا

যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তিটি (সেই উষ্ট্রীটিকে হত্যা করার জন্য) ক্ষিপ্ত ও তৎপর হয়ে উঠেছিল।

فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ نَاقَةَ اللَّهِ وَسُقْيَاهَا

অথচ আল্লাহর রসূল (সালেহ্‌ আঃ) তাদেরকে আল্লাহর (সেই) উষ্ট্রী ও তাকে জল পান করানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন

فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنبِهِمْ فَسَوَّاهَا

কিন্তু তারা তা (অর্থাৎ সালেহ্‌ আঃ-এর) প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং সেই উষ্ট্রীটিকে হত্যা করেছিল অতঃপর তাদের পাপের কারণেই তাদের পালনকর্তা তাদেরকে সমূলে উৎপাটন ও ধ্বংস করে একাকার করে দিয়েছিলেন।

وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا

এবং তিনি (অর্থাৎ মহান আল্লাহ) (তাদের) এই ধ্বংসের কোনো বিরূপ পরিণতির ভয় করেননি

 ************


৯২) সূরাতু ল্‌-লা (রাত্রি)

মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত-২১, রুকু- ১

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে (শুরু করছি)!

 

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى

শপথ রাত্রির, যখন তা (সব কিছুকে) আচ্ছন্ন করে ফেলে,

وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى

শপথ দিনের, যখন তা আলোকিত ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে,

وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنثَى

এবং তাঁর শপথ, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন

إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى

নিশ্চয় তোমাদের কর্ম-প্রচেষ্টা (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর দৃষ্টিকোণ থেকে) বিভিন্ন ধরণের

فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى

অতএব, যে ব্যক্তি (যাকাত ও সাদ্‌কাহ্‌ রূপে) দান করে ও তাক়্ওয়াহ্‌ (আল্লাহ্‌ভীরুতা ও সংযমশীলতা)-র পথ অবলম্বন করে,

وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى

এবং উত্তম বিষয়কে (অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌র একত্ববাদ)-কে, উত্তম প্রতিদান অর্থাৎ জান্নাত এবং উত্তম নির্দেশ অর্থাৎ সালাত, যাকাত ও সিয়াম-কে) সত্য মনে করে,

فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى

অচিরেই আমি তার জন্য সুখময় বিষয়ের পথ সহজ করে দেবো।

وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى

আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করে এবং নিজেকে স্বনির্ভর ভেবে বেপরওয়া হয়ে ওঠে

وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى

এবং উত্তম বিষয়কে (অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌র একত্ববাদ)-কে, উত্তম প্রতিদান অর্থাৎ জান্নাত এবং উত্তম নির্দেশ সালাত, যাকাত ও সিয়াম-কে) মিথ্যা মনে করে,

فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى

আমি তার জন্য কষ্টকর ও কঠোর পরিণতির পথ সুগম করে দেবো।

وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى

যখন সে (নরকে) অধঃপতিত হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না

إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَى

নিশ্চয় আমার দায়িত্ব পথ প্রদর্শন করা

وَإِنَّ لَنَا لَلْآخِرَةَ وَالْأُولَى

এবং আমিমালিক ইহকালের ও পরকালের

فَأَنذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظَّى

অতএব আমি তোমাদেরকে (জাহান্নামের) প্রজ্বলিত আগুন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি

لَا يَصْلَاهَا إِلَّا الْأَشْقَى

তাতে কেবল নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিই প্রবেশ করবে,

الَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلّىَ

যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়

وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى

আর তার থেকে দূরে রাখা হবে আল্লাহ্‌ভীরু ব্যক্তিকে,

الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّى

যে আত্মশুদ্ধির জন্য নিজ ধন-সম্পদ দান করে।

وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَى

এবং কারও প্রতি কোনো অনুগ্রহ করার পর তার থেকে বিনিময়ে কোনো অনুগ্রহ আশা করে না;

إِلَّا ابْتِغَاء وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَى

(নিজ অনুগ্রহের বিনিময়ে) শুধুমাত্র মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে

وَلَسَوْفَ يَرْضَى

আর তাই অতি শীঘ্রই সে সন্তোষ লাভ করবে (যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে)

 ***********


৯৩) সূরাতু আদ়্‌-দ়োহ়া (পূর্বাহ্ণ)

মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত-১১, রুকু- ১

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহ্‌র নামে (আরম্ভ করছি), তিনি পরম করুণাময়  অতীব দয়ালু।

وَالضُّحَى

শপথ পূর্বাহ্নের,

وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى

শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয় এবং সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে ফেলে,

مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى

(হে মুহাম্মদ সাঃ) তোমার প্রভু তোমাকে ত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি তিনি বিরূপও হননি।

وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَى

আর তোমার জন্য পরকাল ইহকাল অপেক্ষা অধিক শ্রেয়

وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى

তোমার প্রভু শীঘ্রই তোমাকে দান করবেন, আর (সেই দান পেয়ে) তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।

أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَى

আচ্ছা, তিনি কি তোমাকে এতীম (অনাথ) রূপে পাননি? অতঃপর তিনি (তোমাকে) আশ্রয় দিয়েছেন

وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَى

তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন পথহারা অবস্থায় (তুমি আল্‌-কুর্‌আন, তাওহীদ ও নবুওয়াত সম্বন্ধে কিছুই জানতে না), অতঃপর তিনিই (তোমাকে) সু-পথ প্রদর্শন করেছেন

وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَى

তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন নিঃস্ব রূপে, অতঃপর (তোমাকে) অভাব-মুক্ত করেছেন।

فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ

সুতরাং তুমি (কখনই) এতীম (অনাথ)-এর প্রতি কঠোর হবে না;

وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ

সওয়ালকারী (ভিক্ষুক)-কে ধমক দেবে না (অর্থাৎ তাকে তাড়িয়ে দেবে না)।

وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ

বরং (সর্বদা) তোমার প্রভুর (এই সব) নেয়ামত (অর্থাৎ করুণা ও আশীর্বাদ)-এর কথা প্রকাশ করো।

***********************

 

৯৪) সূরাতু আশ্‌-শার্‌হ় (উন্মুক্ত)

মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত-, রুকু- ১

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহ্‌র নামে (শুরু করছি); তিনি পরম করুণাময়, অতিদয়ালু।

أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ

(হে মুহাম্মদ সাঃ) আমি কি তোমার জন্য তোমার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দিইনি (যাতে তুমি তোমার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারো)?

وَوَضَعْنَا عَنكَ وِزْرَكَ

আমি তোমার (ঘাড়) থেকে তোমার (ভারি) বোঝা লাঘব করেছি,

الَّذِي أَنقَضَ ظَهْرَكَ

যা তোমার পীঠকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে দিচ্ছিল (অর্থাৎ যা ছিল তোমার জন্য অতিশয় দুর্বিষহ)

وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ

আমি তোমার জন্য তোমার আলোচনা ও খ্যাতিকে সুউচ্চ করেছি।

فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

নিশ্চয় দুঃখের সাথে সুখও আসে।

إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

নিশ্চয় (প্রত্যেক) দুঃখের পরে সুখও আসে।

فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ

অতএব, যখনই কাজ শেষে একটু অবসর মিলে নিজেকে (আল্লাহ্‌র উপাসনা-আরাধনায়) নিয়োজিত করো, পরিশ্রম এবং সাধনা করো।

وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ

এবং কেবলমাত্র তোমার পালনকর্তার প্রতি সকল আশা-আকাঙ্খা সহ মনোনিবেশ করো। 

**********************

No comments:

Post a Comment