সহযাত্রী
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
হঠাৎ করে চারিদিকে “আগুন... আগুন... আগুন” শব্দ
হতে লাগল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল পুরো বাসে। হুড়মুড়িয়ে
একে একে সবাই নেমে পড়ল বাস থেকে। নিমেষের
মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল বাসটা। মুহূর্তেই আগুন সম্পূর্ণ বাসটাকে গ্রাস করে নিল। লেলিহান শিখার সাথে কুণ্ডুলি পাকিয়ে উপরে
উঠতে লাগলো নিকষ কালো ধোঁয়া। সবাই নেমে পড়লেও তখনো ভেতরে আটকে বাসের হেল্পার রমেশ।
অন্যদিকে, বাসের ড্রাইভার সেলিম এক লাফে বেরিয়ে পড়েছে বাস থেকে। বেরিয়ে ছোটাছুটি করছে সে। টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সবাইকে। সেই সাথে, সমান তালে তার চোখ দুটো
খুঁজছে রমেশকে। তাকে বাইরে কোথাও দেখতে না পেয়ে বাসের দরজার কাছে ছুটে গিয়ে চিৎকার করতে লাগল— বেরিয়ে
আয় রমেশ,
বেরিয়ে আয় ভাই।
ভেতর থেকে রমেশ বলে উঠল— দাদা আর একটু।
বাসটি ততক্ষণে অগ্নিকুণ্ডে
পরিণত হয়েছে...।
দু’ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে এল
রমেশ। ততক্ষণে ঝলসে গেছে তার অর্ধেক শরীর। স্থিরভাবে দাঁড়াতেও পারছেনা সে। তবুও
শক্ত হাতে বুকে আগলে
রেখেছে বাসের ক্যাবিনে রাখা শিব
ও কা’বার ছবি দু’টো। দেখে সেলিম বলল—
কী দরকার ছিল এত ঝুঁকি নেওয়ার!
রমেশ বলতে
লাগল— দাদা, দু’টো টাকা
রোজগারের জন্য, নিজের, পরিবারের, পাড়াপড়শি, সবার ভালো চেয়ে রোজ সকালে
শিবের চরণে দুটো ফুল দিয়ে
প্রার্থনা করি। তুমিও
তো করো; রোজ সবার মঙ্গল চেয়ে নিরাপদ ড্রাইভের
জন্য ওই ছবিটার দিকে তাকিয়ে নীচে বাংলা হরফে লেখা “সুব্হানাল্লাযি সাখ্খারা লানা...”
পড়তে পড়তে গাড়িটা স্টার্ট করো। তাহলে কীভাবে এগুলোকে ভেতরে ফেলে আসি বলো!
তার কথা শুনে সেলিম ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকালো। হাত দু’টো তার আপনা থেকেই উঠল মোনাজাতের জন্য। কাতর
স্বরে ভিক্ষা চাইল— ইয়া আল্লাহ্, তুমি আমার রমেশকে
রক্ষা করো!
পার্কসার্কাস,
কোলকাতা
২৮-০৩-২০১৮
অসম্ভব ভালো,
ReplyDeleteসম্প্রীতির এক অনন্য নজির ফুটিয়ে তুলেছেন।