Monday 15 February 2016

উমার বিন আবি রাবিআহ্‌

‘উমার বিন আবি রাবি‘আহ্‌  

(৬৪৪ – ৭১১ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

জন্ম ও পরিচয়ঃ

উমাইয়া যুগের এক অন্যতম প্রতিভাধর কবি তিনিউমাইয়া যুগে গাযাল কবিতার ক্ষেত্র সমৃদ্ধ হয় যাঁদের হাত ধরে তিনি তাঁদের শ্রেষ্ঠতম। গাযাল কবিতায় অশালীন ভাব ও পন্থার প্রবর্তক তিনিই। তাঁর নাম ‘উমার, উপনাম আবুল্‌ খ়াত়্ত়াব, পিতার নাম ‘আব্দুল্লাহ, পিতামহের নাম রাবি‘আহ্‌। কোরায়েশ বংশের বানু মাখ্‌যুমের উত্তরাধিকারী ছিলেন। ৬৪৪ খ্রি মোতাবেক ২৩ হিজরিতে দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার (রাঃ)-এর পরলোকগমনের রাতে জন্ম গ্রহণ করেন। সে জন্য খলীফার নামেই তাঁর নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে উমার (রাঃ)-এর আল্লাহভিরুতা ও কবির অশালীন কবিতা দেখে লোকে বলত—

" زهق الحق وظهر الباطل "

(হক্‌ চলে গেছে আর বাতিল এসে হাজির হয়েছে।)

 

প্রতিপালনঃ

তিনি মদিনায় লালিত পালিত হন। সুখ ও প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশে যৌবনে পদার্পণ করেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে ভোগ বিলাসিতায় মত্ত হয়ে পড়ে ছিলেন। তামাশাকারীদের সঙ্গে তামাশা করে বেড়াতেন। নাচগানের আসরগুলিকে অলংকৃত করতেন।

 

নারী-আসক্তি ও মৃত্যুঃ  

হজ্জের মরসুমকে তিনি সৌন্দর্যের মেলা ও প্রদর্শনী মনে করতেন। তাই সুন্দর ও আড়ম্বরপূর্ণ কাপড় পরে তিনি সেখানে উপস্থিত হতেন। আর সিরিয়া, মদিনা ও ইরাক হতে আগত মহিলা হজ্জ যাত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। পরিচয় ও আলাপচারিতা করতেন। তাদের তরে প্রেমমূলক কবিতা রচনা করতেন। ফলে এই মরসুমের স্থায়িত্বের নিষ্ফল কামনা এভাবে ব্যক্ত করেছেন—

"ليت ذا الدهر كان حتما علينا كل يومين حجة واعتمارا "

(ইস্‌, যদি সারা বছর ধরে (প্রতি দু’দিনে) আমাদের প্রতি একদিন হজ্জ ও অপর দিন উম্‌রাহ্‌ ফরয হতো; তাহলে কতই না ভালো হতো!)

  

আরবি কাব্যজগতের এই গযল সম্রাট সত্তর বছর বয়সে ৯৩ হিজরি মোতাবেক ৭১১ খ্রিস্টাব্দে ইহলোক ত্যাগ করেন।

 

কাব্য ও গযল চর্চাঃ

তিনি তাঁর যুগের অন্যতম প্রতিভাবান কবি। জারির-ফারাযদাক-আখতালদের সমগোত্রীয় ও সমতুল্য। তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট মিষ্টতা ও ঝংকার। সে যুগের বড় বড় কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতঙ্গরা তাঁর কবিতা গেয়েছেন। তিনি গযলকে একটা পৃথক কলারূপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কতিপয় গৌরবাত্মক পঙক্তি ব্যতীত তাঁর পুরো দীওয়ান নারী-প্রশংসায় পূর্ণ। কিছু কিছু কবিতায় তিনি নিজেকে এমন এক প্রেমিকরূপে প্রকাশ করেছেন, যার একাধিক প্রেমিকা তাঁকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে, তাঁর জন্য প্রাণ লুটিয়ে দিচ্ছে।

 

তাঁর কবিতায় উপজীব্য হিসেবে আমরা লক্ষ্য করি, তিনি তাঁর কবিতায় বর্ণনা প্রদান করেছেন নারীদের সৌন্দর্য ও স্বভাবের, তাদের কথোপকথন ও চালচলনের। তাঁর বর্ণনা ভঙ্গিমায় নৈপুণ্যের ছাপ স্পষ্ট। কথিত আছে, একদা সুলায়মান বিন আব্দুল মালিক তাঁকে তাঁদের বা অন্যান্য গভর্নর ও শাসকদের প্রশংসা না করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন— আমাদের প্রশংসা করা হতে আপনাকে কে বিরত রাখে? (ما يمنعك من مدحنا؟)। কবি তাঁর উত্তরে বলেছিলেন—

" أنا لا أمدح إلا النساء"

(আমি তো নারী ব্যতীত অন্য কারও প্রশংসা করি না।)

তাঁর এক গযল কবিতায় তিনি হজ্জের মরসুমে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুন্দরী মেয়েদের আগমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন 

قف بالطواف ترى الغزال المحرما         حج الحجيج وعاد يقصد زمزما

عند الطـواف رأيتهـا متلثمـة           للركن والحجـر المعظـم تلثمـا

أقسمت بالبيت العتيـق لتخبـري      ما الاسم قالت من سلالـة آدمـا

الاسم سلمـى والمنـازل مكـة         والدار ما بين الحجـون وغيلمـا

       

No comments:

Post a Comment