Tuesday 30 April 2019

বদিউর রহমানঃ তাবিজ


দু’দিন আগে সকালের দিকে একজন রুহুল আমীনের ফোন এল কয়েক বছর থেকে তিনি জাঙ্গিপাড়া কলেজে আরবীর অধ্যাপক কোন এক কালে আমার কাছে এম.. পড়েছেন ঘটনাচক্রে আমার অধীনে পি.এইচ.ডি. করেছেন মূলত: আমার কুশল জানার জন্যই ফোন মাঝে মধ্যেই ফোন করেন, আমার খোঁজ-খবর নেন অথচ আমি মনে করি যে অনেকের মত উনিও জানতে চান যে এখনও বেঁচে-বর্তে আছি কি না  কখনও আক্ষেপ করেন স্বশরীরে সাক্ষাৎ করে আমার খোঁজ নিতে পারছেন না বলে বাস্তবকে আমি অস্বিকার করতে পারি না আমার ব্যস্ততা কম বলে অন্যের ব্যস্ততা বেশি থাকবে না এমন তো নয় আর সব সময় সাক্ষাৎ করে কুশল জানা সম্ভবপর নয় তাই ওসব নিয়ে দুঃখ করার কিছু নেই ফোন করলে গলার স্বরটা প্রাণবন্ত করে জানান দেবার চেষ্টা করি আমি এখনও সজীব ঐ ফোনটা শেষ করার পর দু মিনিটও হয়নি আবার ফোন এল এটা আর একটা রুহুল আমীনের এ ছাত্রটির পি.এইচ.ডি গবেষণা এখনও চলছে; আরবীতে জনৈক্য শিশুসাহিত্যিকের সাহিত্য কর্মের উপর ইনি অবশ্য অন্য এক অধ্যাপকের কাছে গবেষণা করছেন বিষয়বস্তুটা আমারই পছন্দের
তাঁর ফোনটা যেদিন এলো তার মাস খানেক আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর গবেষণাকেন্দ্রিক কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম কেমন কাজ করছে জানার জন্যে সেদিন তিনি বলেছিলেন জিজ্ঞাস্য অনেকগুলি বিষয়ই ওঁর জানা- তার উপর কিছু লেখার কাজও শুরু করেছেন বাড়ি গিয়ে ফোনে সব উত্তর দেবেন ঐসব প্রশ্ন ইত্যাদির ব্যাপারগুলো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম মাস খানেক পর উনি স্মরণ করতে মনে পড়লো খুব গুছিয়ে সুন্দর করে সবকটা কথার উত্তর দিলেন ভালো লাগল আমার অনুমান ছিলো ছাত্রটি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও গবেষণাটা সিরিয়াসলি করবে অনুমানটা সত্য হতে চলেছে দেখে তৃপ্তি পেলাম ঐ ফোনটা শেষ করার আগে তাঁকে বললাম-তোমার আগে আর এক রুহুল আমীন ফোন করেছিলেন; দু জনের মধ্যে তফাৎ হলো দুটো; এক: উনি ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে গেছেন আর উনি কলেজের অধ্যাপক তুমি এখনও ঐ সম্মানীয় ডিগ্রিটা পাওনি আর দ্বিতীয়ত: ডিগ্রিটা পাওয়ার পর বর্তমান স্কুল ছেড়ে অধ্যাপক হতে হবে ছেলেটা বড়ই ভদ্র বলল- োওয়া করবেন যেন আপনার কথাগুলো বাস্তবায়িত হয় পুনরায় আমি বললাম যে, “কিন্তু পরপর দুই রুহুলের -বলতে পার রুহুল স্কয়ারের- ফোন আসাটা বড় কাকতালীয় বলে মনে হচ্ছে আবার দু’জনায় উত্তর ২৪ পরগনার উত্তরে বললেন-হ্যাঁ স্যর উনাকে চিনি ওঁর বাড়ি বসিরহাটের কাছে”তখন বললাম- বসিরহাটের বিখ্যাত মৌলানা রুহুল আমীন সাহেবকে জান? এমন হতে পারে ওঁর স্মরণে অথবা ভক্তিতে তোমাদের ওদিকে অনেক ছেলের নাম রাখা হয় ঐ নামে। কেননা তিনি ছিলেন বিখ্যাত আলেম ও ধর্মভিরু মানুষ। ফুরফুরার দাদাহুজুরের বিশেষ খলিফা ও লেখা-লেখির জন্য দোওয়া প্রাপ্ত মনিষা পুনশ্চ বললাম- জান তাঁর ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীতে প্রচুর মূল্যবান আরবী-ফারসি বই ও ম্যানুস্ক্রিপ্ট ছিল যেগুলির অধিকাংশ তাঁর পড়া। তাছাড়া তিনি চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটা ধর্মীয় বইও লিখেছেন আর সেই বইগুলোতে যে সমস্ত বিখ্যাত বইয়ের টীকা –পাতার নম্বরসহ- আছে সেই বইগুলো এখনও আমি পড়ে উঠতে পারিনি। মসলা মাসাইল থেকে আরম্ভ করে ফিকহে হানাফির উপর তাঁর প্রচুর লেখালেখি আছে। এমনকি তাবিজের উপরও তাঁর লেখা বই তাবিজাত (ষষ্ঠভাগ) আমার কাছে আছেসেটা অবশ্য আমার কেনা ন- ঐ অধ্যাপক রুহুলের। তাছাড়াও আমার কাছে ‘আমালে কুরআনি’ শিরোনামে আব্দুল আজীজ দেহলাবির একটা বই আছে আর আছে উর্দুতে নাকশে সুলাইমানী ইত্যাদি। উত্তর এল “কিন্তু হাদিসে তো তাবিজ ইত্যাদি বারণ”। বললাম- “হ্যাঁ ঠিকই বলেছ। সৌদি আরব থেকে প্রচুর বই এনেছি তার মধ্যে তাবিজের বিরোধিতায় লেখা বইও আমার কাছে রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে ওখানকার বই ‘হিসনুল মুসলিম মিন আযকারিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’[1]  এবং ‘আদ দুআও মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ ও আল’এলাজু বির রুক্বা মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ[2] আর ‘নেয়ামুল কুর’আনে’ ও ‘নেক আমল’ জাতীয় বইতে বিভিন্ন দোওয়া ও তাবিজের নকশা দেখতে পাই”। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ধর্মভিরু রুহুল বললেন: যে, “স্যর তাবিজ-তালাতে শিরক বিদআতের ভয় থাকে”। বললাম- ঐ জাতীয় তাবিজের লেখাটা লেই বোঝা যা; সেগুলো এ্যাভয়েড করবে। তাবিজের বইয়েতে দেখেছি একটা তাবিজ; তাতে লেখা- “লি খামসাতুন উতফিয়ো বিহা নারায়াবা তারপর হযরত আলী, হাসান, হোসেন, বিবি ফাতেমা ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যা নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ঐ জাতীয় তাবিজ ব্যবহার করবেনা। আর বিভিন্ন সুরার ছক কাটা তাবিজও দেখতে পাবে বিশেষ করে কোর’আন মাজিদেউর্দু তরজমাঐ রকম ছকের তাবিজ করাটাও যুক্তিযুক্ত নয়। তাছাড়া তাবিজ লিখে গলায়, হাতে, কোমরে অথবা শরীরের কোন অংশে স্থায়ীভাবে বেঁধে রাখা ঠিক নয় কেননা মানুষের অপবিত্র অবস্থায় কোর’আনের আয়াত সঙ্গে করে রাখাটা উচিত নয়। তবে আয়াতে কোরআনি পড়ে ফুঁক দিলে, পানি পড়া দিলে বেশ কাজ হতে দেখেছি। আমার মত উন্নাসিক মানুষও অনেক সময় উপকার পাই। বহুদিন আগে পান্ডুয়ায় ফুলের বাগান করতাম। একটা বোগনভেলিয়ার ঝোপ ট্রিম করতে হেঁসো চালাতেই ঐ গাছের ভেতরের দিকের বোলতার বাসা থেকে একটা বোলতা আমার হাতে কামড় দেয়। সাংঘাতিক যন্ত্রণা শুরু হল। মনে পড়ে গেল: ‘ইযা বাতাশতুম বাতাশতুম জাব্বারীন’। সাতবার এক নিঃশ্বাসে পড়তে পড়তে একটা আঙ্গুল চক্রকারে কামড়ান জায়গাটায় ঘোরালাম। জালা যন্ত্রণা চলে গেল। অনেকবার আমার নিজের গলায় মাছের কাঁটা আটকে গেলে ‘ওয়া ইযা বালাগাতিল হুলকূম... পড়েছি। সত্বর কাঁটা নেমে গেছে। আমার সঙ্গে বসে খাওয়ার সময় কারও সে রকম হলেও ঐ আয়াত পড়ে কাজ হয়েছে। সাপকে আমি ভীষণ ভয় করি; তার জন্যও দুয়া পড়ি। সাপের দংশন থেকে নিস্তার পেতে, অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশেষত রাস্তার কুকুরদের ভয়ে দোওয়া পড়ে দেখেছি কাজ হয়বাচ্চারা আঁতকে কেঁদে উঠলে সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়ে দেখেছি বেশ কাজ হয়। ব্যাথা বেদনা, মাথা ব্যাথার জন্য কিছু আয়াত পড়ে দিলেও কাজ হয়। তবে বিয়ের পর থেকে এখনও পড়ে চলেছি স্ত্রীকে বশিকরণ করতে বিভিন্ন দোওয়াকেন জানি না কাজ হলনা। বরং উলটো অ্যকশন হচ্ছে”ওদিক থেকে ছাত্রের স্বলজ্জ হাসির মৃদু আওয়াজ পেলাম। বললাম- রুহুল “তাবিজ দেওয়া শুরু কর; প্রচুর ইনকামও বলল: ‘না স্যর ওটা আমার নীতি বিরুদ্ধ। আমার পয়সার দরকার নেই’। বললাম: সে কী? আমি তাবড় কট্টর তাবিজ বিরোধি অনেক কাসেমী, সাহারানপুরী মৌলানাকে দেখেছি তাঁরা জীবনের শুরুর দিকে তাবিজ ইত্যাদির বিরোধিতা করতেন, পরে দেখেছি তাঁরা সব কিছুই করতছেকথায় কথায় বলেন জ্বীনের আসর হয়েছে। অতএব অনেক টাকার ধাক্কা। বহু খানকা বা পীরের দরগায় গিয়ে দেখেছি তাবিজের জন্য হাপিত্যেশ করে অনেককে বসে থাকতে। একবার একটা ছাউনির নিচে দেখি একজন মাদ্রাসার ছাত্র একই তাবিজ কাগজের পর কাগজে লিখে চলেছে। জিজ্ঞেস করলাম- ‘তা একই জিনিস লিখে অত জমা করছ কেন’? বলল- “হুজুরের আদেশএগুলোতে উনি একবার ফুঁক দিয়ে বিভিন্ন জনকে দেবেন”। আজকাল তাবিজ নাবেশির লোক দিয়ে লিখিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়ার দিন শেষ করেছে জেরক্স মেশিন। জেরক্স করা তাবিজও আমার নজরে রসেছে। কদিন আগে খোদ কলকাতায় এক নতুন জিনিস দেখলাম। একটা ছোট্ট দোকানঘর। কিছু সামগ্রী সাজান। সেগুলো বিক্রির জন্য নয়, লোক দেখানোর জন্য। টুপি দাড়িতে দোকানদারের আসল কাজ তাবিজ দেওয়া দোকানের ভিতর বেশ কিছু মহিলা তাবিজের জন্য অপেক্ষা করছেন দোকানদার টেলিফোনে কারও সমস্যার কথা শুনছেন কিছুক্ষণ পর পর দেখলাম বিড় বিড় করে কিছু পড়ে ফোনেতেই ফুঁক দিয়ে দিচ্ছেন আমি অবাক কী বিচিত্র এই দেশ কী বিচিত্র মনুষ্যপ্রাণী’ “তা রুহুল, শিক্ষকতার পাশাপাশি শুরু করে দাও এই কারবার। এ কারবারে ইনকাম ট্যাক্স নেই, সেলস ট্যাক্স নেই, নেই জি.এস.টি.ওপার থেকে রুহুলের হাসি। বললাম- বিশ্বাস করলেনা’? বলল- ‘না তা নয়; তবেবললাম- তাহলে শোন। গতকাল গিয়েছিলাম এক ইংরেজির অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর কাছে বসলে ইংরেজি সাহিত্যের তারক সেন, গৌরীবাবু, দিপ্যেন্দ চক্রবর্তী, জ্যোতিভট্টাচার্য, অরুন দাশগুপ্ত, কালিদাস বোস, ভবতোষ চ্যাটার্জি, অমল ভট্টাচার্য প্রমুখ বিভিন্ন অধ্যাপকের ইংরেজি সাহিত্যের পঠন-পাঠন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা শুনি। আর আমি হই ঋব্ধ। হয়ত কখনো অনুবাদে ফরাসি ছোটগল্প শুনিয়ে দিলেন কখনও হয়ত মপাসাঁ কখনো হয়ত গ্রীক ট্রাজেডি ও সেক্সপিয়ারের তুলনা করে কিছু বললেন। দুবার তিনবার চলে চা। দীর্ঘক্ষণ পরে বের হওয়ার সময় ওঁর বাড়ির জানালা দরজায় লটকানো তাবিজগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম: ‘এগুলো?’ ইশারায় বললেন- “ওসব তাঁর স্ত্রীর ব্যাপার প্রচন্ড বাতিকগ্রস্ত”। বললেন- “অপনার পরিচিত এক পীরের কাছে উনি প্রায়ই যান আর ঐগুলো তাঁর কাছ থেকে নিয়ে এসে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় লটকে দেন। যেখানে যান সেখানে ঐ পীর সাহেবদের বংশের অন্যান্য পীরজাদারাও পাশাপাশি ঘরে বসেন। একবার কী হয়েছে আমার স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখেন ওর পীর তখন ঘরে নেই; তাই ও তাঁর ঘরে বসে অপেক্ষা করছিল। দেখেকি অন্য ঘর থেকে আর একজন পীরজাদা ওকে ডাকছেন সেখানে যেতে। অর্থাৎ খদ্দের ভাঙানো আর কী” তারপর বললেন- “এই দেখুন এই ‘সোলেমানী তাবিজে’-র বাংলা বইটা কিনে সারা দিন পড়ছে। মাথাটা না খারাপ হয়”। তারপর বললেন- “এই বইয়ের এই তাবিজটা পড়ুন”। দেখি স্ত্রী সঙ্গমে দীর্ঘক্ষণ বীর্য ধারণ করার তাবিজ। বললেন: “তাবিজের নামে এই সব! অবশ্য তাবিজের ব্যবসাটা চলছে ভাল। পাশের মসজিদের এক ইমাম সাহেবের কথা বললেন। ইমামতি করে চার-পাঁচ হাজার টাকা মাইনে পান। তিনি এক একটা তাবিজ দেন কমপক্ষে তিন, চার হাজার টাকায়। সারা দিনে আট, দশটা তাবিজ তো দেনই। তা হলে হিসেব করে বলুন তো ওঁর প্রতিদিন কত টাকা ইনকাম! বিশ্বাস করুন একটা ফ্লাট কিনেছেন দেখলে তাজ্জব হয়ে যাবেন”।
বললাম আমি আপনার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করি। ওদের মত মানুষের কাছে প্রচুর টাকা কিন্তু সব-ই ক্যাশে। হুয়াইট মানি বলতে ট্যাক্স দেওয়া টাকা ওঁদের নেই। আজ থেকে বছর কুড়ি পূর্বে ইলিয়ট রোডের বাটা মোড়ের বাড়িটার মালিকের কাছে গল্প করছিলাম। চা শেষ করে চলে আসতে চাইলে উনি বললেন- “কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন আঠারো বিশ বছরের ক্ষুদে পীর সাহেব আসবেন। যিনি একজন স্বনামধন্য পীর সাহেবের নাতি। আসছেন আমার এই বিল্ডিং-এ একটা ফ্লাট কিনবেন বলে। আপনি তো জানেন আমি বাইশ করে বিক্রি করছি। আমার  ডাক্তার জামাইবাবু আবার ওনাদের বিশেষ ভক্ত। তাই ডাক্তার ভাইয়ের মধ্যস্থতার কারণে একুশে দিতে হচ্ছে”কথার মাঝেই ওনারা কয়েকজন হাজির হলেন। প্রথমে কোল্ড ড্রিঙ্কস দিয়ে আপ্যায়ন করা হল। তারপর এল নাস্তাখেতে খেতে ফ্লাটের ব্যাপারে কথা হল। ছোট্ট পীর সাহেব বললেন আরও পঞ্চাশ হাজার কমাতেবাড়ির মালিক তাঁদের সম্মান রক্ষার্থে তাতেই রাজি হলেন। তাঁরা দশ লাখ টাকা ক্যাশ দিয়ে তখনই বানা করতে চাইলেন। বিল্ডিং মালিক বললেন- আমি বাড়িটা হুয়াইট মানিতে করেছি। আমাকে চেকে পেমেন্ট করতে হবে। তখন পীর সাহেবের নাতি সেভাবে টাকা দিতে অপার বলে জানালেন আর জানালেন ক্যাশে টাকা নিন তাতে না হয় দু লাখ আরও দিয়ে দেবেন। বিল্ডিং মালিক শুধু চেকেই টাকা নেবেন বলে শেষ কথা বলে দিতে তাঁর আর ফ্লাট কিনতে পারেননি।
পীর সাহেবদের টাকার অভাব নেই। দু’ তিন বছর পূর্বে একজন স্যানেটারী কম্পানির হেড প্লামবার আমাকে বলল- “আপনাদের জাতের এক পীর সাহেবের বাড়িতে তাঁদের এক ছেলের বিয়ে উপলক্ষে মনের মত বাথরুম সাজিয়ে দিয়ে এলাম। খরচ পড়ল আঠারো লক্ষ”আমি তাজ্জব।
বিলাসবহুল ওরকম বাথরুম ওনাদের হবে নাই বা কেন! ওঁদের কাছে টাকা উড়তে উড়তে পৌঁছে যায়। ভক্তিভরে লোকেরা ওঁদের মুঠো মুঠো টাকা দিয়ে ধন্য ন। ওনারা তো কারও কাছে ভিক্ষা চাননা। মানুষজন ভক্তিভরে নজরানা পেশ করেন মাত্র। তবে ওনারাও প্রতিদানে দেন দোওয়া যা থেকে ভক্তের প্রাণে আসে প্রশান্তি। এক ভেড়ির মালিক তাবিজ ও পানিপড়া নিচ্ছেন। পনেরো হাজারে কথা হয়েছে। পানিতে ফুঁক দেওয়ার সময় জানতে চাওয়া হল জলকর কতটা। উত্তর শুনে রেটটা বেড়ে দাড়ালো পঁচিশ হাজার। এই গল্পটা শুনাচ্ছিলাম আর এক জন পীর সাহেবকে। উনি বললেন- “আমার কাছে পাঠাবেন, দশে কাজ করে দেব”।
রুহুলকে বললাম ‘উপায় করতে শেখ আর শেখ বিদ্যাটার মার্কেটিং করতে’আবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে আয়াত পড়ে ফুঁক দেওয়ার পক্ষপাতি কিন্তু তাবিজ লিখে শরীরে বাঁধার পক্ষপাতি নই। সেই রকমই আয়াতুল কুরসী কী অন্য সুরা লিখে বাড়িতে-গাড়িতে ঝুলিয়ে রাখারও পক্ষপাতি নই। আজকাল তো বিভিন্ন সুরা লেখা হারের লকেটও পাওয়া যায়। আমার বক্তব্য হল ঐগুলো ঝুলিয়ে লাভ হয় না ঐ আয়াতগুলো প্রতিদিন পাঠ করতে হয় তা না হলে আমার সঙ্গে যা হয়েছিল সেটা বলে নিই।
গাড়িতে ঝুলানোর জন্য ঐ রকম কয়েকটা সুরা লেখা রেপলিকা কিনেছিলাম বন্ধুদের গিফট করার জন্যকা’বা শরীফের ছবিওয়ালা সেই রকম craft কিনেছিলাম আমার গাড়িতে লাগাতে। বহুদিন অব্যবহৃত হয়ে সেগুলো বাড়িতেই পড়ে ছিল। আসলে সেগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন সেগুলো আমার স্ত্রীর নজরে পড়ে। আমাকে কা’বা শরীফের রেপলিকাটা গাড়িতে ঝুলিয়ে দিতে বলে। আমি চেষ্টা করেছিলাম গাড়ির ড্যাসবোর্ডের উপরে আয়নায় ঝুলিয়ে দিতে। ঝোলানোর দড়িটার ফাঁসটা ছোট হওয়ায় আমি আয়নায় ঝোলাতে পারিনি। সেটা ড্যাসবোর্ডের উপরে রাখা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার সময় দেখি আমাদের দারোয়ান সকালে গাড়ি ধোওয়ার সময় কায়দা করে সেটা আয়নার কাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় গ্যারাজে দারোয়ান উপস্থিত ছিল। গাড়ি থেকে নামার সময় আমার মুখ দিয়ে ‘আল্লাহ’ শব্দটা বের হয়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে রসিকতা করার জন্য বললাম: ‘আল্লাহ’ কী জান? উত্তরে বল: “আপনার গাড়িতে তো ঝুলিয়ে দিয়েছি”। নাউযুবিল্লাহ, আমি হতভম্ব। তাকে বুঝিয়ে বলতে সেও আল্লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল।
তাই আমার বিশ্বাস দোওয়া দরুদ ঝোলানোর জন্য নয়। সেগুলো পাঠ করার মধ্যে উপকার নিহিত। ট্রেন, বাস, গাড়িতে সফরের দোওয়া; বাড়িতে বের হওয়া ও ঢোকার দোওয়া, শোওয়ার দোওয়া, খাওয়ার দোওয়া, স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোওয়া ও আরও বিভিন্ন দোওয়ার বরকতে আমার জীবনের চলার পথ সুগম হয়েছে। যেদিন সেগুলো পড়তে ভুলে গেছি কিছু না কিছু অনর্থ হয়েছে। সহজ সরল দোওয়াগুলো শিখে নিয়ে পড়তে থাকুন, ভাল থাকবেন। শান্তি পাবেন যেটা ইদানিং বড়ই দুর্লভ।

   



[1]- রচনাসাইদ বিন আলি আল ক্বাহতানী বাংলা অনুবাদ: মোঃ এনামুল হক সৌদি আরব
[2]- একই রচনাকারির লেখা। দোওয়া করার নিয়মাবলি থেকে জিনের তদবীরও দেওয়া আছে।

No comments:

Post a Comment