Thursday 4 April 2019

স্যার বদিউর রহমান শতকোটি অভিনন্দন আপনাকে!



স্যার বদিউর রহমান, শতকোটি অভিনন্দন আপনাকে!
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

অধ্যাপক মুহাম্মদ বদিউর রহমান। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে আরবি মহলের  একটি সুপরিচিত নাম। ছাত্রদের মাঝে "বি আর স্যার" নামে অধিক চর্চিত। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং বাংলাদেশেও তিনি এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৩ থেকে শিক্ষকতা করছেন। কয়েক দশক যাবৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বিভাগীয় প্রধানের পদও সামলেছেন বহুবার। ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করার পরও কয়েক বছর এক্সটেনশন-এ ছিলেন। সে-সময়েই (২০১২-২০১৪) আমি তাঁর শিষ্যত্ব লাভের সুযোগ পাই। বর্তমানে তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি রূপে কর্মরত। 

শিক্ষকতার পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার, সেনেট মেম্বার, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল মেম্বারের দায়িত্বও সামলেছেন। তাঁর এক অপূর্ব গবেষণা কর্ম হল "ইস্‌লামিক স্টাডিজ ইন্‌ বেঙ্গল"। এটি ছিল স্যারের পি এইচ ডি-র থিসিস। ডক্টর ত্বহা হুসাইন এর তিনি অনুরাগী। তাঁর পাণ্ডিত্য ও প্রতিভা সম্পর্কিত একাধিক আর্টিকেলও লিখেছেন। সেগুলি পরবর্তীতে "এসেজ অন ত্বহা হুসাইন" নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আরবি সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর একটি খুব সুন্দর বইও আছে, "হিস্ট্রি অফ এরাবিক লিটারেচার" নামে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকা ও জার্নালে তাঁর বহু মূল্যবান আর্টিকেল ও গবেষণা পেপার প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গবেষণা ও কাজকর্মের মুখ্য উপজীব্য হল--  "রবীন্দ্রভাবনা ও আরববিশ্ব", "রবীন্দ্রনাথ ও আরবজগৎ", বঙ্গভূমিতে আরবি চর্চার ইতিহাস, আলিয়া মাদ্‌রাসা ও ওরিয়েন্টালিস্টদের অবদান। আল্লামা মাসুমি, প্রোফেসর মাসুদ হাসান, প্রোফেসর যুবায়ের খান, প্রোফেসর রাহাতুল্লাহ প্রমুখদের খুব কাছের এবং প্রিয় ছাত্র ছিলেন। তাঁদের সম্পর্কে স্যারের কিছু স্মৃতিচারণামূলক তথ্যবহুল রচনাও রয়েছে। 

এসবের পাশাপাশি তিনি কবিতা লেখেন। আরবি ও বাংলা উভয় ভাষায় কাব্য চর্চা করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বহু ছোটগল্পেরও স্রষ্টা। তাঁর অপূর্ব কয়েকটি ছোটগল্প হল-- ছাতা কাহিনী, টাইম বাবু, ইংরেজি শেখা, মাস্টার মশাই এবং সবই মায়া। বাংলা ও আরবির পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি এবং উর্দু সাহিত্যেও স্যারের বেশ দখল রয়েছে। ক্লাসে আরবি কাব্যকবিতা বা অন্য কিছু পড়ানোর সময় হরহামেশায় তিনি শেক্সপিয়ার, কিটস, ওয়ার্ডসওয়াথ, মুন্সী প্রেমচাঁদ, গালিব, ইকবাল, নজ্রুল, শরৎ, মাইকেল, রবি ঠাকুর প্রমুখদের রচনার উদ্ধৃতি দিতেন।      

বাংলার বর্তমান প্রজন্মের আরবির শিক্ষকরা প্রায় সকলেই তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছাত্র। সুঠামদেহী, সুশ্রী, মিতভাষী এই মানুষটি বরাবরই প্রচারবিমুখ। কিন্তু সূর্যের আলো তো ছড়াবেই। ফুলের সৌরভও তো আবদ্ধ থাকে না, তার ধর্মই যে বিচ্ছুরিত হওয়া। আর তাই আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের জন্য এবার তাঁকে 
 রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হল। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু তাঁর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। অধ্যাপক রাহাতুল্লা ও অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সাহেবের পর আরবি ভাষা ও সাহিত্যের সেবার জন্য তৃতীয় বাঙালি অধ্যাপক হিসাবে তিনি এই সম্মাননা লাভ করেন।

২০১২ সালে স্নাতকোত্তরে উঠে স্যারের শিষ্যত্ব গ্রহণের সৌভাগ্য হয় আমার। সেসময় ত্বহা হুসাইনের প্রতি স্যারের অনুরাগ, তাঁর পাণ্ডিত্য ও প্রতিভা সম্পর্কিত স্যারের  লেখাগুলো আমার ভাবনার দৃষ্টিকোণকে বদলে দেয়। পরবর্তীতে আরবি সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক স্যারের বইটা এবং "রবীন্দ্রভাবনা ও আরববিশ্ব" বা "রবীন্দ্রনাথ ও আরবজগৎ" সম্পর্কিত স্যারের একাধিক আর্টিকেল আমাকে পথ দেখায় অনুবাদ সাহিত্যের। অনুপ্রাণিত করে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে কাজকর্ম করতে। তারপর প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন, সময়অসময়ে শিখতে থাকি কাব্যানুবাদের কলাকৌশল ও খুঁটিনাটি স্যারের কাছে।

বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের আরব ও পারস্য ভ্রমণ। সেখানে আধুনিক যুগের কবি সম্রাট আহ্‌মাদ শাওক্বির বাড়িতে তাঁদের আলাপ, এবং হুসাইন শাওক্বির "আবি শাওক্বি" গ্রন্থে তার অবতারণা, ইরাকে গিয়ে কবি আয্‌-যাহাবির আপ্যায়ন, ইরান পৌঁছে শিরাজির সমাধিতে ফুল দেওয়া, এবং সে বিষয়ে খোদ রবি ঠাকুরের "পারস্যে" নামে বই লেখা এমন অনেক তথ্য উপস্থাপন করে স্যার বাঙালি আরবি পড়ুয়াদের সম্মুখে গবেষণার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

তপ্সিয়া, কলকাতা
০৫-০৪-২০১৯ 

No comments:

Post a Comment